ধীরে চলা

(ষষ্ঠ কিস্তি)

পঁতেভিঁ তাঁর এই মতবাদগুলো প্রকাশ-প্রচার করেননি। কোনো বই লেখেননি, সভা-সিম্পোজিয়াম করেননি। তাঁর কাজের ব্যস্ততা ছিল, এমনও না। জাতীয় গ্রন্থাগারে তাঁর অফিসকক্ষে বসে ইতিহাসের পিএইচডি এই ব্যক্তি বরং বিরক্তি বোধ করতেন। যদি বলা হয়, তত্ত্বের প্রচারে তিনি অনাগ্রহী ছিলেন, তাহলে কমই বলা হয়। তিনি প্রচারণাকে অপছন্দ করতেন। যে ব্যক্তি তাঁর ধারণাকে জনসমক্ষে প্রচার করেন, তিনি একটা ঝুঁকি নেন, তাঁর ধ্যানধারণা দিয়ে অন্যকে পটিয়ে ফেলতে চান, অন্যদের প্রভাবান্বিত করেন, তারপর আবির্ভূত হন জগৎটাকে বদলে দিতে চাওয়ার দলে। জগৎটাকে বদলে দেওয়া। পঁতেভিঁ মনে করেন, এ হলো এক রাক্ষুসে লক্ষ্য। এমন না যে পৃথিবীটা এখন সুন্দর আছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেকোনো পরিবর্তন জগৎটাকে আরও অনিবার্যভাবে আরও খারাপটাই ডেকে আনে। যেকোনো নতুন চিন্তাই শেষ পর্যন্ত তার রচয়িতার কাঁধে এসে পড়ে। তখন ওই নতুন ধারণাটা আবিষ্কার করার যে আনন্দ তার ছিল, সেটা নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই স্বার্থপরের মতন করে ভাবেন পঁতেভিঁ। তিনি হলেন এপিকিউরাসের সেরা শিষ্য। তিনি একটা নতুন চিন্তা করার আনন্দ পাওয়ার জন্যই চিন্তা করেন। এমন না যে তিনি মানবজাতিকে অবজ্ঞা করেন। কিন্তু তিনি মনে করেন পৃথিবীটা অপরিবর্তনীয়। মানবজাতি আনন্দপূর্ণ কিন্তু বিদ্বেষে ভরা কতগুলো ভাবনা মাত্র। তিনি তাদের কাছে আসার কথা ঘুণাক্ষরেও কখনো ভাবেন না। তিনি একটা ক্যাফে গ্যাসকন নামের একটা ক্যাফেটেরিয়ায় তাঁর নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, এটাই তাঁর জন্য মানবজাতির যথেষ্ট নমুনা।

এই বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্পাপ, সবচেয়ে মর্মস্পর্শী হলেন ভিনসেন্ট। আমি তাঁকে পছন্দ করি। তাঁর একটাই দোষ, তিনি শিশুর মতো, তিনি পঁতেভিঁকে বড় বেশি পছন্দ করেন। ব্যাপারটা আমার ঈর্ষারও কারণ। ভিনসেন্টের এই ব্যাপারটার ভালো দিকও আছে। তাঁরা দুজন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন—দর্শন, রাজনীতি, বই।

[আজ এই পর্যন্তই রাখি। ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের সামান্য একটা অংশ। তাহলে আমরা পরের বার কিস্তি আর অনুচ্ছেদের নম্বর মিলিয়ে দিতে পারব। আমি শুধু এটা খেয়াল করতে বলি, ভিনসেন্টকে আমি পছন্দ করি, এই বাক্যটা কার? এই বক্তাটা কে? এই গল্পের নায়ক, যিনি স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে উঠেছেন? তিনি কি মিলান কুন্ডেরা নিজে?
কত কী আমরা আলোচনা করছি। উপন্যাস, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি। বার্কের কথা ভুলে গেছি। পঁতেভিঁতে এসেছি। ভিনসেন্টে এলাম। এপিকিউরাসকে আবার পেলাম। চলতে থাকুক। দেখা যাক, কোথাকার গল্প কোথায় যায়]