অভিনন্দন! কোথায় আছেন?
ধন্যবাদ। এখনো টোকিওতেই আছি। ৪ তারিখ দেশে ফিরব। দেশে ফিরেই বেশ কিছু কাজ করতে হবে। ফিরে শুটগুলো করব।
প্রথম আলো :
মিস ইন্টারন্যাশনাল থেকে আপনার প্রত্যাশা কী ছিল?
আশা করেছিলাম আরও ভালো কিছু হবে। এই প্যাজেন্টের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। আসলে সব সময় তো আর পরিশ্রমের ফল তাৎক্ষণিকভাবে মেলে না। হয়তো ভবিষ্যতে কখনো কোথাও অন্যভাবে পেয়ে যাব। তবে যেটুকু পেয়েছি, তাও-বা কম কী! আসলে যেটা আশা করেছি, সেটা হয়নি; যেটা আশা করিনি, সেটা হয়ে গেছে।
প্রথম আলো :
আপনি তো অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই প্যাজেন্টের জন্য আলাদা কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। এই প্যাজেন্টের জন্য ৭ কেজি ওজন কমিয়েছি। বাংলাদেশ থেকে যখন ফ্লাই করি, তখন ওজন ছিল ৫২ কেজি। প্যাজেন্টের জন্য মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ফিট থাকার চেষ্টা করেছি। নিজের অনেক যত্ন নিয়েছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর নিজের ‘পারপাস’ নিয়েও কাজ করেছি।
আপনার ‘বিউটি উইথ পারপাস প্রজেক্ট’ কী ছিল?
আমি অনেক দিন ধরেই ‘জাগো’সহ একাধিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১, ৩, ৪, ১০ ও ১৬ নম্বর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এসব হলো দারিদ্র্য বিমোচন, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, গুণগত মানসম্মত শিক্ষা, অসমতার হ্রাস ও শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান। আমি মূলত পথশিশুদের শিক্ষা, শিল্প ও কর্মমুখী দক্ষতা অর্জন নিয়েও কাজ করছি। ওদের অনেকের জন্য ছবি আঁকা একটা সেরে ওঠার প্রক্রিয়া। আমি আরেকটু ভালো বাংলাদেশ, আরেকটু সহনশীল পৃথিবী তৈরিতে অবদান রাখতে চাই। শুধু বিউটি প্যাজেন্টের জন্য নয়, নিজের দায়িত্ব হিসেবে এসব করে যাব।
প্রথম আলো :
কার কার ডিজাইন করা পোশাক নিয়ে গিয়েছিলেন?
এবার অনেকের কাছ থেকে পোশাক পেয়েছি। আসলে দেরিতে হলেও এটা খুবই ভালো যে বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনারদের মধ্যে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বিউটি প্যাজেন্টগুলোয় প্রতিযোগীদের পোশাক সরবরাহ করার একটা সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। ফ্যাশনের আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের মেধা, সৃজনশীলতাকে উপস্থাপন করার সুযোগ মিলছে। আমি সানায়া কুটর, মুক্তা, পৌষি, কাভেলি, মায়া—এ রকম বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড থেকে পোশাক নিয়েছি। এবার আমার সব পোশাকই ছিল বাংলাদেশের। এসব ব্র্যান্ডকে মন থেকে একটা বড় ধন্যবাদ দিতে চাই। আশা করি, ভবিষ্যতেও তাঁরা এই ধারা অব্যাহত রাখবেন।
প্রথম আলো :
এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল আপনার জন্য?
কেবল আমার জন্য নয়, সবার জন্যই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল প্রতিনিয়ত এনার্জেটিক থাকা। মাত্র ২-৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে দিনের ২০ ঘণ্টা একই রকম এনার্জি নিয়ে পার করা খুবই কঠিন। অবশ্য কষ্ট ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না। এটাও একটা আর্মি লাইফস্টাইল, তবে গ্ল্যামারাস আর্মি লাইফস্টাইল!
প্রথম আলো :
জাপানে কোথায় কোথায় ঘুরলেন?
জাপানে বেশ কিছু জাদুঘর আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঘুরেছি। জাপান কিন্তু খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এখানে আমার যে জিনিসটা খুবই ভালো লেগেছে, সেটা হলো, ভূমিকম্পের মতো একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ওরা প্রযুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করছে। আমি এখানে থাকতেই ঢাকায় বেশ কয়েকটা ভূমিকম্প হলো। ফেসবুকে দেখলাম, কী যে অবস্থা! অথচ ওরা এখানে টেকসই ভবন, নগর বানিয়েছে। ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে মোবাইলের নোটিফিকেশনে। সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। জাপানের কাছ থেকে আমাদের ভূমিকম্প মোকাবিলা করাটা শিখতেই হবে।
ভবিষ্যতে যাঁরা বিউটি প্যাজেন্টগুলোয় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাঁদের জন্য আপনার কী বলার আছে?
যখন সময় আসবে, তখন প্রস্তুতি নেবেন, বিষয়টা এমন নয়। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক্যালি গ্রুমিং করানো শুরু হচ্ছে। আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্পেরও প্যাজেন্ট গ্রুমিং স্কুল আছে। আমি বলব, যাঁদের ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বিউটি প্যাজেন্টে অংশ নিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা আছে, তাঁদের উচিত সুযোগের অপেক্ষায় বসে না থেকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। এটা এক সপ্তাহ বা এক মাসের বিষয় নয়। বছরের পর বছর ধরে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।