আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন চাই

প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ-সহিংসতা বেড়ে চলেছে। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় গোটা নাগরিক সমাজ। নারীরা যখন মেধা, মনন ও সৃজনশীলতায় এগিয়ে চলছেন, তখনই ক্রমবর্ধমান হারে ধর্ষণ-সহিংসতা তাঁদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে যে ধর্ষণ সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশে যে পরিমাণ ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, সে তুলনায় বিচারের হার অতি নগণ্য। আবার ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়, তবু যতটুকু প্রকাশ পায়, সে ধর্ষণেরও বিচার তো দূরে থাক, উল্টো ভিকটিমকেই নানা রকম হেনস্তার শিকার হতে হয়। ধর্ষণের পক্ষে দেশে শক্ত আইন রয়েছে বটে কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে কার্যত সে আইন বাস্তবায়ন হয় না। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্যমতে, ধর্ষণের পর ৯০ শতাংশ আসামি চূড়ান্ত বিচারের আগেই খালাস পেয়ে যায়। আইনে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ৯০ কার্যদিবস ও বিচার ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে হওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলার তদন্তের চার্জশিট সঠিক সময়ে দেওয়া হয় না, মেডিকেল রিপোর্টে গরমিলসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা বছরের পর বছর বাড়ানো হয়।

আর এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভিকটিম পুলিশ ও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে হতাশ হয়ে একসময় হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তা ছাড়া পক্ষপাতদুষ্টতা ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের নজিরও অজস্র। ফলে পার পেয়ে যায় আসামিরা। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবার নতুন কোনো অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে আসামিরা।

গোটা দেশ আজ উত্তাল ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু শুধু আইন করে কিংবা বিদ্যমান আইনের সংশোধন এনে কখনোই ধর্ষণ রোধ সম্ভব নয়, বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তা বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে।

আমরা চাই সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠতে শুরু করেছে, তা বন্ধ করতে অনতিবিলম্বে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক এবং একই সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনটি দ্রুত কার্যকর করা হোক। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে ধর্ষণ-সহিংসতা কখনোই বন্ধ করা যাবে না। তাই মামলার তদন্ত ও বিচারে কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলের স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছাও নিশ্চিত করতে হবে।

মোহাম্মদ শাহিন

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]