শুধু নাড়ু বিক্রি করেই সাত দিনে টুম্পার আয় ২ লাখ টাকা

টুম্পা রানী খাঁ বছরের অন্যান্য সময়ে নাড়ু, সন্দেশ বিক্রি করে মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন
ছবি: টুম্পা রানীর সৌজন্যে

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রক্তন শিক্ষার্থী টুম্পা রানী খাঁর পড়ালেখা শেষ হয় ২০১৬ সালে। এরপর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কিন্তু কোভিড ১৯–এর কারণে একে একে সব চাকরির পরীক্ষা যখন স্থগিত হয়ে যাচ্ছিল, কোনোদিকেই কোনো উপায় না দেখে একটু ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন টুম্পা। সেই ইচ্ছা থেকেই ২০২০ সালের জুলাই মাসে হাতে বানানো নাড়ুর একটি ফেসবুক পেজ খোলেন। পেজটির নাম ‘টুম্পার স্বপ্নরাজ্য’। পেজ খোলার নয় দিনের মাথায় প্রথম অর্ডার পান টুম্পা। এরপর তাঁকে আর থেমে থাকতে হয়নি।

‎২০২০ সালে যখন টুম্পা রানী খাঁ তাঁর ফেসবুক পেজটি খোলেন, স্বামীর চাকরির কারণে তখন ঢাকায় ছিলেন। এরপর দুবছর থেকেছেন মানিকগঞ্জ। ২০২২ সাল থেকে গোপালগঞ্জে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন টুম্পা। ক্রেতাদের কাছে নাড়ু-সন্দেশ কীভাবে পাঠাবেন, শুরুর দিকে তা নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন টুম্পা। সে সময় বিভিন্ন ফেসবুকে গ্রুপে পোস্ট করতেন, আর সেসব পোস্ট থেকেই আসত অর্ডার। ধীরে ধীরে এখন সব গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি।

২০২২ সাল থেকে গোপালগঞ্জে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন টুম্পা
ছবি: টুম্পা রানীর সৌজন্যে

এখন আর সেসব গ্রুপে পোস্ট করতে হয় না। তাঁর পেজেই আসে নিয়মিত অর্ডার। এ কয়েক বছরে তিনি কিছু বিশ্বস্ত ক্রেতাও পেয়েছেন, যাঁরা সারা বছরই তাঁর কাছে কিছু না কিছু অর্ডার করতেই থাকেন।

এখন গোপালগঞ্জ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে সারা দেশে নাড়ু, সন্দেশ ও মোয়া পাঠান টুম্পা। প্রতিদিন বাসে করে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় নাড়ুগুলো আসে। এরপর নিজস্ব ডেলিভারিম্যান বাস থেকে নাড়ুগুলো নামিয়ে ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ‎এ বছর মোট ২০০ কেজি নাড়ু-সন্দেশের অর্ডার পেয়েছেন টুম্পা। শুধু মহালয়া থেকে সপ্তমী, এই সাত দিনের জন্য দুই লাখ টাকার বেশি নাড়ু-সন্দেশ বিক্রি হয়েছে। এত অর্ডার আসতে থাকে যে চলতি মাসের ১০ তারিখেই পূজা উপলক্ষে নাড়ু-সন্দেশের অর্ডায় নেওয়া বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন
ছোটবেলায় মায়ের কাছে নাড়ু বানানো শিখেছেন টুম্পা
ছবি: টুম্পা রানীর সৌজন্যে

‎টুম্পা বলেন, ‘আমার মা এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ভালো নাড়ু বানাতেন। ছোটবেলায় মায়ের কাছে নাড়ু বানানো শিখেছি। সেই নাড়ু আমার আয়ের নতুন উৎস হয়ে উঠবে, ভাবতে পারিনি।’ এখন যেহেতু অর্ডার অনেক বেড়েছে, সব নিজের হাতে বানানো সম্ভব হয় না। তাই তাঁকে সাহায্য করছেন মা শেফালি রানী খাঁ ও তিনজন সহযোগী। ফেসবুক পেজ থেকে ৫ রকমের নাড়ু, ৫ রকমের মোয়া ও ৪ রকমের সন্দেশ বিক্রি করেন টুম্পা। নাড়ুর মধ্যে আছে টাটকেশ্বর নাড়ু, সুজির নাড়ু, ক্ষীরের নাড়ু, গুড় নারকেলের নাড়ু ও তিল নারকেলের নাড়ু। প্রতিটিই তাঁর মায়ের রেসিপি।

মহালয়া থেকে সপ্তমী, এই সাত দিনের জন্য বিক্রি হয়েছে দুই লাখ টাকার বেশি নাড়ু-সন্দেশ
ছবি: টুম্পা রানীর সৌজন্যে

ধরনভেদে নাড়ু, মোয়া ও সন্দেশের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা। পূজা ছাড়া অন্য সময়ে ‘টুম্পার স্বপ্নরাজ্য’ ফেসবুক পেজ থেকে সপ্তাহে প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি নাড়ু বিক্রি হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। উৎসবের মৌসুমে সেই আয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

‎‎টুম্পার স্বপ্ন আছে তাঁর ব্যবসাটিকে ঢাকায় স্থানান্তর করে আরও অনেক বড় করার। টুম্পা মনে করেন, সব সময় চাকরির পেছনে না ছুটে, নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করা উচিত।

আরও পড়ুন