গিলের এক ভুলে ২৫০ কোটি রুপি ক্ষতি হতে পারে বিসিসিআইয়ের
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও অধিনায়ক শুবমান গিলের সৌজন্যে বিনা মূল্যে বিপণন সুবিধা পেয়েছে নাইকি, যা প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডিডাসের জন্য নেতিবাচক।
ইংল্যান্ড সফরে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করা শুবমান গিল এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম আলোচিত নাম। ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক হেডিংলি ও এজবাস্টনে প্রথম দুই ম্যাচে ১৪৬.২৫ গড়ে করেছেন ৫৮৫ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও।
এজবাস্টনে গিলের মহাকাব্যিক ইনিংস দুটি (২৬৯ ও ১৬১) সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তাঁর নেতৃত্বও প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু স্মরণীয় ম্যাচটিতে বড় এক ভুল করে ফেলেছেন গিল। সেটির খেসারত হিসেবে ২৫০ কোটি রুপি ক্ষতি হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই)।
এজবাস্টন টেস্টের চতুর্থ দিনে ৬ উইকেটে ৪২৭ রান তোলার পর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন গিল। ইংল্যান্ডকে ছুড়ে দেন ৬০৮ রানের বিশাল লক্ষ্য। রান তাড়া করতে নেমে ৩৩৬ রানে হারে বেন স্টোকসের দল।
সেদিনের ওই ইনিংস ঘোষণার সময়ই বিপত্তি বাধিয়েছেন গিল। ভারত অধিনায়ক ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে যখন ইনিংস ঘোষণা করেন, তখন তাঁর গায়ে ছিল নাইকির একটি কালো রঙের স্ট্রেচ টি-শার্ট।
ঝামেলাটা হয়েছে এই পোশাকেই। কারণ, ভারতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক নাইকি নয়, অ্যাডিডাস। এর মাধ্যমে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও অধিনায়ক গিলের সৌজন্যে বিনা মূল্যে বিপণন সুবিধা পেয়েছে নাইকি, যা প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডিডাসের জন্য নেতিবাচক।
ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এ ঘটনায় গিলের বিরুদ্ধে বোর্ডের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠাতে পারে বিসিসিআই। আবার অ্যাডিডাসও চাইলে বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। গিলের বিষয়টি সামনে এনে অ্যাডিডাস যদি চুক্তি বাতিল করে, তাহলে ২৫০ কোটি রুপি ক্ষতি হবে ভারতীয় বোর্ডের। চুক্তি যদি বাতিল না–ও করে, তবু অ্যাডিডাস ক্ষতিপূরণ দাবি করলে লোকসান গুনতে হতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের নাইকি ও জার্মানির অ্যাডিডাস। ক্রীড়াসামগ্রীর বাজারেও তারা বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। কোনো তারকা খেলোয়াড় বা দলের এই দুই কোম্পানির সামগ্রী ব্যবহার করা, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে প্রচার চালানো মানে তাদের ব্যবসার প্রসার হওয়া।
শুবমান গিল বর্তমানে নাইকির শুভেচ্ছাদূত। তবে ভারতের হয়ে খেলার সময় তিনি কোনোভাবেই নাইকির বানানো ক্রীড়াসামগ্রী প্রদর্শন করতে পারবেন না। কারণ, বিসিসিআইয়ের সঙ্গে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি আছে অ্যাডিডাসের।
২০২৩ সালের মে মাসে ২৫০ কোটি রুপির বিনিমিয়ে করা সেই চুক্তির সময় স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, ভারত জাতীয় পুরুষ ও নারী দল এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কেউ খেলা চলাকালীন অ্যাডিডাস ব্যতীত অন্য কোনো কোম্পানির বানানো ক্রীড়াসামগ্রী প্রকাশ্যে পরিধান বা প্রদর্শন করতে পারবেন না।
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে এটাও বলা হয়েছে, গিল যেহেতু ড্রেসিংরুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসে ভারতের ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন, তাই সেই সময় পৃষ্ঠপোষক অ্যাডিডাসের শর্তের কথা হয়তো তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। এ বিষয় বিবেচনা করে দলের নতুন অধিনায়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ না–ও পাঠাতে পারে বিসিসিসিআই।
আবার বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হওয়ায় লাভের বিষয়টি বিবেচনা করে অ্যাডিডাসও হয়তো চুক্তি বাতিল করবে না অথবা ক্ষতিপূরণ চাইবে না। বড়জোর অ্যাডিডাস বিসিসিআইকে একটি সতর্কবার্তা দেবে যেন ভবিষ্যতে কেউ গিলের মতো কাজ না করেন।
ক্রিকেট–তীর্থ লর্ডসে ইংল্যান্ড-ভারত তৃতীয় টেস্ট শুরু আগামীকাল।