সাক্ষাৎকার: সাইফুল হক

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি নির্বাচন, সংস্কার ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার

প্রথম আলো:

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। এই মুহূর্তে এমন প্রস্তাবকে কীভাবে দেখেন?

সাইফুল হক: যেসব উপদেষ্টার জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তাঁরা বিশেষ কোনো দিকে ঝুঁকে থাকলে এগুলো থেকেও বেরিয়ে আসা দরকার। সরকারের নিরপেক্ষতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে, তাহলে গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই আমরা দেখতে চাইব যে সরকার খুবই দ্রুত এসব ব্যাপারে দৃশ্যমান, কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্যতার উদ্যোগ নেবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে একজন উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপও চেয়েছে। বিএনপির পর জামায়াতে ইসলামীও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছে, কিছু লোক প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করেন এবং তাঁরা কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করেন। উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি এমন অভিযোগ কি সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করছে না?

সাইফুল হক: এসব অভিযোগের মধ্যে একধরনের রাজনীতি আছে। আরেকটি দিক হলো এসব অভিযোগের পেছনে কিছু সত্যতাও আছে বলে মানুষের ধারণা। এ ব্যাপারে সরকারপ্রধানের (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) ভূমিকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনিসহ তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অংশীজনদের যদি এ ধরনের আপত্তি-সমালোচনা থাকে, সরকার কিন্তু পদে পদে হোঁচট খেতে পারে, বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিপদ থাকবে। এর সমাধান নির্ভর করছে প্রধান উপদেষ্টার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ওপর। ছাত্র উপদেষ্টাদের বহু আগেই অব্যাহতি নেওয়ার কথা ছিল। একজনের ব্যাপারে তো অনেক বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছে। যেসব অভিযোগ এসেছে, তাতে নৈতিক অবস্থান বুঝে তাঁদেরই সরকার থেকে সরে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

জুলাই জাতীয় সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দল বিতর্কে জড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতি কি নতুন কোনো সংকট তৈরি করতে পারে?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের উপযোগী নয়।

সাইফুল হক: যেটা অধিকাংশ রাজনৈতিক দল চেয়েছে, সেই অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিনে যদি গণভোট হয়, আমার মনে হয় সব দিক থেকে এটা বিবেচনাপ্রসূত হবে। এতে একদিকে সময় বাঁচবে। আর ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে এত বড় একটা আয়োজন করা বাস্তবে সম্ভব নয়। এটা করতে গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর এটা নিয়ে বিভক্তি তৈরি হতে পারে; তখন সন্দেহ-অবিশ্বাস নতুন মাত্রা নেবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করতে চাইছে। এখন যে ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন কতটা সম্ভব হবে বলে মনে করেন?

সাইফুল হক: আমার আশঙ্কা আছে। একটা হচ্ছে, বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের উপযোগী নয়। ফলে এখানে একটা ঝুঁকি আছে। দ্বিতীয় ঝুঁকি হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দিতা রাজপথে সহিংসতায় পর্যবসিত হতে পারে। এলাকা, অঞ্চল বা রাজপথ দখলের প্রতিযোগিতার কিছু নমুনা আমরা সারা দেশে দেখছি। এটা বাড়তে থাকলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে।

পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, জনগণ ও ভোটার—এদের একটা সম্মিলিত অর্কেস্ট্রার মতো। সরকার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাসহ যদি সবাইকে আস্থার মধ্যে নিয়ে চেষ্টা করতে পারে, তাহলে কিছু কিছু ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা যাবে। সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কিন্তু বিপদ বাড়বে, নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সরকার যদি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করে বেরিয়ে যেতে পারে, নানা সমালোচনার পরও মানুষ ধন্যবাদ জানাবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

যেসব দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, তাদের মধ্যে কিছু দলের শীর্ষ নেতাকে বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবুজ সংকেত দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আপনি কোনো সংকেত পেয়েছেন কি?

সাইফুল হক: বিএনপির সঙ্গে নানা প্রশ্নে আমাদের একধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়া আছে। নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে দলের ২১ জন প্রার্থীর একটা তালিকা তৈরি করেছি, যা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও আসবে। আমার ক্ষেত্রে দল ঢাকা-৮ আসন ঠিক করেছে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল এবং এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ—এই ৯টি দলের মধ্যে নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে, এমন আলোচনা ছিল। এটা কতদূর এগোল?

সাইফুল হক: এটা আমার মনে হয় এখন বেশ কঠিন; কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা আলাপ-আলোচনা আছে। আমরা চেষ্টা করছি, গণতন্ত্র মঞ্চ আর এই তিনটি দলের সঙ্গে একটি বৈঠক করার জন্য। এর বাইরেও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক বা উদারনৈতিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে আমরা একটা আলাপ-আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

সাইফুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।