ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা - কোপা আমেরিকা পেছানোয় কার সুবিধা?

মেসির কপাল খুলবে আগামী বছর? ছবি : এএফপি
মেসির কপাল খুলবে আগামী বছর? ছবি : এএফপি

>

কোপা আমেরিকা এক বছর পিছিয়েছে। কিন্তু এতে সুবিধা কার হলো?

করোনাভাইরাস-ধাক্কায় এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেছে কোপা আমেরিকার এবারের আসর। আগামী ১২ জুন থেকে এক মাস কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এই টুর্নামেন্ট। তা কোপা এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয়তম দুই দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কী লাভ? আগামী বছরে দল দুটির মূল একাদশের কী অবস্থা হবে?

গতবার সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ফাইনালে পেরুকে হারিয়ে কোপা জেতে ব্রাজিল। জাতীয় দলের হয়ে একটা শিরোপা জেতার অপেক্ষা দীর্ঘতর হয় আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির। অনেকেই ভাবছিলেন, নিজেদের মাটিতে অবশেষে এবার হয়তো শিরোপাখরা ঘুচবে মেসি-আগুয়েরোদের। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক বছর পেছানোর কারণে আর্জেন্টিনার মূল একাদশের সবাই আগামী বছর খেলতে পারবেন তো?

বলা হয়, তিরিশের ওপারে গেলেই একজন ফুটবলার ক্যারিয়ারে শেষের ডাক শুনতে পান। সে হিসেবে অনেকেই বয়স তিরিশ পার হয়ে গেলে জাতীয় দলের হয়ে তেমন ডাক পান না। কিন্তু অনেকের সঙ্গে তো আর লিওনেল মেসির তুলনা চলে না। তাই বলা যায়, আগামী বছর বয়স ৩৩ হলেও মেসি জাতীয় দলে থাকবেন বেশ ভালোভাবেই। আগামী বছর বয়স ৩২ হবে ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোর, দলে থাকতে পারেন তিনিও। আনহেল ডি মারিয়াও চাইবেন জাতীয় দলের হয়ে ট্রফি জেতার শেষ একবার চেষ্টা করতে, আগামী বছর তাঁর বয়স হবে ৩৩। তবে এক বছর পেছানোয় হয়তো কপাল পুড়তে পারে নিকোলাস ওটামেন্ডি (ডিফেন্ডার, ৩২), অগুস্তিন মার্চেসিন (গোলরক্ষক, ৩২), ফ্রাঙ্কো আরমানি (গোলরক্ষক, ৩৩), মাতিয়াস সুয়ারেজ (উইঙ্গার, ৩৩), ইভান মার্কোনে (মিডফিল্ডার, ৩১), গ্যাব্রিয়েল মের্কাদো (ডিফেন্ডার, ৩৩) ও মিল্টন কাসকোর (ডিফেন্ডার, ৩২)।

বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই হওয়ার কারণে এবং মূল একাদশের অবিচ্ছেদ্য অংশ না হওয়ার কারণে কপাল পুড়তে পারে রবার্তো পেরেইরা (মিডফিল্ডার, ২৯), এস্তেবান আনদ্রাদা (গোলকিপার, ৩০), ওয়াল্টার কানেমান (ডিফেন্ডার, ২৯), মার্কোস রোহো (ডিফেন্ডার, ২৯) ও রামিরো ফুনেস মোরির (ডিফেন্ডার, ২৯)।

তবে প্রতিভাবান তারকা যে উঠে আসছে না, তা কিন্তু নয়। এখন মূল একাদশে তেমন সুযোগ না পাওয়া কিছু তারকা আগামী বছর হয়ে উঠতে পারেন মূল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এদের মধ্যে রয়েছেন - হুয়ান মুসো (গোলরক্ষক, ২৫), লিওনার্দো বালের্দি (ডিফেন্ডার, ২১), নেহুয়েন পেরেস (ডিফেন্ডার, ১৯), লিয়ান্দ্রো পারেদেস (মিডফিল্ডার, ২৫), জিওভান্নি লো সেলসো (মিডফিল্ডার, ২৩), রদ্রিগো দি পল (মিডফিল্ডার, ২৫), এজেকিয়েল পালাসিওস (মিডফিল্ডার, ২১), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (মিডফিল্ডার, ২১), লওতারো মার্তিনেজ (স্ট্রাইকার, ২২), হুয়ান ফয়েথ (ডিফেন্ডার, ২২) ও আদোলফো গাইচ (স্ট্রাইকার, ২২)। এ ছাড়া নিয়মিত অন্যান্য তারকাদের মধ্যে দেখা যেতে পারে জেরমান পেসেলা (ডিফেন্ডার, ২৮), মার্কাস আকুনিয়া (মিডফিল্ডার, ২৯), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (ডিফেন্ডার, ২৭), পাওলো দিবালা (স্ট্রাইকার, ২৬) ও আনহেল কোরেয়াকে (স্ট্রাইকার, ২৬)।

ওদিকে ব্রাজিল তুলনামূলকভাবে একটু হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। মূল একাদশে খেলা তারকাদের মধ্যে এক দানি আলভেস (৩৬) ছাড়া কারওর বয়সই তিরিশের ওপারে নয়। দলে থিয়াগো সিলভা (ডিফেন্ডার, ৩৫), ফিলিপে লুইস (ডিফেন্ডার, ৩৪), উইলিয়ান (উইঙ্গার, ৩১) সবারই যোগ্য বিকল্প চলে এসেছে। ব্রাজিল এখন তাকিয়ে থাকে এদের মিলিতাও (ডিফেন্ডার, ২২), রেনান লোদি (লেফটব্যাক, ২১), রিচার্লিসনদের (ফরোয়ার্ড, ২২) দিকে। এ ছাড়া নিয়মিত খেলার যোগ্যতা রাখা আর্থুর মেলো (মিডফিল্ডার), ব্রুনো গিমারেস (মিডফিল্ডার), গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ফরোয়ার্ড), গ্যাব্রিয়েল বারবোসা (স্ট্রাইকার), এমারসন (রাইটব্যাক), লুকাস পাকেতা (মিডফিল্ডার), রদ্রিগো গোয়েস (ফরোয়ার্ড), ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (উইঙ্গার), দাভিদ নেরেস (উইঙ্গার)—সবার বয়সই পঁচিশের কম। এক বছর পর এঁরা অভিজ্ঞতায় আরও ঋদ্ধ হবেন, আরও পরিপক্ব হবেন। সঙ্গে নেইমার, কুতিনহো, ফিরমিনো, মার্কিনিওস, কাসেমিরোদের যোগ্য পথ-প্রদর্শন তো থাকবেই।

এক বছরে দলে কিছু মুখ বদলাবে। খেলোয়াড়দের মধ্যে রসায়ন আরও ভালো হওয়ারই সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে ২০২১-এর জুনে অনেক বদলে যাওয়া ব্রাজিল-আর্জেন্টিনারই দেখা মিলতে পারে।

অপেক্ষা এখন আগামী বছরের।