চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলে সিট যেন সোনার হরিণ

উদ্বোধনের দেড় বছর পার হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য নির্মিত নতুন আবাসিক হলটি চালু হয়নি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়াকে সৌভাগ্য মনে করা হয়। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেই যেন উচ্চশিক্ষার একটি দ্বার উন্মোচিত হলো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কিছু বলে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ২ হাজার ১০০ একরের বিশাল ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের থাকার জায়গা কতটুকু আছে, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। এই ক্যাম্পাসে চারটি পূর্ণাঙ্গ ছাত্রী হল এবং একটি আলাদা ছাত্রী ব্লক রয়েছে এবং নতুন একটি হল চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বাইরে থেকে সবকিছুই খুব পরিপাটি দেখালেও এর ভেতরে রয়েছে বেদনাদায়ক বাস্তবতা।

সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন, যার মধ্যে বড় অংশ নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই আশা থাকে হলে সিট পেয়ে তুলনামূলক সাশ্রয়ীভাবে পড়াশোনা করার জন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাওয়ার থেকে ছাত্রী হলে সিট পাওয়া বেশি কঠিন। স্নাতকের চার বর্ষে এসেও অনেক শিক্ষার্থী হলে সিট পান না।

ডিপার্টমেন্ট থেকে বরাদ্দকৃত হলে একটি সিট পেতে ক্লাস, পরীক্ষা বাদ দিয়ে দিনের পর দিন হলে ধরনা দিতে হয়। প্রভোস্ট, হাউস টিউটরদের হাতে-পায়ে ধরে হাজার অনুরোধের পরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দিন শেষে একই উত্তর পাওয়া যায়, ‘হলে সিট খালি নেই।’ কিন্তু এর অন্য দিকে কোনো রাজনৈতিক ‘বড় ভাই’ অথবা ‘বড় আপু’র রেফারেন্স নিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গেই সিট নিশ্চিত হয়ে যায়। এভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য সিট চলে যায় অন্য কারও হাতে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন বাসায়। ফলে ক্ষেত্রবিশেষে মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়, যেটা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য দুর্বহ।

আরও পড়ুন

বর্তমান উচ্চ দ্রব্যমূল্যের সময়ে অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসা বা কটেজে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন, যাঁদের জন্য হলে সিট পেলে জীবন তুলনামূলক সহজ হয়ে যেত। পড়াশোনা ও ভালো ফলাফল করতে সেটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতো।

হলগুলোতে চলমান এসব অরাজকতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা জানলেও তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। অনিয়মটাই এখানে অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠেছে। এ রকম একটি বিষয় বছরের পর বছর চলে আসছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর প্রাপ্য অধিকার প্রাপ্তি এবং উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করার জন্য এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি সঠিক অনুসন্ধান এবং সমাধান অতিজরুরি হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
একজন ভুক্তভোগী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস