একটি মানবিক পোশাকশিল্প কীভাবে গড়ে তোলা সম্ভব

শুধু নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পোশাকশিল্প গড়লেই চলবে না, এখানে থাকতে হবে মানবিকতা ও উন্নত কর্মপরিবেশ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দুর্ভাগ্য আমাদের কেন জানি পিছু ছাড়ছে না। ১০ বছর আগে বিশ্ববিবেক নাড়া দেওয়া শিল্প দুর্ঘটনা থেকে বেরিয়ে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ার কাজে যখন আমরা ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় এই ঈদের আগে শ্রমিকের পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে একজন শ্রমিকনেতা মৃত্যুবরণ করলেন।

এ যেন তৈলাক্ত বাঁশে বানরের তিন হাত এগোনোর পর দুই হাত পিছিয়ে আসার মতোই ঘটনা। আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পোশাকশিল্প গড়লেই চলবে না, এখানে থাকতে হবে মানবিকতা ও উন্নত কর্মপরিবেশ।

পোশাকশিল্প শ্রমঘন শিল্প। এই শিল্পে যন্ত্রের চেয়ে মানুষের সংখ্যাই বেশি। ফলে এখানে কর্মরত মানুষের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার মতো বড় দায়িত্ব আছে। কর্মসংস্থানের শর্ত পূরণ, উন্নত কর্মপরিবেশের ব্যবস্থা করা, কারখানার নিরাপত্তা এবং কর্মীদের সুরক্ষা প্রদান করার জন্য আমাদের জাতিসংঘের নির্দেশিত নীতি (ইউএন গাইডিং প্রিন্সিপাল, সংক্ষেপে ইউএনজিপি) অনুসারে মানবাধিকারের সব রকম উপাদান যথাযথভাবে নিশ্চিত করে ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে।

এটি না করতে পারলে আগামী দিনগুলোতে আমরা যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তা বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না। পোশাকশিল্পে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কীভাবে কার্যকর শ্রম পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তা নিয়ে আজকের আলোচনা।

আরও পড়ুন

ব্যবসায়িক দায়িত্ব নিশ্চিত করা

কর্মী হিসেবে আমরা যাঁদের কারখানায় নিয়োগ দিয়েছি, তাঁদের সময়মতো ন্যায্য মজুরি প্রদান, শ্রম আইন অনুযায়ী কাজের সময় নিশ্চিত করা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় তাঁদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে সরাসরি দায়ভার রয়েছে আমাদের। আমার কাছে পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ নেই, আমি কীভাবে বেতন দেব, অথবা আমার কাজ বেশি, তাই আমি অমানবিকভাবে ওভারটাইম করাব—এসব কথা বলার সুযোগ নেই।

তাই ব্যবসায় মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ হলো, ব্যবসায়িক দায়িত্ব নিশ্চিত করা। প্রতিটি কারখানার এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে শ্রমিকদের মানবাধিকার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।

এটি শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা, নিরাপত্তা উপদেশ, ন্যায্য বেতন ও উন্নত কর্মপরিবেশ সম্পর্কে নির্দেশনা দেবে। এই নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট পদে যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হবে, যাঁরা মানবাধিকারের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন

যন্ত্রপাতি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ

তৈরি পোশাকশিল্পে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শ্রমিকদের কাজ পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ করতে প্রযুক্তির সাহায্যে কারখানা পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রমিকের উৎপাদনের সামর্থ্য অনুযায়ী কারখানা উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হবে।

এমনভাবে ক্রয়াদেশ গ্রহণ করতে হবে, যাতে শ্রমিকের কাজের দক্ষতা ও সুরক্ষা এবং উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থায় সস্তা শ্রমকে একমাত্র উপাদান মনে করলে আপনার কারখানার কর্মপরিবেশ ও মানবিকতা কখনোই উন্নত করতে পারবেন না। মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে গবেষণা, নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং বহুমুখীকরণের দিকে নজর দিতে হবে।

আরও পড়ুন

শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণ

মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য পোশাকশিল্পের কর্মীদের জন্য শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে, যাতে তাঁরা দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হবে। আর মানবাধিকার সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জিত হবে। এতে শ্রমিকেরা উন্নত কর্মপরিবেশের স্বপ্ন দেখতে শিখবেন। প্রয়োজনে মালিকপক্ষের কাছেও যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করতে পারবেন।

যদিও আমরা বিভিন্ন অডিটের প্রয়োজনে নিয়মিত বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, কিন্তু মানবাধিকারের অনেক বিষয় শ্রমিকের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষ যখন তাদের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে, তখনই কেবল একটা সুন্দর কর্মপরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন

পর্যবেক্ষণ ও আইনের প্রতিপালন

কারখানার মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য নির্ধারিত পদ সৃষ্টি করে পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ করতে হবে, যাতে করে তাঁরা কারখানায় নিরাপত্তা, কাজের দক্ষতা এবং মানবাধিকার সম্পর্কে নিয়মনীতি অনুসরণ করছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেন। তাঁরা মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কারখানার মালিককে নিয়মিত প্রতিবেদন দেবেন। এমনকি আইনের প্রতিপালন সম্পর্কে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন।

মালিকপক্ষ মানবাধিকার বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি বা কোনো ভিজ্যুয়াল বোর্ড স্থাপন করে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যেমন ন্যায্য মজুরি, সময়মতো বেতন প্রদান, কর্মঘণ্টা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, শ্রমিকদের অনুযোগ-অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা ইত্যাদি সুস্পষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার কী পারফরম্যান্স ইনডিকেটরস বা কেপিআই হিসেবে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

মানবাধিকার ও শোভন কর্মপরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করতে হবে। তবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার নামে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অশোভন রাজনৈতিক স্বার্থ বা কোনো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে। শ্রমিকের অধিকার, ন্যায্যতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিকদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করে শ্রমিকদের পেশাদারি ও নিরাপত্তা উন্নয়নে সহায়তা করতে হবে।

যৌথ আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুতকল্পে বিশুদ্ধ সংগঠন

কারখানার মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য যৌথ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে বর্তমান শ্রম আইনে অংশগ্রহণকারী কমিটি অথবা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছে। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের স্বার্থ, তথা কারখানার স্বার্থ যখন সবাই মনের মধ্যে ধারণ করেন, তখন একটি বিশুদ্ধ শ্রমিক সংগঠন কারখানায় মানবিক উন্নয়ন এবং টেকসই মুনাফা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে।

মানবাধিকার ও শোভন কর্মপরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করতে হবে। তবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার নামে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অশোভন রাজনৈতিক স্বার্থ বা কোনো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে। শ্রমিকের অধিকার, ন্যায্যতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিকদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করে শ্রমিকদের পেশাদারি ও নিরাপত্তা উন্নয়নে সহায়তা করতে হবে।

এ ছাড়া অন্যান্য মানবাধিকার রক্ষাকারী সামাজিক সংগঠন, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতার মাধ্যমে শ্রমিকদের জ্ঞান ও সচেতনতা প্রশিক্ষণ প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাঁরা তাঁদের অধিকার ও মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে প্রশাসনিক পরিচালনায় সহযোগিতা করতে পারেন।

প্রশাসনিক পরিচালনায় প্রতিক্রিয়ামূলক মেকানিজম

পোশাক কারখানাগুলোতে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক পরিচালনায় প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থা (ফিডব্যাক বেজড মেকানিজম) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারখানার উচ্চস্তরের কর্মকর্তাদের মানবাধিকার নিয়ে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদমর্যাদা ও পদের দায়িত্বগুলো নির্ধারণ করতে হবে।

কারখানায় নিয়মিত আইনগত পরীক্ষা ও অনুসন্ধানের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে মানবাধিকার নিশ্চিত হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী তদারকি করা যায়। এই পরিচালন পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার নিয়ে শ্রমিকদের মতামত ও অভিযোগ প্রদানের সুযোগ দিতে হবে।

এটি একটি স্বচ্ছ প্রভাবশালী ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে, যা শ্রমিকদের মতামত শোনার এবং তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সাধারণ প্রশাসনিক পদ্ধতিতে ব্যবস্থা করতে পারবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মানবাধিকার বিষয়ে যত বেশি সচেতন থাকবেন, নিম্নস্তরের কর্মচারী-শ্রমিক সেই প্রতিষ্ঠানে ভালো কর্মপরিবেশ পাবেন।

রাষ্ট্র, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধিত্বের অংশগ্রহণ

তৈরি পোশাকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক ধরনের অংশীজন রয়েছে, যারা বিভিন্নভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা ও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্র, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, এনজিও এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে পোশাক কারখানাগুলোতে মানবাধিকার নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা, সংগঠিত করা এবং সমস্যার সমাধানের জন্য প্রশাসনিক এবং আইনি সাহায্য প্রদান করতে পারে।

কারখানার অবস্থান অনুযায়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন ও অন্যান্য কমিউনিটির সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
তবে রাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা হলো, কারখানাগুলোর মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়ামূলক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে হবে বা সরকারের বিদ্যমান কোনো সংস্থাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এই প্রতিষ্ঠান কারখানাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে এবং মানবাধিকার সম্পর্কে আইন সংযোজন-বিয়োজন ও সংশোধন প্রয়োগ করবে; কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব এবং সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধিকার প্রদান করবে। যদি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে, তখন প্রতিক্রিয়ামূলক পরিচ্ছন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করবে।

কারখানায় নিয়মিত প্রশিক্ষণে সহযোগিতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ক্রেতার অংশীদারত্বমূলক ভূমিকা

পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় হচ্ছেন আমাদের ক্রেতারা। তাঁরা চাইলে মানবাধিকার নিশ্চিত করা কোনো ব্যাপারই নয়। সমস্যা হচ্ছে, নামীদামি ক্রেতারা ছাড়া অন্যরা দিন শেষে কত সস্তায় পোশাক কিনতে পারলেন, সেটাই তাঁদের সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কতটা মানবিকভাবে পোশাক উৎপাদন করল বা প্রতিবেশ-পরিবেশকে কতটা ঝুঁকির মুখে ফেলল, তা তাঁরা বিবেচনায় আনেন না।

এর একটি অন্যতম কারণ, তিনি যে বাজারে তা বিক্রি করেন, সেখানকার ক্রেতার সচেতনতাই তাঁকে মূলত চাপে রাখে। অর্থাৎ, তাঁর মূল ক্রেতা যদি সচেতন না হন, তিনিও সচেতনভাবে তাঁর পোশাক উৎপাদনে মনোযোগী হন না।

তাই ক্রেতারা শুধু সস্তা পোশাক না খুঁজে একটু দায়িত্বশীল পোশাকের ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের যদি প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাহলেই অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পোশাকের ন্যায্যমূল্য প্রদানের পাশাপাশি মানবাধিকার নিশ্চিতে তাঁদের কারখানার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে। কারখানার সঙ্গে যথাযথ চুক্তিপত্রের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

কারখানায় নিয়মিত প্রশিক্ষণে সহযোগিতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা ছাড়া তাঁদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং প্রতিবেদন প্রদান করে ক্রমাগত উন্নতির জন্য একটা সংস্কৃতি তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, তাঁরা কারখানা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার এবং টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করতে পারেন, যাতে করে তাঁদের সরবরাহব্যবস্থা সচেতনভাবে কারখানা পরিচালনায় মনোযোগী হতে পারে। ভালো কারখানাগুলো প্রণোদনা প্রদান করে উৎসাহী করে তুলতে পারে।

পরিশেষে, পোশাকশিল্পে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে একটি সংগঠিত এবং পূর্ণ কর্মসংস্থানের নিয়মাবলি মেনে কীভাবে কারখানা পরিচালনা করতে হবে, তা আমাদের জানতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়কে সামনে রেখে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএতে একটি রেসপনসিবল বিজনেস হাব (আরবিএইচ) নামের একটি শাখা খোলা হয়েছে, যেখান থেকে পোশাকশিল্পের সব সদস্য তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন এবং নানাবিধ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য সব পক্ষের সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এই শিল্পের মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে আমরা গড়ে তুলতে চাই একটি আত্মমর্যাদাশীল কারখানা, যাতে আমাদের কর্মীরা অধিকার, ন্যায্যতা এবং মানসিক সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পান। আর আমাদের পোশাকশিল্প হয়ে উঠবে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি গর্ব করার মতো শিল্প।

  • শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রি লি.; চেয়ারম্যান, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন সাসটেইনেবিলিট, বিজিএমইএ
    [email protected]