ঢাকায় যেসব জায়গায় মিলবে পাহাড়ি খাবার
চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের নানা প্রান্তে বাস করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। জীবনযাপনের মতো তাদের খাদ্যাভ্যাসও ভিন্ন। ভিন্নতার কারণ রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণ আর রন্ধনপ্রণালি। এই ভিন্ন স্বাদের খাবার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে খাবারদাবারের কিছু বিশেষায়িত রেস্তোরাঁ এবং বাজার।
তবে এখন শুধু রেস্তোরাঁই নয়, ছোট ছোট ফুডকার্টেও পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি খাবার। এমনকি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসে পাহাড়ি পণ্যের বাজার। এসব রেস্তোরাঁ বা বাজারে শুধু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষই নয়, বাঙালিরাও ভিড় জমাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সংসদ ভবনের ফুটপাতের সামনে বসা পাহাড়ি খাবারের ছোট ছোট ফুডকার্ট। সেখানে ফারিয়া-হাসান দম্পতির সঙ্গে কথা হলো।
বছর দুয়েক আগে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে পাহাড়ি খাবারের প্রেমে পড়েন তাঁরা। সেই স্বাদের খোঁজেই মাঝেমধ্যে এসব ফুডকার্টে খেতে আসেন। প্রায়ই এখানে পছন্দের লাকসু খেতে আসেন বিপুল চাকমা।
এই কলেজপড়ুয়ার সঙ্গেও কথা হলো। বান্দরবানের মারমা মেয়ে কিকিসাইয়া ও তাঁর বোন কিকিস্যুয়ে মিলে শুরু করেন সংসদ ভবনের সামনের ছোট্ট ফুডকার্ট ‘রো-ওয়া-দো’। এই দোকানে পাওয়া যায় পাহাড়ি খাবার মুন্ডি ও লাকসু।
চাইলে সঙ্গে ডিম ও মুরগি যোগ করা যায়। সে ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া শুক্রবারে বিশেষভাবে তৈরি হয় ‘ব্যাম্বু চিকেন’।
চা–পাতা ছাড়া পাহাড়ি ফল, চিনি ও মধু দিয়ে তৈরি রোজেলা চা খেতে চাইলেও সংসদ ভবনের সামনের ফুডকার্টগুলোয় ঢুঁ মারতে পারেন।
চার বোন বিপ্লী, প্রিয়াংকা, সুচিন্তা ও স্বস্তি চাকমা মিলে চালান ঢাকায় পাহাড়ি খাবারের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ ‘হেবাং’। মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের কাজীপাড়ায় আছে রেস্তোরাঁটির দুটি শাখা। এগুলোয় মূলত চাকমাদের খাবার পাওয়া যায়।
বিপ্লী চাকমা বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় পাহাড়ি মুরগি ও সবজি নিয়ে আসা হয় খাগড়াছড়ি থেকে আর রাঙামাটি থেকে আনা হয় কাপ্তাই লেকের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ। শীতকালে আসে পাহাড়ি হাঁস।’
মিরপুরের কাজীপাড়ায় ‘সিএইচটি কালিনারি’তেও পাওয়া যায় বিভিন্ন চাকমা খাবার। শুধু পার্বত্য অঞ্চল নয় শহরবাসীকে গারো সম্প্রদায়ের খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ফার্মগেটের গ্রিন রোডে ‘জাবা’।
‘জাবা’ গারো শব্দ, অর্থ তরকারি। রেস্তোরাঁটিতে পাওয়া যায় বিন্নি পিঠা, তোজা, হিসাল পিঠা, মোয়া মুগলী, বিন্নি পায়েসসহ নানা ধরনের গারো খাবার।
এবার বলি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন পণ্যের কিছু বাজারের কথা। কাজীপাড়া মেট্রোস্টেশনের পাশেই আছে একটা পাহাড়ি সবজির দোকান। পাহাড়ি সবজির সঙ্গে আমাদের সমতলের সবজির মিল যেমন আছে, তেমনি বেশ কিছু অমিলও আছে। সময় নিয়ে একটি একটি করে তাঁদের সবজিগুলো চেনালেন দোকানি পরেশ চাকমা।
পাহাড়ি বেগুনগুলোর আকার সাধারণ বেগুনের চেয়ে একটু ছোট মনে হয়েছে। তিতবেগুন নামের একদম ছোট একধরনের বেগুন জন্মে পাহাড়ে। সেখানে জন্মে হলুদ রঙের বেগুনও। পাহাড়ি বাঙ্গি দেখতে অনেকটা সমতলের বাঙ্গির মতোই।
এই মৌসুমে পাহাড়ি এলাকায় জন্মে আদা ফুল ও হলুদ ফুল। দোকানি জানালেন, মাছভর্তার সঙ্গে এই ফুলগুলো খেতে দারুণ। বাঁশকোঁড়ল, পাহাড়ি ধনেপাতা, কচু, তাল, শসাসহ অনেক কিছুই রয়েছে এ দোকানে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সপ্তাহে তিন দিন আনা হয় এসব সবজি। দোকানটিতে শুক্রবারে সবচেয়ে বেশি সবজি থাকে।
মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটিতে আছে ‘হিলসবাজার’ নামের একটি পাহাড়ি পণ্যের দোকান। শামুক, কাঁকড়া, পাহাড়ি মুরগি, পাহাড়ি মরিচের গুঁড়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি শাকসবজি পাওয়া যায়।
স্বত্বাধিকারীদের একজন রমেল চাকমা জানালেন, অনলাইনে ফরমাশ দিলে এসব পণ্য বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে।