পিএসএল সম্প্রচারে পাকিস্তানে আটকা পড়েছেন ভারতীয় সম্প্রচারকর্মীরা
পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) সম্প্রচারকাজে পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন ভারতের ১২ জন কর্মী ও এক প্রযোজক। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর পর নতুন করে দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। উভয় দেশের সরকার একে–অপরের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে নিজ দেশে ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু ভারতীয় প্রযোজক ও সম্প্রচারকর্মীরা এখনো দেশে ফিরতে পারেননি।
পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ ভারতীয়সহ মোট ২৬ জন নিহত হন। এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে বুধবার প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতের উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়। এতে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
ভিসা বাতিলের পর পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের নাগরিকদের এবং পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এতে পিএসএলের সম্প্রচারকাজে নিয়োজিত ক্রুরা পড়েছেন ঝামেলায়। তাঁরা ভারতে ফিরে যেতে পারেননি। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্মকর্তারা মনে করেন, ভিসা বাতিলে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ তাঁদের কাগজপত্রে বিশেষ সুবিধা আছে।
ভারতের বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে পিসিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সম্প্রচারে নিয়োজিত কর্মীদের ওপর তা কার্যকর হয়নি। কারণ, বিকল্প ব্যবস্থাও নিতে হবে। আগামীকালের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ভারতীয় সম্প্রচারকর্মীদের মধ্যে পাঁচজনের সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাসা আছে। তাঁরা ভারতে ফিরবেন না এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও তাঁদের ওপর কার্যকর হবে না। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সম্প্রচারক দলের এক কর্মী টেলিকম এশিয়া স্পোর্টকে বলেছেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান আমাদের নিয়োগ দিয়েছে, পরামর্শের জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের ভিসা বিশেষ, তাই কোনো সমস্যা হবে না।’
পিএসএলের মূল সম্প্রচারক দ্য ট্রান্স এশিয়া কোম্পানি এর আগে সম্প্রচারকদের নিরাপত্তার বিষয়ে পিসিবির কাছে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল। পিসিবির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ বিষয়ে টেলিকম এশিয়া স্পোর্টকে বলেছেন, ‘পাকিস্তানে থাকতে পারবেন নাকি ছেড়ে যেতে হবে, এ বিষয়ে সম্প্রচারে জড়িত প্রযোজক ও কর্মীরা পিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
পিসিবি এর প্রতিক্রিয়ায় পরামর্শের জন্য স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছে। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পিসিবিরই চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পিসিবি মনে করে, ভিসা অনুমোদন করা হয়েছে খেলাধুলাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের জন্য এবং এটা বাতিল করা হবে না।
২০১৯ পিএসএল চলাকালীন কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৪৬ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর এই টুর্নামেন্টে অফিশিয়াল সম্প্রচারক অংশীদারত্ব থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ভারতের সম্প্রচারক সংস্থা আইএমজি রিলায়েন্স। পিসিবি এর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ দাবি করে অভিযোগ করেছিল, যা এখনো সুরাহা হয়নি।
২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে খেলাধুলা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থগিত রয়েছে। পাকিস্তান ও আরব আমিরাতের বেশির ভাগ ক্রিকেট ম্যাচের সম্প্রচারকর্মী ভারতীয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়ার সম্প্রচারকর্মীও নিয়োগ দিচ্ছে পাকিস্তান।