লোহিত সাগরে অস্থিরতায় বাংলাদেশেরও বিপদ বাড়ছে

ইয়েমেনে হুতি মিলিশিয়াদের লক্ষ্য করে আমেরিকা ও ব্রিটেনের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার এক মাস পার হয়ে গেছে। এ হামলার ফলাফল কী? লোহিত সাগরে চলমান অস্থিরতা কত দিন চলবে? বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে এর কী প্রভাব? এ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন শাকিল আনোয়ার।

ইয়েমেনের সানায় সৌদি দূতাবাসের দেয়ালে স্থানীয়দের আঁকা একটি গ্রাফিতি। এতে দেখানো হয়েছে হুতি যোদ্ধারা ইয়েমেন উপকূলে ইসরাইয়েলি জাহাজ চলাচলে বাধা দিচ্ছেনছবি: রয়টার্স

লোহিত সাগরে চলমান সামরিক তৎপরতা নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ বাণিজ্যিক জাহাজ কোম্পানি মেয়ার্স্কের প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট ক্লার্ক দিন কয়েক আগে যা বলেছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসসহ কয়েকটি পত্রিকার সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লোহিত সাগরে জাহাজের নিরাপত্তা ফিরে আসার কোনো লক্ষণই তাঁরা দেখছেন না। বিশ্ববাণিজ্যে এমন সংকট কোভিড মহামারির পর আর দেখা যায়নি। ক্লার্ক খোলাখুলি মন্তব্য করেন, তিনি মনে করেন না সামরিক অভিযান চালিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজের নিরাপত্তা আদৌ নিশ্চিত করা যাবে। মেয়ার্স্কপ্রধান যা বলেছেন, তা জেনে-বুঝেই বলেছেন।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অক্টোবরের শেষ দিক থেকে ইসরায়েলমুখী বা ইসরায়েলি পণ্যবাহী জাহাজ টার্গেট করে লোহিত সাগরের একদম দক্ষিণে বাব এল-মানদেব প্রণালিতে হামলা শুরু করে হুতিরা। বিপজ্জনক হয়ে পড়ে এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ। গত ১৯ নভেম্বর ‘গ্যালাক্সি লিডার’ নামের ইসরায়েলসংশ্লিষ্ট একটি জাহাজে ‘কমান্ডো অভিযান’ চালিয়ে সেটি ছিনতাই করে ইয়েমেনের উপকূলে নিয়ে যায় একদল হুতি মিলিশিয়া।

এই ছিনতাইয়ের পর থেকেই হুতিদের শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন লোহিত সাগরে তাদের যুদ্ধজাহাজ থেকে ইয়েমেনের নানা জায়গায় হুতিদের সামরিক অবস্থান টার্গেট করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় হুতিদের কয়েক ডজন অবস্থানে হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এক হিসাবে ইয়েমেনজুড়ে হুতিদের ৬০টির বেশি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে।

কিন্তু এতে হুতিরা রণে ভঙ্গ দিয়েছে বা দমে গেছে, তার বিন্দুমাত্র কোনো লক্ষণ নেই। গত সপ্তাহে হুতিরা জানায়, তারা ইয়েমেন উপকূলের কাছে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন একটি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হুতি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, কমপক্ষে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্টার আইরিস’ নামের জাহাজটিকে ‘সরাসরি আঘাত করেছে’। তবে মার্কিন সেনাবাহিনী দাবি করেছে, জাহাজটি গ্রিসের মালিকানাধীন এবং সেটি ব্রাজিল থেকে ভুট্টা নিয়ে ইরানে যাচ্ছিল।

জাহাজটির মালিকানা যাদেরই হোক বা সেটির গন্তব্য যেখানেই হোক না কেন, এই হামলা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে হুতিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টক্কর দিতে এখনো এক পায়ে খাড়া। সৌদি সংবাদপত্র আল শারক আল আসোয়ায় এক সাক্ষাৎকারে হুতি মুখপাত্র আবদুস সালাম আবারও বলেছেন, যত দিন গাজায় আগ্রাসন চলবে, ইসরায়েলমুখী জাহাজেও তত দিন হামলা চলবে।

আরও পড়ুন

হুতিদের শক্তি মাপতে ভুল করেছে যুক্তরাষ্ট্র?

ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের গবেষক মাইকেল হর্টন সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন, বছরের পর বছর সরকারগুলো এবং বিশ্লেষকেরা হুতিদের ‘ক্ষমতা ও দৃঢ়তা ঠিকমতো উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন’। তাঁর মতে, ইয়েমেনের ভেতরে-বাইরে এ মুহূর্তে অন্য কোনো শক্তি হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে রাতারাতি তাদের হারিয়ে দেবে, সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। হুতিদের অবস্থা অনেকটা আফগানিস্তানে তালেবানের মতো।

মাইকেল হর্টনের পর্যবেক্ষণ ফেলে দেওয়া শক্ত। দুই দশকের গৃহযুদ্ধ এবং ২০১৫ সালের পর থেকে সৌদি আরব ও তার মিত্রদের সঙ্গে লড়াই ইয়েমেনি এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে দুর্বল করার বদলে অনেক শক্তিশালী করে তুলেছে।

এখন থেকে ১০ বছর আগে হুতিরা রাশিয়ার তৈরি কাতিউশা রকেট দিয়ে বড়জোর ২০ মাইল দূরে আঘাত করতে পারত। ২০১৬ সালে, অর্থাৎ দুই বছরের মধ্যে তাদের হাতে ৬০০ মাইল পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এসে যায়। সৌদি আরব, এমনকি আবুধাবির অনেক তেল স্থাপনা এখন হুতিদের নিশানার নাগালে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে দুটো বড় তেলখনিতে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উৎপাদন রাতারাতি অর্ধেকে নেমে এসেছিল। তখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল সৌদি আরব।

এরপর অনেকটা বাধ্য হয়ে নিজে উদ্যোগী হয়ে ইরানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহান্মদ বিন সালমান। এখন ওমানের মধ্যস্থতায় হুতিদের সঙ্গে সন্ধি করে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ থেকে নিজের গুটিকে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।

এক সময়কার সেকেলে বন্দুক হাতে দেহাতি পোশাকের হুতিরা এখন রীতিমতো সামরিক শক্তি। প্রায় ৩৫ হাজার ইউনিফর্ম পরিহিত যোদ্ধা রয়েছে এ গোষ্ঠীর। সেপ্টেম্বরে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ করে তারা দেখিয়েছে, তাদের হাতে এখন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে ট্যাংক ও জাহাজ ধ্বংসের ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত রয়েছে। সাগরে মাইন পাতার ক্ষমতা অর্জন করেছে তারা।

এসব হয়েছে ইরানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। আমেরিকার ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির এক গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী হুতিদের এমন সব অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ফলে এখন এই গোষ্ঠী লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে শুরু করে আঞ্চলিক বিভিন্ন দেশের বন্দর ও তেলের স্থাপনায় হামলা করতে সক্ষম।

আরও পড়ুন

হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা

হুতিরা মার্কিনদের ভয়ে পালিয়ে যাবে, সেই সম্ভাবনা নেই। আমেরিকার এই সামরিক তৎপরতায় বরং হুতিদের সুবিধাই হচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। এ সুবিধা রাজনৈতিকভাবে যেমন, তেমনি সামরিক দিক থেকেও হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষজন দেখছেন, বাকি আরব বিশ্ব, এমনকি হিজবুল্লাহ পর্যন্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে নৈতিক ও মৌখিক সমর্থনের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে। কিন্তু হুতিরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলি জাহাজ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ছে এবং আমেরিকার সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর সাহস করেছে। ফলে শুধু ইয়েমেন নয়, পুরো আরব বিশ্বের সাধারণ মানুষের মধ্যে হুতিদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আরব বিশ্বের সর্বত্র নতুন করে মার্কিন বিরোধিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলবিরোধী ‘প্রতিরোধ শক্তি’ বলে কথিত গোষ্ঠীগুলো নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। ইসরায়েলের সমর্থক বলে পরিচিত মার্কিন গবেষণা সংস্থা ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসি (ইউনেপ) ১৪ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সৌদি আরবে একটি জনমত জরিপ চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, হামাসের প্রতি সমর্থন ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে চলে গেছে। ৯৬ শতাংশ সৌদিরা এখন মনে করেন, আরব দেশগুলোর উচিত এখনই ইসরায়েলের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করা।

অনেক আরব দেশের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুতিদের বাহবা দেওয়া হচ্ছে, যা কিছুদিন আগে কল্পনাও করা যেত না। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নতুন ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইরান-সমর্থিত এই মিলিশিয়া গোষ্ঠী। জনমতের এ চিত্র আরব দেশগুলোর শাসকদের জন্য একবারেই স্বস্তির নয়।

সামুদ্রিক নিরাপত্তা গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ডাইয়াড গ্লোবাল তাদের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলেছে, দুর্বল হওয়ার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা হুতিদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা কি এগুলো বোঝেননি বা ভাবেননি?

বাইডেন সরকারের লোকজন বলার চেষ্টা করছেন, যেভাবে লোহিত সাগর পণ্য পরিবহন, বিশেষ করে, জ্বালানি তেলের পরিবহন হুমকিতে পড়েছে, তাতে চুপ করে বসে থাকার কোনো উপায় ছিল না। ঝুঁকি তাদের নিতেই হতো। তাদের কথা, হুতিদের নিশ্চিহ্ন করা নয়, বরং নিয়ন্ত্রণে রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য, যাতে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখা যায়।

লোহিত সাগর নিয়ে এত তোলপাড় কেন

লোহিত সাগর ও আরব সাগরের মধ্যে সংযোগকারী মাত্র ১৭ নটিক্যাল মাইল প্রশস্ত বাব এল-মানদেব প্রণালি নিয়ে এত উদ্বেগ কেন? কারণ, এ জলপথ এশিয়া, ইউরোপ আর আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যের সবচেয়ে সহজ ও সস্তা পথ। এশিয়া থেকে এ পথ অতিক্রম করে ঢুকতে হয় সুয়েজ খালে। তারপর ভূমধ্যসাগরে ঢুকে আটলান্টিক হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে হয়।

বিশ্বের ১২ শতাংশ বাণিজ্য এ নৌপথে। বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোর জ্বালানি তেল ইউরোপ ও আমেরিকায় যাওয়ার প্রধান রুট এটি। প্রতিদিন গড়ে ৮০ লাখ ব্যারেলের বেশি অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য পরিবহন হয় এই পথ দিয়ে। নভেম্বর থেকে এ পথ এড়িয়ে চলছে সিংহভাগ জাহাজ। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবহনের খরচ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। প্রতি কনটেইনারে ৫০০ থেকে ৩ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত সারচার্জ বসাচ্ছে জাহাজ কোম্পানিগুলো।

লোহিত সাগরে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মহলেও উদ্বেগ দেখা গেছে। কারণ, তাঁদের মূল বাজার আমেরিকা ও ইউরোপ। সেখানে পণ্য পাঠাতে খরচ ও সময় বেড়েছে। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সম্প্রতি জাপানের সংবাদপত্র নিকেই বাংলাদেশের একটি তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের মালিককে উদ্ধৃত করে লিখেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর তাদের ব্যবসা যে সংকটে পড়েছিল, লোহিত সাগরে অস্থিরতা তার চেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে। গত দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার বন্দরগুলোতে পৌঁছানোর জাহাজভাড়া ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শেষ কোথায়

লোহিত সাগরে সৃষ্ট এ সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? সামরিক পন্থা যে কোনো সমাধান নয়, তা নিয়ে এখন খুব বেশি বিতর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রও এটা বুঝতে পেরেছে। এ জন্য তারা এখন বলছে, তাদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য এ জলপথের নিরাপত্তা বজায় রাখা, কাউকে শায়েস্তা করা নয়। উপসাগরীয় আরব দেশগুলো, বিশেষ করে, সৌদি আরব এ অঞ্চলে এখন কোনোভাবেই নতুন করে অস্থিরতা চায় না। সৌদিদের ভয় হলো, এখন বড় কোনো ঝামেলা শুরু হলে হুতিদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া ভেস্তে যেতে পারে।

অন্য পথ হচ্ছে কূটনীতি। হুতিদের সঙ্গে বোঝাপড়া করা বা সমঝোতায় পৌঁছানো। কিন্তু মধ্যস্থতা কে করবে? ইরান ছাড়া কার্যত কেউই তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। সামরিক অভিযান শুরুর আগে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কথা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। কিন্তু হুতিদের ওপর তেহরানের তাদের প্রভাব আসলে কতটা, তা নিয়ে অনেক পর্যবেক্ষকের সংশয় রয়েছে। ইরান এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সংঘাত চায় না। কিন্তু হুতিদের তৎপরতা দেখে অনেকেই বলছেন, এই মিলিশিয়া গোষ্ঠী খুব সম্ভবত নিজেদের সিদ্ধান্তমতোই কাজ করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভিত্তিক একটি জোট করে হয়তো হুতিদের প্রচণ্ড চাপে ফেলা যেত। কিন্তু একমাত্র বাহরাইন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে কেউই সাড়া দেয়নি। ঘরের পাশে নতুন করে সংঘাতের বিস্তৃতি তারা চাইছে না। অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হুতিদের প্রধান শর্ত। কিন্তু ইসরায়েল যে সেই পথে যাবে, তার কোনো লক্ষণ নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কথাও তারা কানে নিচ্ছে না।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ইয়েমেনের পরিস্থিতি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কাজের হতে পারে। ইয়েমেনের যুদ্ধে হুতিরা যে জিতেছে, তা নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক এখন নেই। তারাই ইয়েমেনের বৈধ নেতৃত্ব—হুতিরা এখন এ স্বীকৃতি চাইছে। কিন্তু ইরানের ঘনিষ্ঠ একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে বৈধতা দিতে কি আমেরিকা রাজি হবে? তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একপর্যায়ে কথা বলেছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের মেনে নিয়েছে। হুতিদের ক্ষেত্রেও কি তেমন কিছু হতে পারে? ইসরায়েল বা সৌদি আরব কি তাতে সায় দেবে?

এগুলো অনেক জটিল ও কঠিন প্রশ্ন। এসবের উত্তর পেতে সময় লাগবে। কিন্তু এসব প্রশ্নের সমাধান না হলে এবং লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য বিপন্ন থাকে, তাহলে তা হবে বিশ্বের জন্য চরম দুঃসংবাদ।

  • শাকিল আনোয়ার সাংবাদিক