‘নানি গো,... একটা ভোট দিও...’
রাজধানীর পোস্তগোলার খুব কাছেই শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-৪ আসনের এই কেন্দ্রে একজন মধ্য বয়স্ক নারী ভোট দিতে আসেন। ফটক দিয়ে কেন্দ্রের ভেতর ঢোকার মুহূর্তেই এক ব্যক্তি ওই নারীকে দেখে সুরে সুরে বলতে থাকেন—‘নানি গো, নৌকা মার্কায় একটা ভোট দিও।’
ওই ব্যক্তি নিজের গলায় জড়ানো নৌকা মার্কার প্রতীক দেখিয়ে আবারও একই সুরে গাইতে থাকেন। পরে আরেকজন নারী ওই বয়স্ক বয়স্ক নারীর হাত ধরে সুরে সুরে বললেন, ‘নানি গো, লাঙ্গল মার্কায় একটা ভোট দিও।’
এরপর ওই নারী ভোট দিতে কেন্দ্রে ঢুকে যান। ভোট দেওয়া শেষে ওই নারী যখন বের হলেন, তখন নৌকা মার্কার সমর্থক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোটটি দিয়েছেন তো, নানি গো।’ এ সময় নৌকা মার্কার সমর্থকরা বলেন, নানি নৌকার লোক। নৌকা মার্কায় নানি ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে ওই নারীকে দেখে জাতীয় পার্টির আরেকজন নারী বললেন, ‘নানি লাঙ্গলের লোক। নানি লাঙ্গলেই ভোটটি দিয়েছেন।’ এরপর ওই নারী ভোটকেন্দ্র এলাকা ছেড়ে যান।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। তখন নৌকা মার্কার একজন একজন ওই ভোটারকে বলেন, ‘জিতবে এবার নৌকা, নৌকা। নৌকায় ভোটটি দেবেন।’ এরপরই লাঙ্গল মার্কার একজন সমর্থক ওই ভোটারকে দেখে বলতে থাকেন, ‘জিতবে এবার লাঙ্গল, লাঙ্গল...।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না। তবে শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভেতর প্রার্থীর লোকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রবেশ পথে নৌকা মার্কার প্রার্থী আইনজীবী সানজিদা খানমের সমর্থকেরা অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে অবস্থান নিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সমর্থকেরা।
এ ছাড়া সেখানে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনের লোকজন। প্রত্যেকটি ভোটার যখন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন, তখন নৌকা প্রার্থীর লোকজন সানজিদা খানমকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। একইভাবে লাঙ্গল প্রতীকের সৈয়দ আবু হোসেনকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁর লোকজন।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকার প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ। আর লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন জাতীয় পার্টির নেতা সুলতানা আহম্মেদ।
ভোটের দিন ভোটারকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে এখানে ভোট হচ্ছে। আমরা নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য বলছি এটি সত্য। ভোটাররা যে যার মতো করে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। আমরা, লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন মিলেমিশে এখানে অবস্থান করছি।’
জাতীয় পার্টির নেত্রী সুলতানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মিলেমিশে এখানে অবস্থান করছি। ভোটারের কাছে ভোট চাচ্ছি। নৌকার প্রার্থীর পক্ষের লোক ভোট চাচ্ছেন নিজেদের জন্য। আর আমরা চাচ্ছি লাঙ্গলের প্রার্থীর পক্ষে।’
শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭৫। সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ২৯৮টি। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে এখানে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। তবে স্কুলে প্রবেশ ফটকের সামনে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য প্রার্থীর লোকজন অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশ সদস্যরা তাঁদের সরে যেতে বললেও তাঁরা শোনেননি।’