যে তুচ্ছ কারণে সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে চিরতরে
মানুষ নাকি প্রেমে পড়ে দুবার। প্রথমবার শারীরিক সৌন্দর্য বা বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার কারণে শরীরের ভেতরে নানা হরমোনের কারসাজিতে। দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ে সম্পর্কের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ কাটার পর। অর্থাৎ বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পর। এক ছাদের নিচে থেকে; ভালো–মন্দ দিক, শক্তির জায়গা ও অন্ধকার দিক দেখে; বিভিন্ন পরিস্থিতি দুজনে মিলে মোকাবিলা করলেই–না একজন আরেকজনকে ভেতর থেকে চিনতে পারে। তারপর আসে আন্তরিকতা, বোঝাপড়া, আত্মত্যাগ, ক্ষমা, মায়া–মমতার মতো বিষয়–আশয়। অর্থাৎ সঙ্গীর সঙ্গে মানিয়ে নিলে পরে সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়া যায়। সম্পর্ক একটা ছন্দে চলে আসে। ফলে মানুষ তখন দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ে। আর সেটা চলতে থাকে জীবনভর
এই দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ার আগে একটা কারণেই আপনাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে। আর সেটা হলো অতীত নিয়ে পড়ে থাকা বা অতীতের ক্ষত সেরে না ওঠা। বেশির ভাগ মানুষ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বই দেয় না। এর ভয়ানক পরিণতির কথা জানিয়েছেন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। এটা এতটাই সিরিয়াস সমস্যা যে এর ফলে সম্পর্ক বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
‘হোল্ডিং গ্রাজ’ বা খারাপ অতীত থেকে সেরে উঠতে না পারলে কী হয়?
প্রথমত, এটা আপনাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রভাবিত করে। যে মানুষটার কারণে আপনি কষ্ট পেয়েছেন বা আপমানিত বোধ করেছেন, আপনার ভেতরে সেই মানুষটার প্রতি একটা ঘৃণা বা দ্বিধা কাজ করে। এক ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতা কাজ করে। আপনি সেই ব্যক্তির ভালো চান না। সেটা আপনি মনে রাখেন; কেননা আপনি ওই ব্যক্তির মাধ্যমে আর এ রকম অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে চান না।
আপনি যাতে আবারও মানসিকভাবে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য আপনার মস্তিষ্ক সেই স্মৃতি মনে করিয়ে আপনাকে সতর্ক করতে চায়। এটা একধরনের ‘ডিফেন্স মেকানিজম’। তবে এর ফলে আপনার ত্বক থেকে শুরু করে রাতের ঘুম, চিন্তা, স্মৃতি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া, সৃজনশীলতা, এনার্জি, ইতিবাচকতা, খাবার পরিপাক প্রক্রিয়া এমনকি খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন—সবই প্রভাবিত হয়।
এককথায় আপনার সার্বিক ফিটনেস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আপনি যদি সুস্থ না থাকেন, তাহলে কখনোই স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক চালিয়ে নিতে পারবেন না। তাই আপনি আপনার মস্তিষ্ককে এমনভাবে পরিচালিত করবেন, নিয়ন্ত্রণ করবেন, যাতে সে ‘গ্রাজ’ ধরে না রাখে। সেটা আপনার আর আপনার সম্পর্ক, উভয়ের জন্যই অত্যন্ত জরুরি।
সম্পর্ক হবে স্থবির
কথায় বলে, আপনি জীবনে যেটাকে গুরুত্ব দেবেন, আপনি চারপাশে সেটিই দেখবেন। পারস্যের সুফি কবি জালালুদ্দিন রুমির একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, যার সহজ অর্থ হলো আপনি যা খুঁজছেন, সেটাও কোনো না কোনোভাবে আপনাকেই খুঁজছে বা আপনাকে আকর্ষণ করছে। আপনি যদি সঙ্গীর নেতিবাচক দিকগুলোর ওপরেই গুরুত্ব দেন, দিন শেষে আপনি নেতিবাচকতার খাতায় আরও দুটি নতুন পয়েন্ট যুক্ত করতে পারবেন। ইতিবাচকতা ও শক্তিশালী দিকগুলো আপনার চোখেই পড়বে না।
এভাবে সম্পর্ক আটকা পড়বে নেতিবাচকতার দুষ্টচক্রে। আর একবার সেই দুষ্টচক্রে আপনার মন পড়ে গেলে, সেখান থেকে মুক্তি মেলা কঠিন। আপনার জন্য ইতিবাচকতার শক্তি নিয়ে সম্পর্কটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
মেরামতের অযোগ্য
তৃতীয়ত, সঙ্গীর মাধ্যমে অতীতের কোনো ঘটনা থেকে আপনার মনের ভেতর তৈরি হওয়া বিদ্বেষ, ঘৃণা বা সন্দেহকে আপনি যদি চিরতরে বিদায় করতে না পারেন, তাহলে আপনি সঙ্গীকে কখনোই মন থেকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দিতে পারবেন না। ফলে আপনাদের ভেতরে যোগাযোগে বিঘ্নতা, ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে। আবেগীয় নির্ভরশীলতা হবে বাধাগ্রস্ত। আস্থার সম্পর্ক ও স্বাস্থ্যকর যোগাযোগের মধ্যে উঁচু দেয়াল ওঠায় সম্পর্ক এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা হয়তো আর কখনোই পুরোপুরি মেরামত করে ওঠা যাবে না।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া