সুখী সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গীর যে ৮টি আচরণ মেনে নেওয়া অনুচিত
জীবনে সঠিক সঙ্গী খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আর যাঁদের উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা কেবল সঙ্গী খোঁজেন না, তাঁরা সঙ্গীর আচরণ লক্ষ করেন নিবিড়ভাবে। অনেক সময় ছোটখাটো সমস্যা বা বিরক্তিকর আচরণ আমরা উপেক্ষা করি। অনেক সময় ভাবি, ‘ও তো এমনই’, ‘একলা থাকার চেয়ে এটাই ভালো’। কিন্তু ভুল মানুষের সঙ্গে থাকলে একা থাকার চেয়েও বেশি একাকিত্ব পেয়ে বসতে পারে। সুখী ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের জন্য নেতিবাচক আচরণগুলো মেনে নেওয়া ঠিক নয়। এতে অনেক সময় নিজের জীবনে অনেক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। জেনে নিন উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা কোন ৮টি আচরণ মেনে নেন না।
১. ক্ষমা না চাওয়া
কেউ কেউ ক্ষমা চাওয়াকে দুর্বলতা হিসেবে দেখেন। পরিবার ও সমাজ আমাদের শেখায়, ভুল হলে বড়রা বা প্রভাবশালীরা তা স্বীকার করেন না, বরং অন্য পক্ষকেই মানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু একটি সম্পর্কে জড়ালে শুধু ভালোবাসা নয়, ভুল স্বীকার করা ও তা সংশোধনের চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের পরিচয়। যাঁরা উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন, তাঁরা এসব বিষয় খেয়াল করেন। ভুল কিছু করার পর ক্ষমা না চাইলে বুঝে নিতে হবে সম্পর্কটা একতরফা। আর এ কারণেই উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা এ ধরনের ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলেন।
২. একাই সিদ্ধান্ত নেওয়া
অনেক সময় দেখা যায়, সম্পর্কে থেকেও একজন সব সিদ্ধান্ত একাই নেন। কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে চলবেন, কিংবা কোনো বড় সিদ্ধান্ত—এসব ক্ষেত্রে সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে সম্পর্ক আছে মনে হলেও, ভেতরে–ভেতরে তিনি এখনো সিঙ্গেল মানসিকতা নিয়েই চলেন।
ভালো সম্পর্ক মানে শুধু নিজের সুবিধা দেখা নয়, বরং ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’-তে আসা। স্বাধীনতা থাকা জরুরি, কিন্তু সেই স্বাধীনতার অজুহাতে সঙ্গীকে উপেক্ষা করা বা বাদ দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। যে বন্ধু বা সঙ্গী সিদ্ধান্তের সময় আপনাকে ভাবেনই না, তিনি আদতে আপনাকে নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে নেননি। এমন সম্পর্ক বারবার অনিশ্চয়তা তৈরি করে। যাঁরা উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন, তাঁরা এ ধরনের আচরণ কখনোই মেনে নেন না।
৩. সঙ্গীর ইতিবাচক আচরণকে পাত্তা না দেওয়া
অনেক সম্পর্কেই দেখা যায়, বিয়ে বা দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পর একজন ভাবতে শুরু করেন, ‘এবার তো হয়ে গেছে।’ তখন আর আগের মতো সময় দেওয়া, যত্ন নেওয়া বা ভালোবাসা প্রকাশের চেষ্টা থাকে না। অথচ সম্পর্ক যত পুরোনো হয়, ততই দায়িত্ব ও মনোযোগ বাড়ার কথা।
আপনি যদি এখনো কথা, আচরণ ও উপস্থিতিতে ছোট ছোট বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করে যান, অথচ আপনার সঙ্গী সেসবকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে নিজে কোনো উদ্যোগই না নেন, তাহলে বুঝতে হবে, আপনাকে আর আগের মতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
সম্পর্ক মানে একবার পাওয়া নয়, প্রতিদিন নতুন করে ধরে রাখা। এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন, অনুভূতি প্রকাশ করুন। তাতেও যদি পরিবর্তন না আসে, মনে রাখুন ছোট জীবনে সবকিছুর সঙ্গে আপস চলে না।
৪. সঙ্গীর অস্বস্তিকর উপস্থিতি
অনেকেই সম্পর্ক আঁকড়ে ধরে রাখেন শুধু ‘ভালোবাসা আছে’ এই যুক্তিতে। পরিবার, সমাজ বা একা হয়ে যাওয়ার ভয় আমাদের শেখায়, সব কষ্ট সহ্য করেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভালোবাসা থাকলেই সম্পর্ক সুস্থ হয় না।
যদি একজন ব্যক্তির উপস্থিতি আপনাকে শান্তির বদলে বারবার অস্থিরতা দেয়, কথা বলার চেয়ে ঝগড়া বেশি হয়, ঘনিষ্ঠতা কমে যায় এবং সব সময় মানসিক চাপ তৈরি করে, তাহলে সেখানেই থেমে যাওয়া জরুরি। সম্পর্ক মানে নিরাপত্তা ও স্বস্তি পাওয়া। নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই সম্পর্কে আপনি কি আনন্দ পাচ্ছেন, নাকি শুধু অভ্যাস আর ভয় থেকে টিকে আছেন? উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি এই কষ্টকে স্বাভাবিক ধরে নেন না।
৫. সঙ্গীর ইমোশনাল দূরত্ব
যদি কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান বা উৎসবে সঙ্গী যদি আপনাকে আলাদা রাখেন, পরিচিতদের সামনে আপনার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় আপনাকে না রাখেন, তাহলে বুঝতে হবে, তিনি আপনার সঙ্গে ‘ইমোশনাল’ দূরত্ব তৈরি করেছেন। এমন সম্পর্ক মানে আধাআধি জীবন এবং বারবার অনিশ্চয়তায় থাকা, যা উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন।
৬. ছাড় না দেওয়া
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন বন্ধু বা সঙ্গী কেবল তখনই শান্ত ও সুখী থাকেন, যখন সবকিছু তাঁর মতো চলে। কিন্তু আপনার জন্য কোনো ছাড় দিতে গেলেই দেখা দেয় সমস্যা। বাস্তবে সুখী সম্পর্ক মানে দুই দিক থেকেই সমঝোতা, একতরফা ত্যাগ নয়।
যে বন্ধু বা সঙ্গী সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন, তিনি আপনার চাওয়া-পাওয়ারও সম্মান করবেন, প্রয়োজনে সমর্থন দেবেন এবং দ্বন্দ্বের সময় বিষয়গুলো মীমাংসার চেষ্টা করবেন। যেখানে শুধু আপনি সব ছাড় দিয়ে থাকেন, সেখানে সম্পর্কের সমতা ভেঙে যায় এবং এটি দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকে না। উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি কখনোই এই একতরফা আচরণ মেনে নেন না।
৭. আন্তরিক যোগাযোগে ঘাটতি
বন্ধু বা সঙ্গী অনেক সময় ফোন বা মেসেজে যোগাযোগ কমিয়ে দেন এবং শুধু প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা এড়িয়ে চলেন। ঝগড়া হলে মুখ বন্ধ রাখেন, কোনো আলোচনা করেন না। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সময় খোলাখুলি আলোচনা এড়িয়ে চলেন।
আবেগ বা ভালোবাসা প্রকাশে উদাসীন থাকেন—শুধু ‘ঠিক আছে’ বা ‘ভালো আছ তো?’ বলেই খালাস। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আগ্রহ দেখান না। এমন আচরণ বোঝায় যে সঙ্গী সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং আন্তরিত সংযোগ স্থাপনে কোনো চেষ্টাই করছেন না। উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি কখনো এই একতরফা আচরণ মেনে নেন না।
৮. পেশাজীবনে সঙ্গীর উদাসীনতা
অনেকের পেশাজীবনে কোনো স্পষ্ট লক্ষ্য নেই, তাঁরা কেবল বর্তমান স্বাচ্ছন্দ্যেই তুষ্ট। মোট কথা তাঁরা একটা ‘কমফোর্ট জোন’–এ থাকেন। নতুন কোনো দক্ষতা শেখার বা নিজের উন্নয়নের চেষ্টা নেই। দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আগ্রহ নেই। বিয়ে, বাড়ি, সন্তান বা আর্থিক নিরাপত্তা নিয়েও তাঁরা সচেতন বা উদ্যোগী নন। পরিবার বা বন্ধুদের কাছে নিজের স্বপ্ন বা পরিকল্পনা শেয়ার করেন না।
সমাজ বা সম্প্রদায়ের জন্য তাঁদের কোনো বলার মতো অবদান নেই, তাঁরা কেবল আরামে সময় কাটানো বা আরাম করতেই ব্যস্ত। এমন একজন ব্যক্তি পাশে থাকলে সম্পর্কের দায়িত্ব পুরোপুরি অন্যজনের ওপর পড়ে, ফলে সম্পর্কের ভারসাম্য হারায়। উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা সঙ্গীর এমন উদাসীনতা মেনে নেন না।
সূত্র: মিডিয়াম