গানের ক্যাসেট ভুলে ফেলে আসার পর যেভাবে জন্ম হলো নতুন ধরনের ব্যায়াম

জুম্বা নাচের মাধ্যমে শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশি জুম্বা ইনস্ট্রাক্টর সুমাইয়া চৌধুরী। স্থান কৃতজ্ঞতা: ট্যাপআউট ফিটনেসছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

অ্যারোবিকস (সুরের তালে তালে ব্যায়াম) ক্লাসের জন্য নির্ধারিত ‘মিউজিক ক্যাসেট’ আনতে ভুলে গিয়েছিলেন আলবার্তো বেটো পেরেজ। কিন্তু ক্লাস তো আর বাদ দেওয়া যাবে না। এদিকে বাসায় যাওয়ার মতো সময়ও নেই। আগত্যা নিজের গাড়ি থেকে কয়েকটি গানের ক্যাসেট বের করে আনলেন। লাতিন গানের অসংখ্য ক্যাসেট তখন বেটো পেরেজের গাড়িতেই থাকত। সেই ক্যাসেট থেকে লাতিন মিউজিকের ওপর কিছুটা ইমপ্রোভাইজ করে একটা ট্র্যাক তৈরি করে ফেললেন বেটো।

মূল গানের ক্যাসেট আনতে ভুলে যাওয়ায় আলবার্তো বেটো পেরেজ জুম্বা ডান্স করিয়েছিলেন ছাত্রদের
ছবি: বেটোর ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

আর কী আশ্চর্য! ছাত্রদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পেল গানের তালে তালে সেই নাচ। এভাবেই ১৯৮৬ সালে কলম্বিয়ার একটি অ্যারোবিকস স্টুডিওতে জন্ম নিল শরীরচর্চার নতুন একটি ধরন—জুম্বা। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে ১৯৯৯ সালে এই নাচকে কেন্দ্রে রেখে ফিটনেস ক্লাস নেওয়া শুরু করেন বেটো পেরেজ। দুই বছরের মধ্যেই ক্লাসের জনপ্রিয়তা এত বেড়ে গেল যে আরও দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ২০০১ সালে জুম্বা নামটি ট্রেডমার্ক করিয়ে নিলেন পেরেজ। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর হয়ে ধীরে ধীরে তা দেশে দেশে ছড়াতে শুরু করে। বর্তমানে ১৮৬টি দেশে নাচের মাধ্যমে শরীরচর্চার এই ধরনটির চর্চা করা হয়।

বেটোর সৃষ্টি জুম্বা এখন ১৮৬টি দেশে চর্চা করা হয়
ছবি: বেটোর ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

বেটো পেরেজ অ্যারোবিকসের ক্লাসে যখন নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। এরপর সময় গড়িয়েছে আর জনপ্রিয়তা বেড়েছে জুম্বার। ২০০১ সালে জুম্বার ট্রেডমার্ক করানোর সময় সহ–উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আলবার্তো পার্লমান ও আলবার্তো এগিয়ন। তিন বন্ধুর উদ্যোগটি বর্তমানে সারা বিশ্বে নিজেদের ব্যবসার ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। করোনার আগে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এখন তা আরও বেড়েছে।

জুম্বার মূলধন ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে অনেক আগেই

কলম্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ক্যালি থেকে এসে বেটো যে নিজের উদ্ভাবন দিয়ে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পাবেন, সেটা তিনি নিজেও ভাবেননি। বেটো বলেন, ‘সেদিন যে নিজের ভুলের খেসারত দিতে আমি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে লাতিন গান বাজিয়েছিলাম, সেটা ঘুণাক্ষরেও কাউকে বুঝতে দিইনি। তবে ছাত্রদের উৎসাহ দেখেই আমি পরে সালসা বা মেরেঙ্গের তালকে একটি নতুন ভাবনা দিতে পেরেছি। ৩০ মিনিটের সেই ক্লাসে থাকা প্রত্যেক ছাত্রই সেদিন খুশি হয়েছিল। আর তাই আমিও এই গানের সঙ্গে লেগে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে দুবার ভাবিনি।’

সারা বিশ্বে প্রায় ১৬ মিলিয়নের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বেটোর গড়ে তোলা জুম্বা ডান্সের
ছবি: বেটোর ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

মিয়ামিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানের এখন সারা বিশ্বে প্রায় ১৬ মিলিয়নের বেশি শিক্ষার্থী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সিঙ্গেল মাকে সাহায্য করার জন্য বেটো কাজে যোগ দেন। কখনো কফিশপে, কখনো পণ্য প্যাকিং অথবা আইসক্রিম বিক্রির কাজ করেছেন বেটো। তবে তাঁর মন পড়ে ছিল নাচের দিকে। সেই আগ্রহ থেকেই অ্যারোবিকসে আসেন। আর সেখান থেকে দুর্ঘটনাবশত জন্ম দিলেন জুম্বা নামে এক নতুন ধরনের শরীরচর্চা, যা এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও জনপ্রিয় এক নাম।

সূত্র: লিভ স্ট্রং, জুম্বা ডটকম, বিবিসি, ওমেনস ফিটনেস, হেলথ ওয়েলবিয়িং