বেয়ারস্টোর আউটের পর লর্ডসের ডাইনিংরুমে কী হয়েছিল, জানালেন লায়ন

লর্ডসে স্টাম্পিং হয়ে ফিরছেন জনি বেয়ারস্টোরয়টার্স

এ আউট নিয়ে আরও অনেক দিন কথা হবে, সেটি ধরে নেওয়াই যায়। অ্যাশেজে লর্ডস টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ক্যামেরন গ্রিনের বলে জনি বেয়ারস্টোকে করা অ্যালেক্স ক্যারির স্টাম্পিংটাই ছিল এমন। ইনিংসের ৫২ তম ওভারের শেষ বল ছিল সেটি, মধ্যাহ্নবিরতির ১৫ মিনিট আগে। মধ্যাহ্নবিরতিতে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কী ঘটেছিল, সেটিই জানিয়েছেন তখনো দলের সঙ্গে থাকা অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লায়ন।

বেয়ারস্টো আউট হওয়ার পর বেন স্টোকসের সঙ্গী ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড, ৫৭ ওভার শেষে মধ্যাহ্নবিরতিতে যান দুই দলের খেলোয়াড়রা। লর্ডসের লং রুমে এমসিসির একাধিক সদস্য অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কটূক্তি করেন, সেখানে এক দফা উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই দুই দলের গন্তব্য আলাদা ড্রেসিংরুম হলেও মধ্যাহ্নভোজের জন্য লর্ডসের ডাইনিং রুমে দেখা হয়ে যায় তাঁদের। হোম অব ক্রিকেটে দুই দলকে একই ডাইনিং রুমেই খেতে হয়। সেখানেও পরিস্থিতি উত্তপ্তই ছিল, জানিয়েছেন লায়ন।

সাবেক অস্ট্রেলিয়া উইকেটকিপার ব্র্যাড হাডিনের সহ-উপস্থাপনার উইলো টক ক্রিকেট পডকাস্টে লায়ন সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘কিছু অস্ট্রেলিয়ান ছেলে ছিল, কিছু ইংলিশ ছেলে ছিল লাঞ্চ রুমে। আমাকে ক্রাচে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে গিয়ে দুই পক্ষের মাঝে দাঁড়াতে হয়েছিল পরিস্থিতি একটু শান্ত করতে।’

ক্যারির স্টাম্পিংয়ের শিকার বেয়ারস্টো মাঠে একটু অবিশ্বাসের অভিব্যক্তি দেখালেও ভেতরে গিয়ে অন্যরকম ছিলেন, বলেছেন লায়ন, ‘জনি এখানে-সেখানে একটু কথা বলছিল। তবে এগুলো হবেই, আমার এতে আপত্তি নেই।’

বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে ইংলিশের এক পক্ষ বেশ সরব, ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলে এ আউটের বিপক্ষে কথা বলছেন তারা। তবে লায়ন স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন দলে, ‘আমি তো ড্রেসিংরুমে ছিলাম। লাফিয়ে উঠেছিলাম স্রেফ। আমার মনে হয়েছিল, “দুর্দান্ত! এটা তো প্রতিদিনই আউট! ”’

হতভম্ব বেয়ারস্টো, অস্ট্রেলিয়ার উল্লাস
রয়টার্স

অবশ্য বেয়ারস্টোর আউটের পর পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত বদলাতে শুরু করেছিল, তাতে অবাক হয়েছিলেন লায়ন। লং রুমে উসমান খাজার সঙ্গে এমসিসির সদস্যদের বাদানুবাদও হয়। যে ঘটনায় পরে তিনজন সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কারও করে এমসিসি। কিন্তু অন্য একজন দর্শকের কথাও আলাদা করে বলেছেন লায়ন, ‘আমার কাছে একজন বৃদ্ধা এসেছিলেন, কাঁদতে কাঁদতে। ইংলিশ ভদ্রমহিলা, মেম্বার্স এরিয়া থেকে এসেছিলেন। এসে বললেন, “আমার ঘরে ফিরে যেতে হবে। তবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার তোমরা যারা আছো, তাদের কাছে ক্ষমা চাই। লর্ডসের ভেতরে সবাই তোমাদের যে প্রতিক্রিয়া দেখাল। ”’

লায়নের জবাব ছিল, ‘আমি তাকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে না করেছিলাম। আমরা ঠিকঠাকই ছিলাম, স্লেজিংয়ের শিকার হওয়া নিয়ে আমরা ভাবি না। তবে অ্যাশেজ ক্রিকেট যে কতজনের ওপর কত উপায়ে প্রভাব ফেলতে পারে, কত মানুষের কর্মকাণ্ডেও প্রভাব ফেলতে পারে-সেটি আরেকবার বুঝেছি। একজন মহিলাকে সত্যিকার অর্থেই কাঁদতে দেখাটা একই সঙ্গে সুন্দর ও বিব্রতকর একটা মুহূর্ত ছিল তখন।’

আরও পড়ুন

লর্ডস টেস্টে চোটে পড়েই অ্যাশেজ আগেভাগে শেষ হয়ে গেছে লায়নের। প্রথম ইনিংসে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পান তিনি, এরপর আর বোলিং করেননি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে খোঁড়াতে খোঁড়াতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। তাঁর ওভাবে ব্যাটিং করতে নামা বেশ প্রশংসিতও হয়। মিচেল স্টার্কের সঙ্গে শেষ উইকেট জুটিতে লায়ন যোগ করেন ১৫ রান। যে টেস্টটি বেন স্টোকসের বীরত্বের পরও অস্ট্রেলিয়া জেতে ৪৩ রানে। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সেরা অফ স্পিনার বলেছেন, ওই পা নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা যাবে না বলেই শুরুতে মেডিকেল দল জানিয়েছিল তাঁকে।

চোট নিয়েই লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেছিলেন নাথান লায়ন
রয়টার্স

ফিল্ডিংয়ের সময়ই তাঁর অ্যাশেজ যে শেষ, তা বুঝে গিয়েছিলেন লায়ন। ব্যাটিংয়ে নামার পেছনেও কাজ করেছে সেটিই, ‘আমি জানতাম ১০-১২ সপ্তাহের জন্য ছিটকে গেছি। ফলে কয়েকটি ট্যাবলেট খেলাম, হাঁটু পর্যন্ত টেপ পেঁচালাম। পা নড়াতেই পারছিলাম না। এরপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেরিয়ে এসে লং রুমে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম ব্যাটিংয়ে নামার জন্য।’ লায়ন আগেই জানিয়েছিলেন, আগে থেকেই লং রুমে না নেমে এলে টাইমআউট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাঁর!

লর্ডসে টানা ১০০ তম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন লায়ন। হেডিংলিতে রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে টিকে আছে ইংল্যান্ড, আগামীকাল থেকে শুরু ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট। মাঠের বাইরে থেকে অ্যাশেজ দেখতে কেমন লাগে, সে প্রসঙ্গে লায়ন বলেছেন, ‘আমি আসলে আমার প্রথম চোট নিয়ে অনেক বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। এটা হলো যে সময়ে-যেটি আমার জন্য বড় এক মাইলফলক হওয়ার কথা ছিল। ছেলেরা আলাপ করছিল, আদতে আমি টানা ৯৯.৫টি ম্যাচ খেলেছি। খুবই বিধ্বস্ত লাগছে। তবে ছেলেরা দারুণ অবস্থানে আছে। আপাতত টেস্ট ক্রিকেট দেখাটা আমার জন্য কঠিন, এটি বুঝেছি। দেখা যাক কী হয়।’