খুলনার দাকোপে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কী কথা হলো জয়া আহসানের, দুই দিনের সফরে কী দেখলেন?

কাছ থেকে নিজ চোখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হয়ে খুলনার দাকোপে গিয়েছিলেন জয়া আহসান। দুই দিনের এই সফরে কী দেখলেন? স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কী কথা হলো? অভিনেত্রীর ভাষ্যেই শোনা যাক।

খুলনার দাকোপে গিয়েছিলেন জয়া আহসানছবি: জয়া আহসানের সৌজন্যে

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমরা শহরের মানুষেরা অনেক কিছুই শুনি, সামনে আসে নানা খবর। কিন্তু আসলে কী প্রভাব, সেটা এই প্রথম সরাসরি দেখলাম। পানি, বাসস্থান এগুলো তো খুবই মৌলিক চাহিদা, এসবের জন্য কাউকে যে এতটা কষ্ট করতে হয়; এবারের সফরে সেটা ভালোভাবে দেখলাম।

কেন পানির আরেক নাম জীবন, ওখানে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। খাওয়ার পানি ওরা ভীষণ কষ্ট করে সংগ্রহ করে, বৃষ্টির পানি জমিয়ে খাওয়ার উপযোগী করে। লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ অনেক কম। এ কারণে সব ধরনের ফসলও সেখানে হয় না।

শাকসবজি অন্য জায়গা থেকে আনতে হয়। গবাদিপশুর জন্যও তো পানি দরকার। গরু পালা অনেক কষ্ট। তাই গরুর চেয়ে ভেড়া পালে বেশি।

আর আছে সাইক্লোন। বারবার ঘূর্ণিঝড়ের পর যেভাবে তারা নতুন করে শুরু করে, আমরা সেটা ভাবতেই পারি না। ভেবে দেখুন, আমার–আপনার বাড়ি সাইক্লোনে উড়ে গেছে, একবার না বারবারই এমনটা হয়। প্রতিবার নতুন করে বাড়ির মতো একটা সংবেদনশীল জিনিস তারা নতুন করে আবার তৈরি করে।

এটা তো ঠিক স্বাভাবিক নয়। এগুলো আমরা পড়ে যতটা না বুঝতে পারি, কাছে গিয়ে সেটা আরও বেশি নিজের চোখে দেখতে পেলাম। আমার নিজেরও নতুন করে উপলব্ধি হলো।

আরও পড়ুন
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হয়ে কাছ থেকে নিজ চোখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখে এলেন
ছবি: জয়া আহসানের সৌজন্যে

প্রেরণার গল্প

যেকোনো দুর্যোগেই অন্যদের চেয়ে নারীদের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বেশি। খাওয়ার পানি যেটা আমরা খুব সহজে পাই, পানি নিয়ে কষ্টের কথা ভাবতেই পারি না; সেটার জন্য তাদের যে সংগ্রাম, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও সবার সঙ্গে দল বেঁধে খাবার পানি আনতে হাঁটেন মাইলের পর মাইল। অনেকে বাড়িতে ছোট শিশু রেখে পানি আনতে যান। আসার পর হয়তো দেখতে পান, শিশুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।

আরেকজনের গল্প শুনলাম, অনেক কষ্ট করে যে পাত্রে পানি নিয়ে আসছিলেন, সেটাই ভেঙে গেল। এত কিছুর পরও তাদের মধ্যে হতাশা নেই। গল্প করে বুঝলাম, সবাই খুব আশাবাদী। একটা গ্রামে সবাই মিলেমিশে থাকে; সুখ-দুঃখ সব ভাগ করে নেয়। তাদের গল্পগুলো খুবই প্রেরণাদায়ক।

এত কিছুর পরও সংসারটাকে আগলে ধরে রাখে তারা। পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে তাদের যে বেপরোয়া চেষ্টা, কাছ থেকে না দেখলে সেটা বোঝা যায় না। নারীরা সবাই হাতের কাজ বা অন্য কিছু করে সংসারে সাহায্য করছে। তারা যে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করে, সেটা কেবল তারাই জানে।

আরও পড়ুন
প্রান্তিক মানুষের গল্প শুনেছেন জয়া আহসান
ছবি: জয়া আহসানের সৌজন্যে

উঠে আসুক আরও গল্প

এসব অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের গল্প আমাদের সাহিত্যে কিছু এসেছে। সিনেমা দুই-একটি হয়েছে, একটা (রেজওয়ান শাহরিয়ার) সুমিত করেছিল—নোনা জলের কাব্য। কিন্তু তাদের গল্প আমাদের শিল্পে আরও উঠে আসা উচিত। বিশেষ করে সিনেমায়; কারণ, এটা খুব দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছায়।

খুব ছোটবেলা থেকেই শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন করা উচিত। এমনিতেই আমরা একটু কম মানবিক হয়ে গেছি। আলোকিত মানুষের আগে এখন মানবিক মানুষ হওয়া উচিত।

শুনেছি, জাপানে শিশুদের প্রথমে কৃষিকাজ শেখানো হয়। এগুলো তো মৌলিক জায়গা। কিন্তু আমাদের দেশে করা হয় না।

দুই দিনের সফরে আরেকটা জিনিস মনে হলো, সবাই ওখানে মিলেমিশে থাকেন। আসলে মৌলিক প্রয়োজনগুলো এই অঞ্চলে এতটাই প্রবল যে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করার সময় গ্রামের মানুষের নেই।

আমরা যেসব সাম্প্রদায়িক সমস্যার কথা মাঝেমধ্যে শুনি, সেগুলোর কিছুই এখানে নেই। বোরকা পড়া একজন নারীর পাশেই বসে আছেন শাখা-সিঁদুর পরা একজন নারী। তাদের সবার সংগ্রাম পানি নিয়ে, ঘর নিয়ে, খাবার নিয়ে; অন্য কোনো ভাবনা এর মধ্যে ঢুকতে পারে না।

অনুলিখন: লতিফুল হক

আরও পড়ুন