সাকিবকে ধরে ফেলা তাইজুলের দিনে ‘ওয়ানডে’ মেজাজে ব্যাটসম্যানেরা
বাংলাদেশ: ৪৭৬ ও ৩৭ ওভারে ১৫৬/১ আয়ারল্যান্ড: ৮৮.৩ ওভারে ২৬৫ (তৃতীয় দিন শেষে)
শততম টেস্টে মুশফিকুর রহিমের ওপর থেকে আলোটা যেন সরছিলই না। ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিন শেষ করেছিলেন নাটকীয়ভাবে। পরদিন সকালে সেঞ্চুরি, যেটি তাঁর মাইলফলক টেস্টকে আরও বেশি আলোকিত করে তুলল। কিন্তু আজ মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনটা কাটল একদমই নিষ্প্রাণ। সকালে ভূমিকম্পে ছড়ানো আতঙ্ক বাদ দিলে সারা দিনে আর কোনো চাঞ্চল্যই দেখা যায়নি শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে।
তবে এমন একঘেঁয়ে ক্রিকেটের দিনেও একটা নাম না বললেই নয়—তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনার হওয়ায় ক্যারিয়ারের শুরু থেকে সাকিব আল হাসানের ছায়ায় থেকেই বোলিং করে গেছেন। ভালো বোলিং করলেও দিন শেষে তাঁকে নিয়ে সম্পূরক প্রশ্নেই চলে আসত সাকিবের নাম। তাতে কখনো কখনো বিরক্তও হয়েছেন তাইজুল। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সাকিব এখন খেলায় নেই। তাইজুলের পারফরম্যান্স এখন তাঁর নিজের আলোতেই আলোকিত।
একটা জায়গায় তো আজ নিজেকে সাকিবের উচ্চতায়ই নিয়ে গেছেন তাইজুল। ৭৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিবের নামের পাশে লিখে ফেলেছেন নিজের নাম। ২৪৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারির সিংহাসনটা এখন যৌথভাবে সাকিব–তাইজুলের।
সাকিবের খেলায় ফেরাটা যেহেতু অনিশ্চিত, তাঁকে ছাড়িয়ে তাইজুল যে সহসাই টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হয়ে যাবেন, সেটা বলাই বাহুল্য। তাইজুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন থেকে তাই কেবল নিজের সঙ্গে।
আগের দিন ৫ উইকেটে করা ৯৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে আয়ারল্যান্ড আজ ২৬৫ রানে শেষ করেছে প্রথম ইনিংস। মধ্যাহ্নবিরতির পর আর সোয়া এক ঘণ্টা ব্যাটিং করেই অলআউট। দিনের প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে যোগ হয় ১১৩ রান।
অলআউট হওয়ার আগে দ্বিতীয় সেশনে আসে ৫৪। আইরিশ বিপর্যয় কাটিয়ে তোলার কৃতিত্বটা ১৭১ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকা লরকান টাকারই বেশি পাবেন। ষষ্ঠ উইকেটে স্টিফেন ডোয়েনির সঙ্গে তাঁর ৮১ এবং অষ্টম উইকেটে জর্ডান নিলের সঙ্গে ৭৪ রানের দুই জুটিতেই দলের রান আড়াই শ হয়ে যায়।
আগের দিন হ্যারি টেক্টরের উইকেট নেওয়া তাইজুল মাঝে এক ওভারেই দুর্দান্ত দুই ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ডোয়েনি আর অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে। দেশ কাঁপিয়ে দেওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মিনিট তিনেক খেলা বন্ধ থাকার পর এই জোড়া আঘাত আনেন তাইজুল।
পরে ম্যাথু হামফ্রিসকেও ফিরিয়ে ছুঁয়ে ফেলেন সাকিবের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটের রেকর্ডও। সাকিব অবশ্য ২৪৬ উইকেট পেয়েছেন ৭১টি টেস্ট খেলে, তাইজুল পেলেন ৫৭ টেস্টেই। ৫৬ টেস্টে ২০৯ উইকেট নিয়ে অফ স্পিনার মেহেদী মিরাজ আছেন এরপর।
এই টেস্টে অবশ্য মিরাজের প্রাপ্তি মাত্র এক উইকেট। ২১১ রানের লিড পেয়েও আইরিশদের ফলোঅন করায়নি বাংলাদেশ। উদ্দেশ্যটা বোঝা গেছে দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান ও সাদমান ইসলামের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। দুজনই আক্রমণাত্মক শট খেলে রান বাড়াতে চেষ্টা করেছেন।
প্রথম ৭ ওভারেই তাঁরা তুলে ফেলেন ৪১ রান, ১০ ওভার শেষে ৫৩। ওপেনারদের দ্রুত রান তোলার চেষ্টার সামনে একটু অসহায়ই লাগছিল আইরিশ বোলার–ফিল্ডারদের।
হোয়েকে বাউন্ডারি মেরে ইনিংস শুরু করা ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান মুমিনুলের মধ্যেও দেখা গেছে একই মানসিকতা। হোয়ের করা ৩৬তম ওভারের প্রথম দুই বলেও তিনি মেরেছেন পরপর দুই বাউন্ডারি। দিন শেষে ২১ বলে মুমিনুলের অপরাজিত ১৯ রানে বাউন্ডারি আছে ম্যাকব্রাইনকে মারা আরও একটি।
দিন শেষে ১ উইকেটে ১৫৬ রান করে বাংলাদেশের লিড আজই ৩৬৭ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বলে দিচ্ছে—আয়ারল্যান্ডকে আরেকবার ব্যাটিং করতে দেওয়ার আগে যত দ্রুত সম্ভব লিড বাড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে যাওয়াই লক্ষ্য বাংলাদেশের। ৩১.১ ওভারে ১১৯ রানের ওপেনিং জুটিতে ফিফটি করেছেন মাহমুদুল, সাদমান দুজনই। ছয় বাউন্ডারিতে মাহমুদুলের ফিফটি ৭৫ বলে। সাদমান ৭৬ বল খেলে ফিফটি করেছেন পাঁচ বাউন্ডারিতে।
তবে জুটি বেঁধে দিন শেষ করতে পারেননি ওপেনাররা। ৯১ বলে ৬০ রান করে মাহমুদুল এলবিডব্লু হয়ে যান গ্যাভিন হোয়ের বলে। দিন শেষে ৬৯ রানে অপরাজিত সাদমানের সঙ্গী মুমিনুল, যিনি ইনিংসটা শুরুই করেছেন ওয়ানডের মেজাজে। কাল সকালেও এই মেজাজটাই ধরে রেখে আয়ারল্যান্ডকে দ্রুত বড় রানের নিচে ফেলাটাই লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশের।