শিক্ষকদের যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার কী হলো

দফায় দফায় আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। দাবি পূরণের আশ্বাস পেলেও নিরাশ হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জীবন যেন পোশাকশ্রমিকদের জীবনের মতো হয়ে গেছে। দেশে পোশাকশ্রমিকদের যেমন বেতন বাড়ানো, সময়মতো বেতন পাওয়ার, সময়মতো ঈদ বোনাস, ভাতা পাওয়ার আন্দোলন করতে হয়; ঠিক তেমনই সংগ্রাম করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও জাতীয়করণ হয়নি।

এই শিক্ষকদের আহাজারি শোনার কেউই নেই। শিক্ষকেরা হচ্ছেন শিক্ষা উৎপাদনের মূল স্রষ্টা, শিক্ষকেরা মনপ্রাণ দিয়ে শিক্ষাগত পেশাকে উপাসনা হিসেবে নেন। সেই শিক্ষকেরা রাষ্ট্র থেকে সামান্য প্রাপ্য সম্মানটুকুও পেতে পারেন না?

এমন নির্বিকার অবস্থা যে বেতন-স্বল্পতায় শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য করতে হয়, অনেক শিক্ষককে অসৎ হতে হচ্ছে। মাধ্যমিকের বেশির ভাগ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললেই উপার্জনের এসব দৃষ্টিগোচর পথ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। শিক্ষকদের কেন উপার্জনের দৃষ্টিগোচর পথ অবলম্বন করতে দেখতে হয়? শিক্ষকদের কেন অসৎ পথে উপার্জন করতে হয়?

তাহলে বুঝতে হবে, এসব বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জীবন কি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন দীর্ঘদিন। সরকার সে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছিল, কিন্তু আশ্বাসের কোনো আস্থা শিক্ষকেরা পাচ্ছেন না।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষক হিসেবে পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পূর্ণ করা। স্বল্প বেতনে যা কল্পনা করাই অসম্ভব বর্তমান বাস্তবতায়।
 যে শিক্ষকেরা সারা জীবনের সম্পূর্ণ মেধা, শ্রম নিবেদন করে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বকে সৃষ্টি করেন; আবার সেই শিক্ষকদেরই অসৎ পথ, অসৎ উপায়, দৃষ্টিগোচর পদ্ধতি অনুসন্ধান করতে হচ্ছে।

বেতন-স্বল্পতা, প্রাপ্য মর্যাদা না পাওয়ার বঞ্চনা থেকে শিক্ষকেরা এমন চরিত্রে রূপান্তরিত হয়েছেন।

উপায় না পেয়ে যখন আন্দোলন, সংগ্রাম করেছেন; তখন শিক্ষকদের পেটানো হলো, আশ্বস্ত করা হলো, সমঝোতা করা হলো। কিন্তু সমাধান কিংবা সম্মান, কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষকদের বেতন বাতা, ঈদ বোনাস সময়মতো না পাওয়ার আহাজারি এখনো শুনতে হয়, শোনা যায়।

আরও পড়ুন

বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন দীর্ঘদিন। সরকার সে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছিল, কিন্তু আশ্বাসের কোনো আস্থা শিক্ষকেরা পাচ্ছেন না।

শিক্ষকেরা রীতিমতো কাতরাচ্ছেন। বেসরকারি এসব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় সরকার থেকে সামান্য ভাতা পেয়ে থাকে, যা খুবই নগণ্য।

অথচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। পাশের দেশ ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন ৩৩,৪০০ টাকা। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল কিংবা ভুটান—এসব দেশে শিক্ষায় বরাদ্দ থাকে জিডিপির অন্তত ৪ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ হয়, যা দিয়ে পরিকল্পিত শিক্ষার আয়োজন কিংবা শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা দুষ্কর।

শিক্ষকদেরও পারিবারিক, সামাজিক জীবন রয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতাও বেশি। কিন্তু শিক্ষকদের সে সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয়।

সুতরাং, সরকারকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও জাতীয়করণ নিয়ে পরিষ্কার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

মানসম্পন্ন বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে সময়মতো সে বেতন-ভাতা শিক্ষকদের হাতে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দিয়ে বেসরকারি এসব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের উদ্যোগ নিন।

মারুফ হাসান ভূঞা
মিরপুর, ঢাকা