কী হলে কী হতো, এই আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন

সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সম্প্রতি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন লুডাক্রিস। একসময় এই ক্যাম্পাসেরই ছাত্র ছিলেন এই মার্কিন র‌্যাপার, অভিনেতা ও সংগীত প্রযোজক। গানকেই পুরোদস্তুর পেশা হিসেবে নেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন তিনি। আর এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল র‌্যাপারদের একজন লুডাক্রিস। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফিল্ম সিরিজের মতো কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যও তাঁর খ্যাতি আছে। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে লুডাক্রিস যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তারই উল্লেখযোগ্য অংশ থাকল আজ।

লুডাক্রিস
ছবি: জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে

‘মা, দেখো! অবশেষে আমি পেরেছি!’

আমি জানি, কলেজ ছেড়ে দিয়ে গান করার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছিলাম, তখন সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিল আমার মা। আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর ভীষণ সংশয় ছিল, দ্বিধা ছিল। কিন্তু আমি এ–ও জানি, আজ আর ওসব নিয়ে মায়ের কোনো শঙ্কা নেই।ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে আজ যখন আমার নতুন কেনা দ্বীপ দেখতে যাবে বলে দ্বিধায় হাবুডুবু খায় মা, এর সামনে পুরোনো ভয়, সংশয়, শঙ্কাগুলো একেবারে কেটে যায়।মায়ের পুরোনো শঙ্কাগুলো তো আগেই কাটিয়ে দিয়েছি, এবার ডক্টরেটটাও হয়ে গেল। তাই আজকের দিনটা শুধু আমার একার জন্যই নয়, আমার মায়ের জন্যও বিশেষ। পারলে কয়েকটা ক্যামেরা তাঁর দিকেও তাক করে রাখুন। কারণ, আমার বক্তৃতার পুরো সময়টাতেই সে এখন কাঁদবে আর চোখ মুছবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

আমার মতো অনেকের জন্যই আজকের দিনটি স্মরণীয়। এই সমাবর্তন পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তাটা অনেকের জন্যই হয়তো মসৃণ ছিল না। অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়ে এই পথ পাড়ি দিয়েছ হয়তো কেউ, কেউ হয়তো থেমে থেমে হোঁচট খেয়ে পৌঁছেছ আজকের এই সমাবর্তনে। যার সফর যেমনই হোক, আমি বলতে চাই—তোমরা একা নও। আজ তোমরা জিতে গেছ, তোমাদের সঙ্গে তোমাদের পরিবারও জিতে গেছে। তাই আজ সমাবর্তনে আসা প্রত্যেক শিক্ষার্থী আর তাদের পরিবারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

‘কেন’র জবাব খুঁজে বের করো

অভিনন্দন দেওয়া তো হলো। সমাবর্তনও হলো। তাহলে এখনো কেন আমরা এখানে কথা বলছি? মার্ক টোয়েনের খুব সুন্দর একটা উক্তি আছে। আমার খুব প্রিয়। উক্তিটা হলো, ‘মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো দিনের একটি হলো, যেদিন সে এই পৃথিবীতে আসে আর অন্যটি যেদিন সে বুঝতে পারে কেন সে এই পৃথিবীতে এসেছে।’ আমরা এখন এই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন, অর্থাৎ আমাদের জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ‘কেন? ’ নিয়ে কথা বলব। জন্মের পর থেকেই আমরা এই ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে নেমে যাই। কিন্তু সবাই বলে, জীবনটা এত সহজ নয়। আমি তোমাদের আজ হলফ করে বলতে পারি, জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই ‘কেন’র জবাব খোঁজায় মন দাও, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার চেষ্টায় নিজেকে ঢেলে দাও, এরপর দেখো, পথ কতটা মসৃণ হয়ে ওঠে।

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আমার সম্পর্কের শুরু ১৯৯৬ সালে। স্নাতক করার জন্য ব্যবসায় অনুষদে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু পরে গান করব বলে দুই বছরের মাথায় পড়াশোনা ছেড়ে দিই। চুক্তিবদ্ধ হই ডেফ জেম রেকর্ডসের সঙ্গে। বাজারে আসে ‘হোয়াটস ইয়োর ফ্যান্টাসি’ নামে আমার একটা গান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াটা ছিল আমার জন্য বিরাট এক সুযোগ, যা আমি লুফে নিয়েছিলাম। কারণ, ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনার দুই বছরের মাথায়ই বুঝে গিয়েছিলাম, গানের প্রতি আমার যে ভালোবাসা, এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে আমাকে আগে গানের দুনিয়ার ব্যবসাটা শিখতে হবে। কারণ, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে টিকতে হলে সংগীতের জ্ঞান যদি থাকা লাগে ১০ শতাংশ, তাহলে ব্যবসার জ্ঞান লাগে ৯০ শতাংশ। তাই আমি আমার জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ ‘কেন’র জবাব খুঁজতেই এই ক্যাম্পাস ছেড়েছিলাম।

আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন

কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই পুরো বিশ্ব জয় করে, বিরাট যশখ্যাতির মালিক হয়ে, লাখো ডলার আয় করেও, জীবনের অর্জনগুলো আজকের এই সমাবর্তনের মঞ্চে এসে, এই ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়েই কিন্তু পূর্ণতা পেল। এখন প্রশ্ন করতে পারো, যদি এই ক্যাম্পাসে ফিরে এসেই অর্জনগুলো পূর্ণতা পায়, তাহলে কেন আমি ক্যাম্পাস ছেড়েছিলাম? এর জবাব হলো, কী হলে কী হতো—এই আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকা ভীষণ কঠিন। এর চেয়ে বরং সাহস করে ভয়ংকর সব ঝুঁকি নিয়ে ফেলা সহজ। সারা জীবন আক্ষেপ বয়ে বেড়ানোর চেয়ে, ঝুঁকি নিয়ে জীবন পার করে দেওয়া সহজ। তাই আমি সাহস করে ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলাম। সেই ঝুঁকিই আজ আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এল।

তাই এবার সমাবর্তন পাওয়া সব শিক্ষার্থীকে বলতে চাই, তোমরাও ঝুঁকি নাও। আক্ষেপে নয়, আনন্দে বাঁচো। জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে এখনই লেগে পড়ো। প্রয়োজনে নিয়ম ভাঙো, নতুন নিয়ম গড়ো। নিজেকেই নিজে বলো, তুমি কারও চেয়ে কম নও। বাস্তবতার সঙ্গে আপস করার জন্য দিনে দিনে নিজেকে বদলে না ফেলে, তুমিই দিন বদলে দাও। তুমিই হও দিনবদলের কান্ডারি। বড় স্বপ্ন দেখো, অন্যদেরও দেখাও। স্বপ্নঘাতকদের এড়িয়ে যাও। হ্যাঁ, যাঁরা তোমাকে সীমার মধ্যে থেকে স্বপ্ন দেখতে বলবেন, তাঁদের থেকে দূরে থেকো। তুমি স্বপ্ন দেখে যাও, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ ‘কেন’র জবাব খুঁজে না পাচ্ছ, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে না পাচ্ছ। তোমার অন্বেষণ জারি রাখো।

অনুবাদ: আদর রহমান

সূত্র: জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ইউটিউব চ্যানেল