একটি সিটের বিনিময়ে স্বপ্ন বিক্রি কোরো না, কাকে ইঙ্গিত করলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বেশ আলোচনা। কাকে ইঙ্গিত করে তিনি এই পোস্ট দিয়েছেন, তা নিয়ে কৌতূহলী অনেকে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বন্ধু, তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন আর পতাকা একটা সিটের বিনিময়ে বিক্রি করে দিও না।’
এরপরই শুরু হয় আলোচনা। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘একটা দলের নেতারা দিনের বেলায় হাঁকডাক ছাড়ে, দিনভর বিএনপিরে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে; আর রাতের বেলায় বিএনপির নেতাদের বাসায় গিয়ে ধরনা দেয়! মিডিয়ায় গলাবাজি করা আপসহীন ওই নেতা এবং তাঁর ইমাম সাহেব গত পনেরো দিনে বিশটা সিটের জন্য বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন সাহেবের বাসায় তিনবার মিটিং করেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের বাসায় ধরনা দিয়েছেন এখন পর্যন্ত একবার!’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন দলগুলো নিচ্ছে, জোট গঠনের আলোচনাও যখন চলছে, তখন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের কাতারে থাকা এই দুজনের পোস্ট তাঁদের পুরোনো সহযোদ্ধাদের নিয়ে, এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক বাক্যে পোস্ট শেষ করলেও আবদুল কাদের দিয়েছেন দীর্ঘ বক্তব্য। তিনি লিখেছেন, ‘আসন সমঝোতায় বেটার নেগোসিয়েশনের কৌশল হিসেবে এমন উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন ওই তথাকথিত আপসহীন নেতা। আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে ওই নেতা আবার সেটা বলেও বেড়াচ্ছেন। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের পরের চিত্র কেমন ছিল! পুরানা রাজনৈতিক দলগুলা তরুণদের কাছে আসবে, তরুণ থাকবে ড্রাইভিং সিটে। কিন্তু খোদ ইমামরা গিয়ে বসে থাকেন বিশটা সিটের জন্য! আসন ভাগানোর কৌশল হিসেবে মিডিয়ায় গালিগালাজ করে বেড়ান; বাসায় গিয়ে বসে থাকেন; তবু আসন মিলে না! হা হা হা...’
জুলাইয়ের রাজপথের সেই সঙ্গীদের দিকে ইঙ্গিত করে কাদের যোগ করেন, ‘বন্ধু বন্ধু বলে একদিকে ব্ল্যাকমেইল করে; অন্যদিকে মাইনাস করে। গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে দল কুক্ষিগত করে। মনোভাব এমন যে নিজের আসনসহ চাহিত আসন নিশ্চিত হইলে তথাকথিত আপসহীন নেতাদেরও বিক্রি হইতে সমস্যা নাই। কিন্তু তাদের মাইনাস আর অপরাজনীতির শিকার কেউ স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেই তাদেরকে লাল টুকটুকে স্বপ্ন বিক্রির অপবাদ দেওয়া হবে। যেই ২০ জনের জন্য সিট চাওয়া হয়েছে, সেই তালিকাটা এখন আর দিলাম না। দলের ক্ষমতা কুক্ষিগত, মাইনাসের রাজনীতি আর কোরামবাজির বাজে অবস্থা দেখলে দলের বাকিদেরও ঘুম ভাঙবে।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও আবদুল কাদেরের দুটি পোস্ট নিয়েই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়। রাতেই তিনি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ট্যাগ করে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রতিপক্ষের নাম সরাসরি মুখে নিয়ে সমালোচনা করতে (নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী) দ্বিধা বা ভয় নেই—কিন্তু একটি সিটের জন্য কোন বন্ধু লাল টুকটুকে স্বপ্ন ছাড়ল তাঁর নাম মুখে নিলেন না। ইশারায় কোন বন্ধুকে বোঝালেন তিনিই জানেন। তবে নাসিরের এক স্ট্যাটাসেই ঘরের বন্ধু কিংবা বাহিরের বন্ধু সবাই চাপে। সবাই সবার মতো করে উত্তর দিচ্ছে। বিষয়টা দর্শক হিসেবে দেখতে পারার মধ্যে আনন্দই আছে।’
আবদুল কাদেরের এই পোস্ট আজ সকালে ফেসবুকে শেয়ার করেন অনিক রায়। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘তাহলে কি দিনে বিপ্লব আর রাতে নেগোসিয়েশন???’
ফেসবুকে কেউ কেউ লিখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়েই নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ফেসবুক স্ট্যাটাস।
আসিফ মাহমুদ গত রোববার ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। ঢাকা থেকেই যে নির্বাচন করবেন, সেটাও মোটামুটি নিশ্চিত।
জুলাই আন্দোলনে নিজের সহযোদ্ধারা এনসিপি গড়ে ভোটের পথে এগোলেও সেই দলে যোগ দেবেন কি না, আসিফ মাহমুদ নিশ্চিত করেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার। তারপর দেখা যাক।
বিএনপি যেসব আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা-১০ আসন রয়েছে। তবে এনিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ।
বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আসন ভাগাভাগির আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে। তবে এনসিপি নেতারা তা অস্বীকার করে আসছেন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুরে দলের এক সভায় বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়ার সম্ভাবনা নাকচ করে বলেন, ‘ইতিমধ্যে যাদের ঘাড়-কোমর চাঁদাবাজির টাকায় এখন ভারী হয়ে আছে; মামলা-বাণিজ্যের প্রেশারে যাঁরা এলাকায় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন ইতিমধ্যে...প্রতি পাড়া, জেলা, মহল্লায় চাঁদাবাজির রমরমা বাণিজ্য যারা কায়েম করেছে, তাদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনের চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’