সম্পর্ক পোক্ত করুন এক মিনিটের অভ্যাসে
অনেকেই ভাবেন, সম্পর্ককে বিশেষ করে তোলে বড় ঘটনা বা উপলক্ষ। আদতে সম্পর্ককে বিশেষ করে তুলতে সব সময় খুব বড় কোনো চেষ্টা বা পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ে না। এর চেয়ে বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট কিছু অভ্যাস সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কোনো দম্পতি দিনে মাত্র এক মিনিট একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকলে তা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ সামলানোর ক্ষমতা বাড়ায়। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো করতে চাইলে যেকোনো একটি এক মিনিটের অভ্যাস শুরু করতে পারেন।
এই এক মিনিটের অভ্যাসগুলো সব দম্পতির ক্ষেত্রে এক রকম না–ও হতে পারে। কেউ নীরব সংযোগ পছন্দ করেন, আবার কেউ ভালোবাসেন কথা বলতে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কী উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করা হচ্ছে। প্রথমে এসব মুহূর্তকে খুব সামান্য মনে হতে পারে।
কিন্তু প্রতিদিনের এই ছোট ছোট অনুশীলন সম্পর্ককে দৃঢ় করে তোলে। মাত্র এক মিনিটে একটি সম্পর্ক বদলে যেতে পারে, এটি শুনে অনেকেরই খটকা লাগবে হয়তো। জেনে নিন এই এক মিনিট কীভাবে সম্পর্ককে আগের চেয়ে দৃঢ় করে তুলতে পারে।
ইতিবাচক মুহূর্তের সঞ্চয়
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জন গটম্যানের বহু বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখে ছোট ছোট দৈনন্দিন যোগাযোগ অথবা একে অন্যের প্রতি ছোট ছোট ‘ফিরে তাকানো’র মুহূর্ত।
প্রতিটি ইতিবাচক যোগাযোগকে দেখবেন একেকটি সঞ্চয় হিসেবেই।
যেসব দম্পতি বহু বছর সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেন, তাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে নেতিবাচক যোগাযোগের তুলনায় অনেক বেশি ইতিবাচক যোগাযোগ তৈরি করেন।
গটম্যানের ‘ম্যাজিক রেশিও’ অনুযায়ী, একটি নেতিবাচক মুহূর্ত সামলাতে প্রয়োজন পাঁচটি ইতিবাচক মুহূর্ত। দৈনিক এক মিনিটের অভ্যাস অন্তত একটি ইতিবাচক মুহূর্ত সঞ্চয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে, যা কঠিন সময়ে সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে।
ইমোশনাল আহ্বানে সাড়া দেওয়া
জন গটম্যানের মতে, আহ্বানে সঙ্গী কীভাবে সাড়া দেন, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গটম্যানের গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি সম্পর্কে টিকে ছিলেন, তাঁরা সঙ্গীর আহ্বানে ৮৬ শতাংশ সময় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
আর যাঁরা পরে আলাদা হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ। আহ্বানগুলো উপেক্ষিত বা প্রত্যাখ্যাত হতে থাকলে, দূরত্ব আর অভিমান জমা হতে থাকে। এক মিনিটের অভ্যাস নিশ্চিত করে যে প্রতিদিন অন্তত একটি ইমোশনাল আহ্বানে সাড়া দেওয়া জরুরি।
অনুভূতি যখন অভ্যাস
এক মিনিটের অভ্যাস কার্যকর; কারণ, এটি ‘মাইক্রো হ্যাবিট’। অর্থাৎ এই অভ্যাস ভুলে যাওয়ার মতো ছোট, আবার ইমোশনাল পরিবেশ বদলে দেওয়ার মতো শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চ্যাপেল হিল) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বারবারা লি ফ্রেডরিকসনের মতে, ভালোবাসার মতো ইতিবাচক আবেগের ক্ষুদ্র এক মুহূর্তও শরীর ও মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিদিনের এই এক মিনিট এমন একটি ইতিবাচক মুহূর্ত তৈরি করে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসাকে কেবল অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং ধীরে ধীরে একটি নিয়মিত অভ্যাসেও পরিণত হয়।
এক মিনিটের অভ্যাসে যা করতে পারেন
এক মিনিটের আলিঙ্গন
কর্মব্যস্ত দিনের পর এক মিনিটের আলিঙ্গন সঙ্গীকে অনেকটা স্বস্তি দেয়। এমনকি ২০ সেকেন্ডের আলিঙ্গনও বন্ধনের হরমোন অক্সিটোসিন নিঃসরণ বাড়ায়। গবেষণায় প্রমাণিত, কঠিন কোনো কাজ শুরুর আগে যেসব নারী সঙ্গীকে আলিঙ্গন করেছেন, তাঁদের কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের প্রতিক্রিয়া কম ছিল। এক মিনিট ধরে একে অন্যকে জড়িয়ে থাকা স্নায়ুতন্ত্রকে আরও শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
এক মিনিটে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
একে অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সম্পর্ককে মজবুত করে। চাইলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা যেকোনো সময় একে অন্যের প্রশংসা করা যেতে পারে।
দিনের শুরুতে এক মিনিট খোঁজ নেওয়া
সকালে এক মিনিট সময় নিয়ে সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘আজ তুমি কী কী করবে?’ বা ‘তোমাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?’ এতে সঙ্গীর মনে থাকে, তাঁর কথা কেউ ভাবছে।
যেভাবে এটিকে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাসে পরিণত করবেন
একটি বিষয় সম্পর্কে জানা আর তা অভ্যাসে পরিণত করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। শুরুতে উৎসাহ থাকলেও নিয়মিত একটি কাজ করে যাওয়া কঠিন। বিশেষজ্ঞদের মতে—
১. এই এক মিনিটিকে একটি অভ্যাসের সঙ্গে যুক্ত করুন। যেমন দাঁত ব্রাশ করার পর বা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মনে করুন এই অভ্যাসের কথা।
২. মনে রাখবেন, এই নতুন অভ্যাস যেন কোনোভাবে আপনার চাপের কারণ না হয়।
৩. জীবনে সব সময় নানা ব্যস্ততা থাকবে। দম্পতির একজন হয়তো একদিন এই এক মিনিটের কথা ভুলে যেতেই পারেন। একজন ভুলে গেলে অপরজন মনে করিয়ে দিতে পারেন।
সম্পর্ক মজবুত রাখতে সব সময় খুব বড় আয়োজনের প্রয়োজন হয় না। রাতে ফোন স্ক্রল করার আগে বা কাজে ডুবে যাওয়ার আগে এক মিনিট সময় বের করুন। সঙ্গীর দিকে তাকান এবং তাঁকে জানান, তিনি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে