দেশেই মেডিকেল ডিভাইসশিল্প গড়ে তোলা কি অসম্ভব

চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে মেডিকেল ডিভাইসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এখনো দেশে মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনের তেমন বড় কোনো উদ্যোগ নেই। কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দেশে মেডিকেল ডিভাইসশিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন শিশির মোড়ল

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৫তম এশিয়া ফার্মা এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন দেশের ব্যবসায়ী সমাজের কাছে একটি নতুন বিষয় উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, ব্যবসায়ীরা যেন ‘মেডিকেল ডিভাইস’ উৎপাদন করেন। অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ পর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘দেশেই চিকিৎসা যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম তৈরির তাগিদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর’।

সামন্ত লাল সেন নিজে প্লাস্টিক সার্জন। পেশাগত চর্চার সময় তিনি যেসব যন্ত্রপাতি, ইকুইপমেন্ট বা ডিভাইস ব্যবহার করেছেন, তা সবই হয়তো বিদেশ থেকে আনা অর্থাৎ আমদানি করা। সারা দেশের চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা মোটামুটি একই।

এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করতে হয় বলে চিকিৎসার ব্যয় বেড়ে যায়, চাপ পড়ে রোগীর ওপর। দেশে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি উৎপাদন করে সেই চাপ কমানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন নতুন এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়েছেন। বক্তব্যের শুরুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছিলেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে গত ৫৩ বছরে ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হয়েছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, শিশু অপুষ্টি কমেছে, টিকাদানের হার বেড়েছে, মোট প্রজনন হার কমেছে (টিএফআর), জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহারের হার (সিপিআর) বেড়েছে। এসব সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ও সাফল্যে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে অবদান রয়েছে মেডিকেল প্রযুক্তির উন্নতি ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি, ইকুইপমেন্ট বা ডিভাইসের।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে উচ্চমানের মেডিকেল সরঞ্জাম-যন্ত্রপাতির চাহিদা বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও ইন্‌সেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি (মেডিকেল ডিভাইস তৈরি) সম্পূর্ণ নতুন ফ্রন্ট। খুবই বিশেষায়িত একটি খাত। এই খাতের জন্য সরকার কীভাবে সমর্থন-সহায়তা দিতে চায়, সেটিও বড় কথা। বিষয়টিতে আমরা অবশ্যই সরকারের পাশে থাকব।’

যন্ত্রপাতি বা ইকুইপমেন্ট ডিভাইস

চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার, ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা বা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ আকারের মেডিকেল মেশিনারি/ইকুইপমেন্ট/ডিভাইস প্রতিদিন ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে চার হাজার ধরনের মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বা ডিভাইসের ব্যবহার আছে। এর সঙ্গে মেশিনারি বা যন্ত্র যুক্ত করলে সংখ্যাটি আরও অনেক বড় হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপের প্রকৌশলীরা মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসগুলোকে মোটাদাগে ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন।

এগুলো এ রকম: এক্স-রে সেকশন (১৫ ধরনের যন্ত্র ও সরঞ্জাম), ইলেকট্রনিক সেকশন (২৬ ধরনের যন্ত্র ও সরঞ্জাম), মেকানিক্যাল সেকশন (১৭ রকম যন্ত্র ও সরঞ্জাম), ইলেকট্রিক্যাল সেকশন (২৮ রকম যন্ত্র ও সরঞ্জাম), রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং (৭ রকম যন্ত্র ও সরঞ্জাম) ও অপটিক্যাল সেকশন (৩৪ ধরনের যন্ত্র ও সরঞ্জাম)। তাদের কাছ থেকে ১২৭ ধরনের যন্ত্র ও সরঞ্জামের তালিকা পাওয়া যায়। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন আরও কিছু যন্ত্র এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্বাভাবিক কারণেই তাঁদের এই তালিকায় খুবই পরিচিত কিছু ইকুইপমেন্ট, যেমন থার্মোমিটার, স্টেথিসকোপ বা গজ-ব্যান্ডেজ নেই। বাংলাদেশে প্রতিটি হাসপাতালে বা ক্লিনিকে গজ ব্যবহার করা হয়। এই গজ থান কাপড়ের মতো তৈরি হয় সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি জেলায়। বিক্রি হয় রাজধানীর বিএমএ ভবনে বা মিটফোর্ড এলাকার বাজারে।

দেশে ব্যবহৃত চার হাজার ইকুইপমেন্ট ডিভাইসের ৮ শতাংশ দেশেই তৈরি হয়। দেশে তৈরি ইকুইপমেন্ট ডিভাইসের মধ্যে আছে ডিসপোজেবল/প্রিসিশান সেফটি সিরিঞ্জ, নিডিল, ব্লাড ব্যাগ, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট, ক্যানুলা, ব্লাড কালেকশন টিউব ইত্যাদি। বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ডিভাইস তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। এর মধ্যে আছে জেএমআই।

তারা ২০০টির বেশি ইকুইপমেন্ট ডিভাইস তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে। আরও কয়েকটি কোম্পানি ইকুইপমেন্ট ডিভাইস তৈরি করছে। ওষুধ কোম্পানি ইন্‌সেপটা সুসার (বিশেষ ধরনের সুই) উৎপাদন করছে। অপসোনিন স্যালাইন লিমিটেডও মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদন করে।

বাংলাদেশে বোন-হুক, ড্রিল মেশিন, স্পাইন রিট্রাক্টর, সার্জিক্যাল স্টেরেলাইজার, হাসপাতাল ফার্নিচার, ব্লাডপ্রেসার/ গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইস, কমপ্রেশার নেবুলাইজার, ইলেকট্রো-কার্ডিওগ্রাম তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ‘জিঞ্জিরা’এলাকায় বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে এবং তা বাংলাদেশের হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এর মধ্যে আছে ডায়াথার্মি, সাকার মেশিন, ভ্যাক মেশিন, ফটোথেরাপি মেশিন, অটোক্লেভ যন্ত্র, মেডিকেল বেড। এগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু এগুলোর ব্যবহারে কারও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। কোভিড-১৯ মহামারির সময় পিপিপি ও মাস্ক তৈরি করে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

এ ছাড়া কিছু ইকুইপমেন্ট ডিভাইস প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধ পথে আসে। সড়ক দুর্ঘটনায় হাত বা পা ভাঙা রোগীর চিকিৎসায় স্টেইনলেস স্টিলের যে পাত ও স্ক্রু ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মূলত ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পথে আসে। সাভারে একটি প্রতিষ্ঠানও তা তৈরি করছে। বাংলাদেশে তৈরি করা পাত ও স্ক্রুর দাম কম।

বাজার কত বড়

দেশে মেডিকেল যন্ত্রপাতি বা ইকুইপমেন্ট ডিভাইসের চাহিদা পূরণ হয় মূলত আমদানির মাধ্যমে। প্রয়োজনের ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়। আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট-বড় প্রায় ৫০০টি প্রতিষ্ঠান এগুলো আমদানি করে। আমদানি করা হয় মূলত চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মেডিকেল মেশিনারি/ইকুইপমেন্ট/ডিভাইসের পেছনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বছরে খরচ এক হাজার কোটি টাকার বেশি। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় এই অর্থ খরচ হয়। তবে এই ব্যয় প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রতিবছর দরকার চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ।

এর পরে আসে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেশে এদের সংখ্যা ১৬ হাজার ২৬০টি। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বা ইকুইপমেন্ট ডিভাইসের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া দেশে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার, ওষুধের দোকান এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, কবিরাজ ও অন্যান্য সনাতন পদ্ধতির চিকিৎসকেরা নিয়মিত মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে মেডিকেল ডিভাইসের বর্তমান বাজার ১৬ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার। এই বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সফল উদাহরণ ওষুধশিল্প

স্বাধীনতার পর দেশের ওষুধের বাজারের ৯৫ শতাংশ ছিল বহুজাতিক কোম্পানির দখলে। ওষুধ আমদানি হতো বেশি, দেশে তৈরি হতো সামান্য। এই পরিস্থিতি পাল্টে যায় জাতীয় ওষুধনীতির কারণে। জাতীয় ওষুধনীতিতে দেশে ওষুধ তৈরিকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যে ওষুধ দেশে তৈরি হবে, সেই ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে বিক্রি করা যাবে না। ওষুধনীতি দেশের ওষুধশিল্প বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছে।

২৯ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা বলেছেন, চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ এখন দেশে তৈরি হয়। বাংলাদেশ ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কিছু দেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যেখানে ওষুধ আইন খুবই কড়া, সেসব দেশেও ওষুধ রপ্তানি করে। দেশে ওষুধের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক দেশের চেয়ে কম। সরকারের নীতির কারণে ওষুধশিল্প দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পেরেছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।

নতুন শিল্পের যৌক্তিকতা

বাংলাদেশে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে অনেক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। দেশের প্রযুক্তিবিদেরা এসব যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেছেন অথবা বিদেশি যন্ত্রপাতি অনুকরণ করে তা তৈরি করেছেন। দেশের অনেক অঞ্চলের মানুষের বিশেষ দক্ষতা আছে যন্ত্রপাতি তৈরি করার। এ ছাড়া দেশে বিদেশি সহায়তায় বা অংশীদারত্বে কম্পিউটার বা মুঠোফোন তৈরি হচ্ছে। এর অর্থ উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি তৈরির দক্ষতা এ দেশের প্রযুক্তিবিদদের আছে।

ওষুধশিল্পের সাফল্যই মেডিকেল ডিভাইসশিল্প গড়ে তোলার প্রেরণা। বাংলাদেশে এখন মূলত ডিসপোজেবল ইকুইপমেন্ট বা ডিভাইস তৈরি হচ্ছে। এসব কাজ হচ্ছে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্য যন্ত্রপাতি তৈরির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দেশের প্রযুক্তিবিদেরা ডায়াথার্মি, সাকার মেশিন, ভ্যাক মেশিন, ফটোথেরাপি মেশিন, অটোক্লেভ মেশিন, মেডিকেল বেড তৈরি করছেন এবং সেগুলো হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। সরকারের কোনো আনুকূল্য ছাড়াই। অনেকে মনে করেন, এর কিছু হচ্ছে অবৈধভাবে।

দেশের বিশিষ্ট স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ও একুশে পদক পাওয়া চিকিৎসক অধ্যাপক সায়েবা আক্তার প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন। এতে কনডম ব্যবহার করা হয়। ‘সায়েবা মেথড’ নামে তা দেশে ও বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে। এখন ‘সাইবা ক্যাথেটার’ নামে এই প্রযুক্তি বাজারে আনছে জেএমআই। এ রকম উদাহরণ আরও আছে। আইসিডিডিআরবি নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ‘বাবল সিপ্যাপ’ উদ্ভাবন করেছিল। এখন তা পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

রপ্তানির সম্ভাবনা

মহামারির সময় বাংলাদেশ পিপিই তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করেছে। পিপিই ছাড়া অন্যান্য ইকুইপমেন্ট/ডিভাইসও রপ্তানি করা সম্ভব। জেএমআই ইতিমধ্যে ৩০টি ইকুইপমেন্ট/ডিভাইস সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট/ডিভাইসের বাজার ধরার সুযোগ আছে, যদি মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তা বিক্রি করা যায়।

জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০০টির বেশি ডিভাইস তৈরি করছি। এর মধ্যে পাঁচটি ডিভাইস ৪০টি দেশে রপ্তানি শুরু করেছি। দেশে এই শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’ অপসোনিন স্যালাইন লিমিটেডের প্ল্যান্ট অপারেশন শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিছাব উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান ১০ ধরনের মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদন ও বাজারজাত করে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তা ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, অনেক ধরনের মেডিকেল ডিভাইস দেশে বেশ আগে থেকেই তৈরি হচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, একে আলাদা শিল্প হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়ে কারও কারও দ্বিমত আছে।

এখন করণীয়

সারা দেশে এসব যন্ত্রপাতি যাঁরা তৈরি করছেন, তৈরি করে যাঁরা চিকিৎসাসেবায় অবদান রাখছেন, তাঁদের মেধাকে সম্মান জানানো দরকার। কাজের স্বীকৃতি দিলেই সেটা সম্ভব। সেই স্বীকৃতি সম্ভব যদি একে পৃথক একটি শিল্প হিসেবে ভাবা যায়। দেশে এই শিল্প গড়ে উঠলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে সন্দেহ নেই।

শিল্পোদ্যোক্তারা দেশে নতুন এই শিল্প গড়ে তোলার পক্ষে। অনেকে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে ডিভাইস তৈরি করছেন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে তা হচ্ছে না। কারণ, এসবের সঙ্গে সরকারের বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

উৎপাদন করতে সক্ষম এমন ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। বাধা হয়ে আসতে পারেন আমদানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এটি মাথায় রাখতে হবে যে আমদানি করা পণ্যের বিকল্প হবে নিজস্ব উৎপাদন। উৎপাদিত ডিভাইসের দাম হতে হবে আমদানি করা ডিভাইসের চেয়ে কম। সে জন্য দেশীয় উৎপাদনকে সংরক্ষণমূলক সহায়তা দিতে হবে। এই সবকিছু করার আগে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে, গণমাধ্যমে, নাগরিক সমাজে আলোচনা-বিতর্ক হতে হবে।

আরও পড়ুন