রান তাড়ায় দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড হেডের, দুই দিনে ইংল্যান্ডকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

রান তাড়ায় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন ট্রাভিড হেডএএফপি

সকালটা ছিল ইংল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়াকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দিয়ে প্রথম ইনিংসে ৪০ রানের লিড—অ্যাশেজে শুরুর পর্বটা স্বস্তিরই ছিল বেন স্টোকসদের জন্য। কিন্তু দিন শেষে সেই ইংল্যান্ডেরই নামের পাশে জড়ো হয়েছে বিব্রতকর রেকর্ড। পার্থে সফরকারী ইংলিশদের বিষাদে ডুবিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আনন্দের ঢেউয়ে ভাসিয়েছেন ট্রাভিস হেড।

ইংল্যান্ডের ২০৪ রান তাড়া করতে নেমে হেড একাই করেছেন ৮৩ বলে ১২৩। ম্যাচ জেতানো ইনিংসের পথে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৬৯ বলে, যা টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড। আর হেডের রেকর্ডে ভর করে অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে।

ইংল্যান্ড শুধু ৮ উইকেটের ব্যবধানেই হারেনি, হেরেছে দুই দিনের মধ্যেই। অস্ট্রেলিয়া–ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ ইতিহাসে দুই দিনের মধ্যে কেউ টেস্ট হারল ১০৪ বছর পর। ১৯২১ সালের মে মাসে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়া দুই দিনে জিতেছিল ১০ উইকেটে।

হঠাৎ ওপেনার

হেড টেস্টে সাধারণত ব্যাটিং ওপেন করেন না। নামেন পরের দিকে। অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত ওপেনার উসমান খাজা অস্বস্তি বোধ করায় আজ হেডকেই দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেন করতে পাঠান কোচ–অধিনায়ক।

টেস্টে নবমবারের মতো (বাকি আটবারই ছিল উপমহাদেশে) ওপেন করতে নামার পর শুরুতে তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি সামনে কী করতে চলেছেন। প্রথম ১৪ বলে নিয়েছেন ৩ রান, ১৫তম বলে প্রথম বাউন্ডারি।

এরপর আর আড়ষ্ট থাকেনি হেডের ব্যাট। ইংল্যান্ডের ব্রাইডন কার্স, মার্ক উড, গাস অ্যাটকিনসনরা একের পর এক শর্ট ডেলিভারি করে গেছেন, আর হেড পুলে, র‍্যাম্পে, ড্রাইভে একের পর চার–ছক্কা মেরে গেছেন।

আরও পড়ুন

তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৫০ ছুঁয়েছেন ৩৬ বলে। পরের পঞ্চাশে পৌঁছাতে এত বল লাগেনি। ৬৯তম বলে অ্যাটকিনসনের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্ক।

টেস্ট ইতিহাসে রান তাড়ায় এর চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি কারও নেই। ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের গিলবার্ট জেসফ ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১২৩ বছর ধরে সেটিই টিকে ছিল।

টেস্ট ক্যারিয়ারে ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরি এখন ১০টি
এএফপি

হেডের ৬৯ বলে সেঞ্চুরিটি অ্যাশেজে দ্বিতীয় দ্রুততম (দ্রুততম অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ৫৭ বলে, ২০০৬–০৭ মৌসুমে পার্থে), আর টেস্ট ইতিহাসে ওপেনারদের মধ্যে যৌথভাবে দ্রুততম (অন্যটি ২০১২ সালে ওয়াকায় ভারতের বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের)।

রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলে হেড যখন ৮৩ বলে ১২৩ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন, অস্ট্রেলিয়ার জিততে বাকি মাত্র ১৩ রান। যা করতে ৯ বল লেগেছে মারনাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথের। লাবুশেন ৪৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। হেডের ইনিংসে ছিল ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কা। অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ২০৫ রান তোলে ২৮.২ ওভারে।

আরও পড়ুন

স্টার্ক–বোল্যান্ডের তোপ

প্রথম দিন ইংল্যান্ডকে ১৭২ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ১২৩ রান করতে হারায় ৯ উইকেট। আজ দ্বিতীয় দিনের সকালে আর ৯ রান যোগ করে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।

প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া স্টার্ক দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৪ উইকেট
এএফপি

৪০ রানে এগিয়ে থেকে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো শুরু করে। একপর্যায়ে ১ উইকেটে ৬৫ রানও তুলে ফেলে। তবে স্কট বোল্যান্ড টানা ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং এলোমেলো করে দেন। স্টার্ক এসে আরও ২ উইকেট নিলে ৮৮ রানে ৬ উইকেট হারায় ইংলিশরা। শেষ দিকে অভিষিক্ত ব্রেন্ডন ডগেট ৩ উইকেট নিলে ১৬৪ রানে থেমে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁরা জমা করে ২০৪ রান। যা এক হেডই পরে বড্ড কম বানিয়ে ফেলেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ইংল্যান্ড: ১৭২ ও ১৬৪ (অ্যাটকিনসন ৩৭, পোপ ৩৩; বোল্যান্ড ৪/৩৩, স্টার্ক ৩/৫৫)। অস্ট্রেলিয়া: ১৩২ ও ২০৫/২ (হেড ১২৩, লাবুশেন ৫১*; কার্স ২/৪৪)। ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মিচেল স্টার্ক। সিরিজ: অস্ট্রেলিয়া ৫ টেস্ট সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।
আরও পড়ুন