জেনিফার লরেন্সের মতে, মা হওয়া মানে নিজেকে হারানো নয়
এখন অনেক মা–ই দ্বিধায় ভোগেন—সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে কি নিজের সবটুকু বিসর্জন দিতে হবে? কাজ, শখ ও ব্যক্তিগত আনন্দ—এসব কি মা হওয়ার পর একেবারেই গুরুত্ব হারায়? অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ও দুই সন্তানের মা জেনিফার লরেন্স এবার এই দ্বিধাগ্রস্ত মায়েদের জন্য কথা বলেছেন। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মাতৃত্ব কীভাবে তাঁকে বদলে দিয়েছে ও কীভাবে নিজের পরিচয় না হারিয়ে সন্তানদের বড় করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন।
১. মাতৃত্ব একই সঙ্গে কঠিন ও সুন্দর
জেনিফার লরেন্স বলেন, ‘সন্তান হওয়ার পর সব পাল্টে যায়। এটা একই সঙ্গে খুব কঠিন ও দুর্দান্ত।’
জেনিফার বোঝাতে চেয়েছেন, মা হওয়া মানে সব সময় শুধু আনন্দ থাকবে, এমনটা নয়। একই সঙ্গে আনন্দ, ভয়, ক্লান্তি আর অসীম ভালোবাসার অনুভব খুবই স্বাভাবিক।
জেনিফার মনে করেন, মা হওয়ার সময় যে কষ্ট বা চ্যালেঞ্জ আসে, তা লুকিয়ে রাখার কোনো দরকার নেই। জীবনের ভালো-খারাপ, সংগ্রাম ও সৌন্দর্য মেনে নিলে মন খারাপের দিনে নিজেকে আর দোষী মনে হবে না।
২. মন খুলে কথা বলাই সমাধান
প্রসবের পরের কঠিন সময়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে জেনিফার বলেন, ‘খুব একা লাগে… মনে হয় যেন অন্য কোনো গ্রহের মানুষ।’
তাঁর মতো সফল ব্যক্তিও এমন সময়ে তীব্র একাকিত্ব অনুভব করতে পারেন। তাই আপনি যখন খুব একা, দিশেহারা বা মন খারাপে ভুগবেন, তখন কখনোই ভাববেন না যে শুধু আপনার সঙ্গেই এমন হচ্ছে। এই নীরবতা ভেঙে সাহায্যের জন্য অবশ্যই পরিবার, বন্ধু বা চিকিৎসকের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন।
৩. নিজের পরিচয় হারাতে হবে না
মা হওয়ার পর অনেক মায়ের মনেই ভয় থাকে, হয়তো আগের মতো নিজের শখ বা প্রিয় কাজগুলো আর করতে পারবেন না। জেনিফার লরেন্স এ বিষয়ে জানান, মা হওয়ার পরও তিনি তাঁর সৃজনশীল কাজ চালিয়ে যেতে কতটা ভালোবাসেন।
তাঁর মতে, মাতৃত্ব তাঁর আগের স্বভাব বা গুণ কেড়ে নেয়নি। বরং তাঁর কাজ ও চিন্তাভাবনায় আরও নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মনে রাখবেন, আপনার শখ, ক্যারিয়ার বা ব্যক্তিগত আনন্দগুলো বজায় রাখার পুরো অধিকার আপনার আছে। কারণ, আপনার সন্তান যখন দেখবে আপনি খুশি ও নিজের মতো করে বাঁচছেন, তখন তারা শিখবে, একজন সুখী ও সৃজনশীল মানুষ কেমন হতে পারে।
৪. সংগ্রাম শক্তি দেয়
মা হাওয়ার পর মন খারাপ বা দুশ্চিন্তা নিয়ে জেনিফার লরেন্স যা বলেছেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেনিফার বলেন, ‘যখন কেউ তীব্র উদ্বেগ ও চরম বিষণ্নতায় ভোগেন, তখন নিজেকে খুব একা মনে হয়। যেন অন্য কোনো জগতের প্রাণী।’
জেনিফার এ সময়ের কষ্ট কখনো লুকিয়ে রাখেননি। তাই আপনিও মনের কষ্ট কমাতে নিজের মনের কথা খুলে বলুন। এতেই মানসিক চাপ অনেকটা কমে আসবে। সাহায্য চাইলে আপনি তা পাবেন, আর আপনার সন্তানও শিখবে, জীবনে খারাপ সময় আসা স্বাভাবিক। তাই মনে রাখবেন, সব কষ্ট আপনাকে একা বয়ে বেড়াতে হবে না।
৫. মাতৃত্ব দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়
অনেক মা ভাবেন, মা হলে হয়তো নিজের জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়। কিন্তু জেনিফার লরেন্স এই ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার সন্তানেরা আমাকে সৃজনশীলভাবে বদলে দিয়েছে।’
নিজেকে হারানোর বদলে তিনি নতুন গভীর অনুভূতি ও উৎসাহ খুঁজে পেয়েছেন। জেনিফার এ সময়ের মায়েদের বলেন, ‘মাতৃত্ব আপনার ভেতরের জীবনকে ছোট করে না, বরং আরও বড় ও উন্নত করে। সহমর্মিতা, ধৈর্য বা জীবনের নতুন লক্ষ্য—এসব গুণ আপনার জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে। আদতে এই পরিবর্তন আপনার আসল পরিচয় মুছে ফেলে না, উল্টো আরও শক্তিশালী করে।’
সূত্র: এমএসএন