লেবাননের সাইদায় প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা রমজান

রমজান মাসে সিডন শহর তার জনপ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য বজায় রাখে (আল জাজিরা)

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সাইদা শহর রমজান মাসে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রাণবন্ততায় ভরে ওঠে। শহরের প্রাচীন ঐতিহ্য ও রীতিনীতি যেন এ-মাসে সরবে উদ্ভাসিত হয়। রমজান মাসে শহরের রাস্তাঘাট ও অলিগলিতে থাকে এক বিশেষ সুর, যা স্থানীয় বাসিন্দা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি করে এক অনন্য পরিবেশ।

শহরজুড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

বৈরুত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত সাইদা। রমজান মাসে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, আয়োজিত হয় শিল্প প্রদর্শনী এবং ঐতিহ্যবাহী সংগীত সন্ধ্যা। দক্ষিণ লেবাননে সামরিক উত্তেজনা থাকলেও সাইদা শহর তার পূর্ববর্তী বছরের মতো আড়ম্বরে রমজান উদ্‌যাপন করেছে। রাত্রিগুলো একই রকম প্রাণবন্ত ও জমজমাট। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন দলের প্যারেড, কাহাওয়াতি (ধার্মিক গল্প শোনানো), মাসহেরাতি (সাহরি ডাকতে আসা), শিল্প প্রদর্শনী এবং কারিগরদের পরিবেশনা চলছেই। এ ছাড়াও পুরোনো দিনের পোশাক পরে শহরবাসী গলিতে গলিতে ঢুকে সদলবলে তবলাও সনু ও দফ বাজিয়ে গায় ধর্মীয় সংগীত এবং লেবানীজ কবিতা।

আরও পড়ুন
আনন্দের ছোঁয়া যোগ করতে সিডনের পাড়া এবং গলিতে লোককাহিনীর দলগুলি ঘুরে বেড়ায় (আল জাজিরা)

হকওয়াতি: গল্পের বলার ঐতিহ্য লেবাননে বহু পুরোনো ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে, কিন্তু সাইদা শহর যেন সব আঁকড়ে রেখেছে দানবীয় হাতে। বিশেষভাবে ‘হকওয়াতি’ বা গল্পকথক এখনো সাইদাতে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। গল্পকথক সাঈদদীন আবু সুলতানিয়া হকওয়াতি তার মজার মজার গল্পের মাধ্যমে শহরের ঐতিহ্য সজীব রাখেন। তিনি জানান, ‘আগে আমরা আমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে গল্প শুনতাম এবং তা পরবর্তী প্রজন্মকে শোনাতাম। বিশেষত, মহাকাব্যিক চরিত্র যেমন আবলা আর আন্তারের কাহিনি।’ তিনি বলেন, ‘আজকাল গল্পকার অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে, তবে রমজান মাসে আমাদের কাছে পুরোনো গল্পের এক নতুন জীবন ফিরে আসে।’   ‘দাহর আল-মির’ চত্বর মুসলিম স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন দক্ষিণ লেবানন প্রতিদিন ‘দাহর আল-মির’ চত্বরে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় হস্তশিল্পী ও মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারীদের বিশেষ সম্মান প্রদান করা হয়। দক্ষিণ লেবাননের স্কাউট কমিটির প্রতিনিধি রামি বাশাশা বলেন, ‘আমরা ৬ বছর ধরে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করছি। এখানে বসে আমাদের শহরের লোকেরা একত্র হয়ে ধর্মীয় গান, শেরবাদ ও পুরোনো দিনের গান উপভোগ করেন। সান্ধ্যকালীন এই মজলিশ শহরের লোকদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু আমরা এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি, তাই এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আশা করি মানুষ একটু হালকা অনুভব করবে।’  

আরও পড়ুন

বাব আল-সারাই চত্বর বাব আল-সারাই সাইদার পুরনো শহরের সবচেয়ে বড় পাবলিক চত্বর হিসেবে পরিচিত। এর নামকরণ হয়েছে ফখরুদ্দীন দ্বিতীয়ের প্রাসাদের ঐতিহাসিক দরজার নামে। বর্তমানে সেটি শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান। রমজানের সময়ে এই স্কয়ারে নানা রঙের আলো ও ফানুস ঝোলানো হয়। শহরের মানুষ ও দর্শনার্থীরা এখানে সমবেত হয়ে রমজানের বিশেষ পরিবেশ উপভোগ করেন। এখানে রমজানের পিঠা, মিষ্টান্ন এবং স্থানীয় পপুলার খাবার-পানীয় পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া, শিশুদের জন্য থাকে হরেক রকমের খেলনার আয়োজন, যার ফলে চত্বরটি অন্যতম জনপ্রিয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই স্থানটি ছোট উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যও তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিপণন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। লেবানন এখন যুদ্ধকাল পার করছে। তবু সাইদা শহর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রমজান মাসকে এমন এক উৎসবমুখর পরিবেশ উপহার দেয়, যা স্থানীয়দের ও শহরের বাইরের দর্শনার্থীদের সামান্য সময়ের জন্য হলেও কষ্ট ভুলে থাকতে সাহায্য করে।   সূত্র: আলজাজিরা ডট নেট

আরও পড়ুন