স্রষ্টা ও সৃষ্টি কি এক হতে পারে

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সাহাবি জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) একবার বলেছিলেন, ‘আমি ছিলাম ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর শত্রুদের একজন। আমি তাঁকে সবার চেয়ে বেশি ঘৃণা করতাম। একদিন আমি মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। মহানবী (সা.) তখন পবিত্র কোরআন থেকে সুরা তুর তেলাওয়াত করছিলেন, ‘তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা? নাকি তারা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা নিশ্চিত নয়।’ (সুরা তুর, আয়াত: ৩৬)

জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, ‘যদিও আমি এ ঘটনার অনেক পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু সেদিনই প্রথম আমার অন্তরে ইমান ঢুকেছিল।’

পৃথিবীর মতো এই জটিল সৃষ্টি কখনো আপনাআপনি হতে পারে না। আবার আমরা মানুষেরা মিলে পৃথিবী সৃষ্টি করিনি। এর মানে হলো, অবশ্যই কোনো না কোনো একজন স্রষ্টা আছেন। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। এটাই যৌক্তিক চিন্তা, যা অনেকেই করতে ব্যর্থ হন।

আরও পড়ুন

সুরা আহকাফে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো, তাদের বিষয়ে চিন্তা করে দেখেছ কি? দেখাও আমাকে তারা পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করেছে অথবা আকাশমণ্ডলে তাদের কোনো অংশীদারত্ব আছে কি? এর আগের কোনো কিতাব অথবা পরম্পরাগত কোনো জ্ঞান আমার কাছে উপস্থিত করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ৪)

এই আয়াত মূলত আরব ও তার আশপাশে বসবাসকারী মূর্তিপূজারিদের উদ্দেশে নাজিল করা হয়েছিল। বিশেষ করে, যারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্যান্য বস্তুর (মূর্তি, পাথর, নক্ষত্র) উপাসনা করত। তখন আরবে নাস্তিকতার প্রভাব খুব একটা প্রকট ছিল না। আমাদের নবী (সা.) কোনো নাস্তিকের সঙ্গে আলোচনায় গিয়েছেন এমন কোনো ঘটনা পাওয়া যায় না। কারণ, এই নাস্তিকতার বিষয়, অর্থাৎ স্রষ্টা বলতে কিছু নেই, এ কথা তো ছিল আরও বেশি অদ্ভুত। যারা বলে, সবই এসেছে শূন্য থেকে, তাদের যুক্তি তো মূর্তিপূজারিদের চেয়েও নিম্নমানের। কারণ, শূন্য থেকে কখনো কোনো কিছু আসতে পারে না। অবশ্যই সবকিছুর একজন স্রষ্টা রয়েছে। প্রতিটি কাজের পেছনে কারণ রয়েছে।

আরও পড়ুন

সুরা আহকাফের আয়াতের প্রথম অংশে আল্লাহ তাআলা যেন মূর্তিপূজারিদের জিজ্ঞাসা করছেন, তোমাদের খোদারা, যাদের উদ্দেশে তোমরা দিনরাত উপাসনা কর, তারা এ পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করেছে? এ পৃথিবীর সমুদ্র, পর্বত, নদীনালা—এগুলো কি তারা সৃষ্টি করেছে? তারা নিজেরাই তো তোমাদের হাতে সৃষ্টি।

বিজ্ঞজনেরা এ বিষয়কে বলেছেন দলিলে আকলি। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের আকল তথা মস্তিষ্ক বা জ্ঞান দিয়ে চিন্তা করতে বলছেন, যে জিনিস নিজেরা তৈরি হয়েছে, তারা কীভাবে এই জটিল পৃথিবী সৃষ্টি করতে পারে।

আরও পড়ুন

আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা যদি আসলেই এমনটি বিশ্বাস করে থাকে, অর্থাৎ আসলেই যদি তাদের এই হাতে তৈরি দেবতারা বিশ্ব সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের এই বিশ্বাসের পেছনে কোনো যৌক্তিক প্রমাণ আছে। তাদের কাছে কি এ বিষয়ে কোনো ওহি বা জ্ঞান এসেছে?

বিজ্ঞজনেরা এ অংশকে বলেছেন দলিলে নাকলি বা তথ্যগত দলিল। অর্থাৎ তাদের এই মূর্তিপূজার পেছনে কোনো জ্ঞানগত বা তথ্যগত ভিত্তি আছে কি না। নাকি তারা অন্ধের মতো তাদের পূর্বপুরুষের অনুসরণ করে যাচ্ছে? অথচ আল্লাহ তাআলা মানুষকে জ্ঞান দিয়েছে চিন্তাভাবনা করার জন্য, অন্ধ অনুকরণের জন্য নয়।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুন