দিল্লিতে যখন সমাধান, ঢাকায় কেন সমস্যা

প্যাডেল চালিয়ে রিকশায় মানুষ বহন করা ভয়ংকর পরিশ্রমসাধ্য কাজ। এই হাড়ভাঙা শ্রম সহজ করার জন্যই রিকশার মোটর ঘোরানোর জন্য ব্যাটারির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন কল্লোল মোস্তফা

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিবহনব্যবস্থার একটা বহুল আলোচিত সমস্যা হলো লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি প্রবলেম। সাধারণত মানুষের বাসা বা অফিস থেকে বাস বা মেট্রো স্ট্রেশনের দূরত্ব ৪০০ মিটারের মধ্যে থাকলে মানুষ হেঁটেই যাওয়া–আসা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কিন্তু দূরত্ব যদি এর বেশি হয়, তখন মানুষ বাস বা মেট্রোস্টেশনে যাওয়া–আসা করতে অন্য কোনো বাহনে চড়তে চায়। (বেসিকস: ওয়াকিং ডিসটেন্স টু ট্রানজিট, হিউম্যান ট্রানজিট ডট ওআরজি, ২৪ এপ্রিল ২০১১)

কোনো গণপরিবহনব্যবস্থার পক্ষেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হাবগুলোকে (বাস বা মেট্রো স্টেশন) এমন ঘন ঘন স্থাপন করা সম্ভব হয় না যে তা বেশির ভাগ মানুষের বসতির ৪০০ মিটারের মধ্যে থাকবে। ফলে যাঁদের বসবাস পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হাব থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, তাঁদের মধ্যে গণপরিবহনের বদলে ব্যক্তিগত বাহন ব্যবহারের প্রবণতা থেকেই যায়।

এ কারণেই কোনো গণপরিবহনব্যবস্থাকে সফল হতে হলে লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি সমস্যারও সমাধান করতে হয়। আর বাংলাদেশের মতো অপরিকল্পিত নগরায়ণের দেশে শহুরে গণপরিবহনের এই লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি সমস্যার সস্তা ও পরিবেশসম্মত সমাধানের একটা উপায় হতে পারে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজিবাইক, যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

২০১৭ সালে দিল্লি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটির জন্য ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ই-রিকশা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে মেট্রোস্টেশনগুলোতে রিকশার ব্যাটারি চার্জ করার স্টেশনেরও ব্যবস্থা করে। (দিল্লি মেট্রো টু ইউজ ই-রিকশাজ ফর লাস্ট-মাইল কানেক্টিভিটি, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, ৭ জানুয়ারি ২০১৭)

ফেব্রুয়ারি ২০২০ নাগাদ দিল্লি মেট্রোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়, যেগুলোর মাধ্যমে দিল্লি মেট্রোর ২৯টি স্টেশন থেকে মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। মেট্রোস্টেশনের আশপাশের তিন–চার কিলোমিটারের মধ্যে যাতায়াতের জন্য অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং করে মেট্রো থেকে নেমেই এই ই-রিকশা ব্যবহার করা যায়। (টাইমস অব ইন্ডিয়া, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০)

এ ছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে উবার ভারতের কলকাতায় ৫০০ এবং দিল্লিতে ১০০ ই-রিকশাভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করে। (উবার লঞ্চেস ৫০০ ই-রিকশা অন ইটস প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এফোর্ডেবল লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ১৯ নভেম্বর ২০২০) দিল্লির গণপরিবহনব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে গড় ওঠা একটা ই-রিকশাভিত্তিক স্টার্টআপ হলো ‘ওয়ে! রিকশা’।

আরও পড়ুন

২০১৭ সালে অ্যাপভিত্তিক ই-রিকশা সার্ভিসের এই কোম্পানিটি জানুয়ারি ২০২২ নাগাদ ১০ হাজারের বেশি নিবন্ধিত ই-রিকশার মাধ্যমে ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ ছয়টি নগরে ৬০ লাখের বেশি রাইড প্রদান করে। (ওয়ে! রিকশা টু এক্সপান্ড অপারেশনস ইন ২৫ সিটিজ: ডেপ্লয় ১ লাখ+ ইভি ইন ২০২২, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ১১ জানুয়ারি ২০২২)

২০২১ সালে দিল্লি সরকার বায়ুদূষণ কমানোর উদ্দেশ্যে তিন বছরের মধ্যে পাঁচ লাখ ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করে। আর লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি হিসেবে ৩৫ হাজার দুই/তিন/চার চাকার বাহন এবং ২৫০টি সরকারি চার্জিং ও ব্যাটারি বদলের স্টেশন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়। এই তিন বছরের জন্য সব ব্যাটারিচালিত বাহনের রোড ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন ফিও মওকুফ করা হয়। (ডিএমআরসি ফ্ল্যাগস অব ইটিও ই-রিকশা ফ্লিট ফর লাস্ট-মাইল কানেক্টিভিটি, ইটিঅটো, ইকোনমিক টাইমস, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১)

এ ছাড়া দিল্লিতে ই-রিকশার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছয় হাজার ব্যাটারিচালিত ই-রিকশার মালিককে ৩০ হাজার রুপি করে ভর্তুকি প্রদান করেন। (কেজরিওয়াল রিলিজেস আর এস ৩০,০০০ সাবসিডি ফর ৬,০০০ ই-রিকশা ওনার্স, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৮ জানুয়ারি, ২০২০)

■ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজিবাইক সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

■ বাংলাদেশে কিছুদিন পরপর ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। 

■ প্রাইভেট কারের তুলনায় রিকশা কম জায়গা দখল করে এবং সস্তায় বহু মানুষকে পরিবহন করে।

অথচ বাংলাদেশের সরকার পরিবেশ ও শ্রমবান্ধব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের পৃষ্ঠপোষকতার বদলে কিছুদিন পর পর সেগুলোকে রাস্তা থেকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। যেমন সম্প্রতি রাজধানীতে ব্যাটারি বা যন্ত্রচালিত কোনো রিকশা চলতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে মিরপুরসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকচালকেরা।

আসলে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা দামি গাড়িতে চড়েন, দেশের বেশির ভাগ মানুষের যাতায়াতব্যবস্থার সমস্যাগুলো তাঁদের উপলব্ধির বাইরে। রাজধানী ঢাকায় সাধারণ মানুষ চলাচল করেন কীভাবে?

ঢাকার রাস্তায় যেভাবে বাস চলাচল করে, সেটাকে গণপরিবহনব্যবস্থা বলা মুশকিল। ঢাকায় চলা বেশির ভাগ বাস-মিনিবাস রংচটা ও লক্কড়ঝক্কড়; পেছনের লাইট-ইন্ডিকেটর আর সামনের লুকিং গ্লাস থাকে না এগুলোর। ভেতরে আসনবিন্যাস এমন যে দুই পা মেলে ঠিকঠাক বসারই উপায় থাকে না। সেই সঙ্গে তেল চিটচিটে আচ্ছাদনে গা গুলিয়ে আসে।

বাসগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে হয়। গরমের দিনে ঘামে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। এত কষ্ট সহ্য করতে রাজি থাকার পরও প্রয়োজনের সময় বাস পাওয়া এবং সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য ঢাকার বাসে ওঠানামা এবং ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করা এক বীভৎস অভিজ্ঞতা।

এ রকম একটা পরিস্থিতিতেই কিন্তু মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা করেন। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা প্রাইভেট কারে চড়েন আর যাঁদের সেই সামর্থ্য নেই, তাঁরা দূরের যাত্রায় বাস আর স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় রিকশা ব্যবহার করেন। তা ছাড়া ঢাকার অলিগলিতে চলাচলের জন্য রিকশাই উপযুক্ত যান। 

প্যাডেল চালিয়ে রিকশায় মানুষ বহন করা ভয়ংকর পরিশ্রমসাধ্য কাজ। এই হাড়ভাঙা শ্রম সহজ করার জন্যই রিকশার মোটর ঘোরানোর জন্য ব্যাটারির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা একদিকে হাজার হাজার রিকশাচালকের শ্রমকে সহজ করেছে এবং স্বল্প খরচে মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি ও মেরামতকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে আরও বহুসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান।

মানুষের শ্রমকে সহজ করা এই প্রযুক্তিকে নীতিনির্ধারকদের উচিত ছিল স্বাগত জানানো এবং এগুলো নিরাপদ করার জন্য নানা নিয়মকানুন বেঁধে দেওয়া। তাঁরা নিজেরা তো কিছু করছেনই না, উল্টো কিছুদিন পর পর ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়ার আওয়াজ তুলে লাখ লাখ মানুষের জীবন–জীবিকাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেন।

কোনো প্রযুক্তির যদি মৌলিক সমস্যা না থাকে এবং প্রযুক্তিটি যদি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে সেটার কোনো সমস্যা থাকলে প্রথমে তার সমাধানের কথা বলাই উচিত, পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কথা প্রথমেই আসার কথা না। পুরোপুরি নিষিদ্ধের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন এটা প্রমাণিত হয় যে সমস্যাগুলো সমাধানের অযোগ্য। ব্যাটারির মাধ্যমে যানবাহনের মোটর ঘোরানোর মধ্যে কোনো বিপদ নেই, বরং সারা দুনিয়া সেদিকেই যাচ্ছে।

অথচ এই ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক এবং এগুলোর অনেক উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে, দেশের বাজারে এগুলো বিক্রি হয়েছে, রিকশাচালকেরা ঋণ করে এগুলো ক্রয় করেছেন। এগুলো আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করা হয়নি কিন্তু মাঝেমধ্যেই এগুলো রাস্তা থেকে তুলে দিয়ে এগুলোর ওপর নির্ভরশীল মানুষদের বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে এগুলো বন্ধ করার যুক্তি হিসেবে অনেক সময় রাস্তার যানজট এবং বিদ্যুতের অপচয়ের কথা বলা হয়।

যেই যুক্তিতে রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়, সেই যুক্তিতে ঢাকার রাস্তা থেকে সবার আগে প্রাইভেট কার তুলে দেওয়া উচিত। কারণ, সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রাস্তা দখলকারী যান হলো প্রাইভেট কার।

প্রাইভেট কারের তুলনায় রিকশা কম জায়গা দখল করে এবং সস্তায় বহু মানুষকে পরিবহন করে। যথাযথ গণপরিবহনব্যবস্থা না থাকার কারণেই মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রাইভেট কার বা রিকশা ব্যবহার করেন। গণপরিবহনব্যবস্থা ঠিকঠাক না করে রাস্তায় প্রাইভেট কার চলাচল নিষিদ্ধ করা যেমন অযৌক্তিক হবে, রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়াটাও সে রকম অযৌক্তিক ও অমানবিক।

বিদ্যুতের ব্যবহারের অপচয়ের প্রশ্ন তুললে সবার আগে প্রশ্ন তুলতে হবে এয়ারকন্ডিশন আর শপিং মলের আলোকসজ্জায় বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে। জনগণের করের টাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের জীবিকা ও পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হলে তাকে অপচয় বলার কোনো সুযোগ নেই। আর অবৈধ ব্যাটারি চার্জ বন্ধ করার জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ না করে বরং বৈধভাবে স্বল্প খরচে ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করাই যুক্তিযুক্ত। 

অনেকেই আবার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু ঝুঁকির কারণে একেবারে রাস্তা থেকে তুলে দেওয়ার কথা না বলে ব্যাটারি রিকশার বডির ভারসাম্য বা ব্রেকের ঝুঁকি নিরসনের কথাও তো বলা যেতে পারে।

সেটা না করে একেবারে রাস্তা থেকে তুলে দেওয়ার পক্ষে যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের এই চরম মনোভাবের কারণ কী হতে পারে? তাঁদের ব্যক্তিগত দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা? ব্যাটারিচালিত রিকশার মাধ্যমে চালকদের কী পরিমাণ পরিশ্রম লাঘব হয়েছে, তা উপলব্ধি করার ব্যর্থতা? নাকি শ্রেণিগত এমন অসূয়া যে ‘ছোটলোক রিকশাওয়ালারা’ ‘আমাদের মূল্যবান’ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এ রকম আরাম করে নবাবের মতো রিকশা কেন চালাবেন! 

কোনো প্রযুক্তির যদি মৌলিক সমস্যা না থাকে এবং প্রযুক্তিটি যদি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে সেটার কোনো সমস্যা থাকলে প্রথমে তার সমাধানের কথা বলাই উচিত, পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কথা প্রথমেই আসার কথা না। পুরোপুরি নিষিদ্ধের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন এটা প্রমাণিত হয় যে সমস্যাগুলো সমাধানের অযোগ্য। ব্যাটারির মাধ্যমে যানবাহনের মোটর ঘোরানোর মধ্যে কোনো বিপদ নেই, বরং সারা দুনিয়া সেদিকেই যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

ব্যাটারিচালিত রিকশার জনপ্রিয়তা দেখে সহজেই বোঝা যায় রিকশাচালক ও যাত্রী—উভয়ের কাজে লাগছে বলেই এটা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

হ্যাঁ, ব্রেক কিংবা বডির ব্যালান্স কিংবা চালকের অদক্ষতা বা অসতর্কতার কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা হচ্ছে কিন্তু তা ততটা ভীতি তৈরি করছে না যে মানুষ ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবেন। বরং অনেক নিয়মিত ব্যবহারকারীর মধ্যে এই আকাঙ্ক্ষাটা আছে যে আধুনিক যন্ত্রপ্রকৌশলবিদ্যা কাজে লাগিয়ে এটার ডিজাইনটা যেন উন্নত করা হয়, গতি নিয়ন্ত্রণ করে এর চলাচল যেন নিরাপদ করা হয়। 

আসলে আজকের দিনের বাস, ট্রাক, রেল কিংবা মোটরসাইকেলের যতটুকু নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে, সেটা এক দিনে তৈরি হয়নি, নানা গবেষণা ও পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এ জায়গায় পৌঁছেছে। এরপরও তো এগুলোর কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। কিন্তু এগুলো নিষিদ্ধের দাবি তো কেউ তোলেন না, তাঁরা বরং এগুলোকে আরও নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন/রেগুলেশন তৈরি ও সেগুলোকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করার কথা বলেন। তাহলে ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রেও কেন একইভাবে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির কথা বলা হচ্ছে না, কেন একেবারে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করার কথা বলা হচ্ছে?

যেসব গ্রাম ও মফস্‌সলে গণপরিবহনব্যবস্থা নেই, সেসব স্থানে তো বটেই, এমনকি শহুরে গণপরিবহনব্যবস্থার অন্তর্গত অংশ হিসেবেই ব্যাটারিচালিত রিকশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হলো এলাকাভেদে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, আধুনিক যন্ত্রপ্রকৌশলের মাধ্যমে এগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো, যান্ত্রিক কৌশলে এগুলোর গতি বেঁধে দেওয়া, ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা, চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট স্থানে চার্জিংয়ের ব্যবস্থা করা।

কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক