আপনি আরাম করলে কি সঙ্গী বিরক্ত হন
ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দম্পতিদের মতের অমিল নিতান্তই স্বাভাবিক বিষয়। অনেক কিছু নিয়েই মনোমালিন্য হতে পারে, যা আপাতদৃষ্টে হাস্যকর। চলতে পারে কথা-কাটাকাটি। অন্য কেউ শুনলে হাসতে পারেন, এ আবার ঝগড়ার মতো কোনো বিষয় নাকি!
দুটি সাধারণ দৃশ্য কল্পনা করা যাক।
দৃশ্যপট ১
একজন পুরুষ সারা দিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গা এলিয়ে বসেছেন। দৃশ্যটা দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন তাঁর স্ত্রী। বক্তব্য, দিন নেই, রাত নেই খেটে মরছেন তিনি, অথচ স্বামী ঘরে ফিরে দিব্যি আরাম করছেন। অন্যদিকে স্বামীর বক্তব্য, তিনি দিনভর পরিশ্রম করে ওই সময়টায় একটু তো আয়েশ করতেই পারেন!
দৃশ্যপট ২
স্বামী অফিস থেকে ফিরে দেখলেন, স্ত্রী আয়েশ করে বসে টেলিভিশন দেখছেন বা বই পড়ছেন। অমনি সেই ভদ্রলোকের মেজাজ গেল তিরিক্ষি হয়ে! ভাবতে থাকলেন, আমি সারা দিন খেটে মরি, আর ও বসে বসে আরাম করে! ওদিকে স্ত্রী হয়তো সারা দিন ঘরের কিংবা অফিসের কাজ করে মাত্রই একটু বসেছিলেন।
এমন বহু দৃশ্য আমাদের চারপাশে ঘটে চলে। পরস্পরের সঙ্গে সাদাসিধে খুনসুটিই কেবল নয়, মান-অভিমান, কথা-কাটাকাটি, এমনকি তুমুল ঝগড়াও হয় তুচ্ছ সব বিষয় থেকেই। কিন্তু কেন এমন হয়, জানেন? এর উত্তর অবশ্য এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়।
বাস্তবতা হলো, নানামুখী চাপে বহু মানুষই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একজন কর্মজীবী ব্যক্তি, তিনি পুরুষ হোন কিংবা নারী, কর্মক্ষেত্রের নানা দিক তাঁকে সামলাতে হয় দিনের পর দিন। কারও অফিসের কর্তা হয়তো বদরাগী, কারও সহকর্মীর আচরণ ভালো নয়, কারও আবার কাজের চাপ খুব বেশি। যাতায়াতের পথে চালক থেকে সহযাত্রী, ট্রাফিক জ্যাম থেকে পথের ময়লা—নানা কারণেই বিগড়ে থাকতে পারে মেজাজ।
উল্টো দিকে, ঘরের কাজগুলোও সহজ নয়। সংসার-সন্তান সামলানো, এমনকি চাকরি করলেও নিজের অনুপস্থিতিতে এই বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করা নিঃসন্দেহেই বিশাল কাজ। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এই কাজগুলোকে অবশ্য কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
এমন নানা চাপ সামলাতে সামলাতে যখন কেউ দেখেন, তিনি চাপে রয়েছেন অথচ তাঁর জীবনসঙ্গী আয়েশ করছেন, সেই মুহূর্তে অভিমান হতেই পারে। মনে হতেই পারে, ও কেন একা আরাম করবে! তবে ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলে কিন্তু সাময়িক এসব ভাবনার কারণে দাম্পত্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।
সুখী দম্পতিরা একসঙ্গে ভালো ও খারাপ সময় পার করেন। অবসরযাপনের জন্য দুজনেরই প্রয়োজন হতে পারে আলাদা সময় ও জায়গা। তবে একে অন্যের জন্য সময় রাখা ও একসঙ্গে থাকার চর্চা করাটাও দারুণ ব্যাপার। যেকোনো কাজে একে অন্যের সহযোগী হোন। এমনকি সঙ্গীর যে কাজে আপনি সরাসরি যুক্ত হতে পারেন না, সেই কাজেও পরোক্ষভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করুন। কোনো অবস্থাতেই কারও ওপর কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেবেন না। দুজনকে নিয়েই তো সম্পর্কের এই রসায়ন।
সূত্র: ম্যারেজ ডটকম, রিডারস ডাইজেস্ট