‘আমাকে যদি আল্লাহ ৭০০টা উইকেট দেয়, আমি ৭০০টা নিতেই রাজি আছি’
একসময় জাতীয় দলই ছিল তাইজুল ইসলামের স্বপ্নের সীমানা। সেখানে পৌঁছে যাওয়ার পর কতটুকু যাবেন, তা নিয়ে কখনো ভাবেননি। তবু সময়ের সঙ্গে তাইজুল পাড়ি দিয়েছেন লম্বা পথ। এক দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে আজ টেস্ট সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হিসেবে সাকিব আল হাসানের নামের পাশে নাম লেখিয়েছেন তাইজুল। সাকিবকে ছাড়িয়ে অর্জনটা একার করে নেওয়া এখন তাঁর জন্য শুধুই সময়ের ব্যাপার।
মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট পেয়েছেন। ৫৭ টেস্টে এখন তাইজুলের উইকেট সংখ্যা ২৪৬। সমান উইকেট নিয়ে এত দিন একাই টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন সাকিব। আর এক উইকেট পেলেই তাইজুল ছাড়িয়ে যাবেন তাঁকে।
এত উইকেট নেবেন কখনো ভেবেছেন কি না, এমন প্রশ্নে আজ দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাইজুল বলেছেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই একটা লক্ষ্য থাকে যে আমি জাতীয় দলে খেলব। কিন্তু জাতীয় দলে খেলার পরে ব্যক্তিগতভাবে এ রকম কোনো লক্ষ্য ছিল না যে আমি এখানে শেষ করব বা এই পর্যন্ত যাব।’
দুজনই বাঁহাতি স্পিনার হওয়ায় ক্যারিয়ারজুড়েই সাকিবের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছে তাইজুলের নাম। বিভিন্ন সময় রেকর্ডেও সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন। তবে নিজের অর্জনের দিনে তাঁর সঙ্গে সাকিবের নাম আনলে একটু যেন বিরক্তই হন তাইজুল। তবে সাকিবকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপলক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে তাইজুল জানালেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে সাকিবের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ কীভাবে সাহায্য করেছে তাঁকে।
তাইজুল বলেছেন, ‘একটা দল তখনই থিতু হবে যখন সবার সঙ্গে সবার বন্ধনটা ভালো থাকবে। যাঁরা সিনিয়র ছিলেন, তাঁরা এই কাজটা করেছেন। আমি তাইজুল...আসলে একটা নাম তখনই উঠে আসবে, যখন আপনি পারফর্ম করবেন। যখন পারফর্ম করব না, হয়তো আমার নামটাও আসবে না বা আমি এত দূর আসতেও পারব না।’
সাকিব টেস্টে অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার পর স্পিন বিভাগে দলের মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠেন তাইজুল। তখন থেকেই তাঁর মনে ‘অনেক’ উইকেট নেওয়ার স্বপ্নটা বাসা বাঁধে বলে জানিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার, ‘যে সময়টা আমার খেলায় ধারাবাহিকতা ও অভিজ্ঞতা এসেছে, নিজের মধ্যেও একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে…বাংলাদেশের ক্রিকেট আমাকে অনেক দিন একটা সুযোগের মধ্যে রাখবে। একটা সময় হয়তো অনেকগুলো উইকেটের মালিক হতে পারব।’
টেস্টের বোলিংয়ে এখন বাংলাদেশের বড় ভরসার নাম তাইজুল। ঘরের মাঠে তিনি বোলিং বিভাগের মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু তাঁর ‘অনেক’ উইকেটের সংখ্যাটা আসলে কত? উত্তরটা তাইজুল দিলেন হাসিমুখে, ‘আমাকে যদি আল্লাহ ৭০০টা উইকেট দেয়, আমি ৭০০টা নিতেই রাজি আছি।’
ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, সেই প্রশ্নে অবশ্য বলেছেন, ‘দুই বছর পর কী হবে, এটা বলা কঠিন। কিন্তু আপনি যত দিন খেলবেন, আপনার পারফরম্যান্সই বলবে আপনি কত দূর যেতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয় যে এখানে প্রক্রিয়া মেনে চলাটাই গুরুত্বপূর্ণ, সঙ্গে পারফর্মও করতে হবে। পারফরম্যান্সের দিকেই আমার নজর থাকবে সামনের দিনগুলোতে।’
ক্যারিয়ারে ১৭ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তাইজুল। এখন তিনি দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের একজনও। তবু তাঁকে ঘিরে একটা আলোচনা সব সময়ই থাকে। আলোটা যতটুকু থাকা উচিত, ততটা থাকে না তাঁর ওপর।
তবে এসব আলোচনা থেকে এখন নিজেকে দূরেই সরিয়ে রাখতে চান তাইজুল, ‘আমি সংবাদ সম্মেলনে এলে “আন্ডাররেটেড” কথাটা বারবার আসে। আমার মনে হয় এ রকম ধরনের কথা বারবার না আসাই ভালো। কারণ, এই ইস্যুটা কিন্তু অন্যরা কেউ তোলে না, হয়তো মিডিয়ার মাধ্যমেই ছড়ায়। আমার কাছে মনে হয় যে এই শব্দটা যত বেশি উঠবে, তত বেশি এটা ছড়াবে। এই জিনিসগুলো না ছড়ানোই ভালো।’