আইপিএলের সময়ই টেস্টের প্রস্তুতি নিয়েছেন গিল

মহাকাব্যিক ইনিংস উপহার দিয়ে মাঠ ছাড়ছেন ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক শুবমান গিলছবি: রয়টার্স

তুলনাটা তাঁদের মধ্যে না চাইলেও ওঠে। অদ্ভুত সব ঘটনা তাঁদের জুড়ে দেয় একসঙ্গেও। অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রেই যেমন—শুবমান গিল সেঞ্চুরি পেয়েছেন অভিষেকেই, বিরাট কোহলিও তাই। কিন্তু দুজনেই টেস্ট নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচে হেরেছেন। গিল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও, যে কীর্তি ছিল কোহলিরও—তবে তা আর এতটুকুতেই আটকে থাকেনি।

২৬৯ রানের ইনিংসে অনেক রেকর্ডই ওলট–পালট করে দিয়েছেন গিল। প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে উপমহাদেশের বাইরে আড়াই শর বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন। ভারতের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরি পেয়েছেন দেশের বাইরে। গিলের এত সব কীর্তি গড়ার পেছনের গল্প যদিও বেশ পরিশ্রমের।

আরও পড়ুন

একের পর এক ম্যাচ–টুর্নামেন্ট খেলে ক্রিকেটারদের এখন দম ফেলার ফুরসত পাওয়াই মুশকিল। এই সিরিজের আগেই যেমন ভারতের ক্রিকেটারদের ব্যস্ততা ছিল আইপিএলে। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের রমরমা ওই সময়েই নাকি শুবমান গিল প্রস্তুতি নিয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের!

এজবাস্টন টেস্টে ২৬৯ রানের ইনিংসে দলকে ৫৮৭ রানের বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার পর সম্প্রচারকদের এমন কথাই জানিয়েছেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক গিল, ‘টি–টোয়েন্টি থেকে টি–টোয়েন্টিতে খেলতে নামা সহজ। কিন্তু টি–টোয়েন্টি থেকে টেস্টে আসা কঠিন—কারণ, আপনি দলের সঙ্গে একটা ধরনে অনুশীলন করছেন আর আপনার মন ও মাথাও তখন ওদিকেই থাকে।’

আইপিএল চলার সময় টেস্ট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন কোহলি ও রোহিত শর্মা। ভারতের নতুন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় গিলকে। ব্যাটিংয়েও এত দিন ওপেনিং বা তিন নম্বরে খেলা গিলকে দেওয়া হয় কোহলির চার নম্বর জায়গা। নতুন এই দায়িত্বের প্রস্তুতি নিতে টি–টোয়েন্টি খেলতে খেলতে টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন—গুজরাট টাইটানসের হয়ে আইপিএলে খেলা গিল আহমেদাবাদে নেটে অনুশীলন করেন ডিউক বলে, যে বলে খেলা হচ্ছে এই সিরিজে।

তবে আইপিএল চলার সময় এই অনুশীলন যে সহজ ছিল না, তা স্পষ্ট গিলের কথায়, ‘বারবার আপনার মাথা ও শরীকে (আলাদা অনুশীলনে) মানিয়ে নিতে বলাটা চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য আমি আইপিএলের সময়ই টেস্টের অনুশীলন শুরু করি—তখনই আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত হয়েছি।’

হেডিংলি টেস্টে ঋষভ পন্তের সঙ্গে মাঠ ছাড়ছেন ভারতের অধিনায়ক শুবমান গিল
এএফপি

টেস্টে অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগের ৬ ইনিংসে ফিফটি ছিল না গিলের। নেতৃত্ব পাওয়ার পর দুই ম্যাচেই দুটি সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে, দলও তাঁর ব্যাটে পাচ্ছে বড় রানের ভিত। শুধু কি প্রস্তুতিতে বদল এনেই তা সম্ভব হলো?

গিল জানিয়েছেন তিনি ব্যাটিংটা উপভোগ করছেন, ‘ব্যাটিং ভালোই করছিলাম; কিন্তু ৩০–৪০ রান করার পর আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। এ জন্য আমি চাচ্ছিলাম ব্যাটিংকে উপভোগ করতে। আমি অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছিলাম, টেস্টের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই নিয়েছি। আইপিএল থেকেই তা শুরু করেছি।’

২৬৯ রানের ইনিংস খেলার পথে ৩৮৭ বল খেলেছেন গিল। ৩০ চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কাও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। পরিসংখ্যান দেখে মনে হতে পারে, ভারতীয় অধিনায়কের হয়তো ব্যাট করাটা খুব কঠিন হয়নি, স্বাচ্ছন্দ্যেই বাউন্ডারিগুলো পেয়ে গেছেন। তবে ম্যাচের পর গিল জানিয়েছেন ভিন্ন কথা।

গিলের ভাষায়, ‘আগের ম্যাচে আমি আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে রান করছিলাম। কিন্তু এখানে তা সহজে হয়নি। আমার মাথায় ছিল উইকেটটা ভালো, আমিও সেট হয়ে গেছি। যতক্ষণই ব্যাট করি না কেন, ম্যাচটাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে আসা যাবে না। শেষ ম্যাচে আমি এটা শিখেছি যতক্ষণই এই কন্ডিশনে ব্যাট করি, লোয়ার অর্ডারে ধস নামতে পারে। এ জন্য আমি চেয়েছি যতক্ষণ সম্ভব থাকতে। বোলাররা আমাকে ভালো বলে আউট করুক, কিন্তু আমি কোনো ভুল করব না।’

আরও পড়ুন