সাক্ষাৎকার: আন্দালিভ রহমান

নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখি না

জুলাই জাতীয় সনদ, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের

প্রথম আলো:

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ প্রস্তাবকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: পজিটিভলি দেখি। অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়া উচিত। এখানে অনেকে আছে। আমি নিশ্চিত, এটা আরও ছোট হয়ে যাবে। রুটিন কাজ করবে। সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনমুখী হওয়া অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ হবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

সেই সাক্ষাতে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে সরকারের একজন উপদেষ্টা ও অধ্যাপক ইউনূসের একজন বিশেষ সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বিএনপির পরে সাক্ষাৎ করেছে জামায়াত। তারা নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি দলের পক্ষ হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছে। উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি এমন অভিযোগকে কীভাবে দেখেন?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: আসিফ বলেন বা যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে এনসিপির একটা সম্পর্ক আছে। কোনোভাবেও যেন পরবর্তী কেয়ারটেকার সরকার যেটা হবে, সেটা যেন পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, সেটা তো অবশ্যই জাতি দেখতে চায়। আমি মনে করি, তাঁদের সরকার থেকে পদত্যাগ করা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলেও এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। এটি কোনো সংকট তৈরি করতে পারে কি না?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: না, আমি সংকট দেখি না। আসলে কোনো একটা ব্যাপারে সব দল একমত হবে—এটা আশা করাও ঠিক নয়। জুলাই সনদ আসলে একটা স্পিরিটের ব্যাপার। এত বড় একটা স্বৈরাচার সরকার পতনে এতগুলো মানুষ জীবন দিয়েছেন। তাই এটা আমরা সবাই ধারণ করি এবং এটা সম্পূর্ণ মাইন্ডসেটের ব্যাপার। আমি মনে করি, এর মধ্যে অনেক কিছুই আছে। প্রতিটি দল হয়তো পছন্দ করবে, অনেকে করবে না। এটাই হওয়া স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখেন কি?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: না, আমি কোনো শঙ্কা দেখি না। আমরা নির্বাচনমুখী। আমরা মনে করি, সরকার এখন নির্বাচন দেবে এবং সেটা বিশ্বাস করি। জনগণও সেটা বিশ্বাস করতে চায়।

কোনোভাবেও যেন পরবর্তী কেয়ারটেকার সরকার যেটা হবে, সেটা যেন পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, সেটা তো অবশ্যই জাতি দেখতে চায়।
প্রথম আলো:

বিএনপির দিক থেকে নির্বাচনের বিষয়ে আপনি কোনো সবুজ সংকেত পেয়েছেন কি? পেলে কোন আসনে নির্বাচন করবেন?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: না, আমরা অন্য দল। এখানে কোনো ইঙ্গিত বা সিগন্যালের ব্যাপার নেই। আমাদের দলে একাধিক প্রার্থী আছেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বসব, নেগোশিয়েট করব। আমাদের জয়ী হওয়া বা বিএনপির জয়ী হওয়া নয়, আমাদের জাতীয়তাবাদী শক্তির যে ভালো প্রার্থী, জনগণের জন্য যারা কাজ করবে, আমার বিশ্বাস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করার, জাতীয় সরকার বা সংসদে নিয়ে যাওয়ার যে ইনক্লুসিভ মানসিকতা আছে, এটাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। আমি মনে করি, সেটার আলোকে যাঁরা যোগ্য প্রার্থী, তাঁদের সুযোগ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

কোথায় প্রার্থী হবেন?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: আমরা আমাদের দল থেকে ভোলা সদর আসন এবং ঢাকা–১৭ আসন থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করি।

প্রথম আলো:

২০০৮ সালে সীমানা নির্ধারণের পরে এই আসনে বিএনপি কখনো জিততে পারেনি। ২০১৮ সালে আপনি বিএনপির নমিনেশন পেয়েছিলেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি। এবার নির্বাচনে কেমন প্রত্যাশা আছে? অন্য কাউকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন কি না?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বীকে আমি মনে করব ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী। কাউকে ছোট করে দেখার প্রশ্ন আসে না। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের বিশ্বাসের জায়গায় যেতে হবে। একটা বড় জনগোষ্ঠী, মনে হয় প্রায় পাঁচ কোটি, প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে। অনেক বড় এক্সপেক্টেশন। আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। ডোর টু ডোর হবে এবং ইনশা আল্লাহ, আল্লাহ যদি চায়, যদি দায়িত্ব দেয়, তাহলে ভালোই হবে আশা করি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

আরপিও সংশোধন না হলে দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। সেটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন কি না?

আন্দালিভ রহমান পার্থ: ধানের শীষ তো খুবই শক্তিশালী প্রতীক। নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমিসহ প্রত্যেক প্রার্থীরই ভোটার এবং নেতা–কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করাটা একটু কঠিন হবে এটা সত্যি। ছোট ছোট দল যাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা আছে কিন্তু হয়তো ভোটে অবস্থান নেই বা কর্মী সংকট আছে, তাদের জন্য ধানের শীষ পাওয়াটা তো অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার।

প্রথম আলো:

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে অনেকে অভিযোগ করেন। আপনি কী মনে করেন?

আরও পড়ুন

আন্দালিভ রহমান পার্থ: আমার মনে হয়, এটি নিয়ে কথা বলার সময় এখনো হয়নি। কারণ, এখনো তো অনেক কিছু বদলায়নি, প্রশাসনিক অনেক ব্যাপার আছে। এটা বোঝা যাবে নির্বাচনের তফসিলের পরে যে আসলে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের অবস্থা কী হচ্ছে, কী হচ্ছে না। এটা নির্বাচনী আসনগুলোর ওপরও নির্ভর করবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

আন্দালিভ রহমান পার্থ: আপনাকে ধন্যবাদ, প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।