আইপিএলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো ভারতের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা কী

গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ক্রিকেটারদের উল্লাস।রয়টার্স

গড় ৫০.৩৩। মোট রান ৬০৪। স্ট্রাইক রেট ১৭৫.০৭।

গত আইপিএলে শ্রেয়াস আইয়ারের পারফরম্যান্স। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই পাঞ্জাব কিংসকে ফাইনালে তুলেছিলেন। আইপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষ দশে থাকা আর কোনো ব্যাটসম্যান এত স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেননি। এমন পারফরম্যান্সের পরও এশিয়া কাপের দলে নেই আইয়ার। তিনি মন খারাপ করবেন, নাকি বিস্মিত হবেন!

যেটাই হোক, সাই সুদর্শন ও পেসার প্রসিধ কৃষ্ণার দিকে তাকালে আইয়ারের মনটা একটু হলেও হালকা লাগতে পারে। আইয়ার ছিলেন গত আইপিএলে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, সাই আবার সেই তালিকায় শীর্ষে। রান করেছিলেন ৭৫৯, এরপরও দলে জায়গা পাননি।

উইকেটের বিচারে গত আইপিএলে সেরা বোলার কৃষ্ণা, টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৫টি উইকেট নিয়েছেন। তবু দলে জায়গায় হয়নি। শোনা যাচ্ছে, রিজার্ভে থাকতে পারেন। জানেন নিশ্চয়, ভারতের নতুন তারকা ওপেনার যশস্বী জয়সোয়ালেরও জায়গা হয়নি। তিনিও গত আইপিএলে ৫৫৯ রান করেছিলেন।

বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি লিগে পারফর্ম করার পরও এই চার ক্রিকেটার এশিয়া কাপের দলে জায়গা পাননি। বলা যায়, গৌতম গম্ভীর অনেকটা আইপিএলকে–ই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন! সেটা তিনি পেরেছেন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে থাকা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের জন্য। দলে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ বাদ পড়ার মতো খারাপ করেননি। তাই বাইরে থেকে যতই দরজা খোলার চেষ্টা করা হোক না কেন, ভেতর থেকে দরজা খোলা হচ্ছে না।

তাহলে দলে গিল কেন

২০২৪ সালে জুলাইয়ে ভারতের হয়ে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলা শুবমান গিলকে কিছুটা ভাগ্যবান বলতে হবে। সাই, জয়সোয়াল কিংবা গিল—তাঁদের সামর্থ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। বলা যায়, উনিশ–বিশ।

তবুও দল গিলের দিকেই ঝুঁকেছে। নেতৃত্বগুণের কারণেই অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে গেছেন গিল। তাই দলে ফিরিয়েই তাঁকে করা হয়েছে সহ–অধিনায়ক। প্রায় ৩৫ বছর বয়সী অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের বিকল্প রাখতে হবে তো!

গিল ফেরায় চাপে পড়েছেন স্যামসন।
ইনস্টাগ্রাম

গিল দলে ফেরায় চাপে পড়েছেন সঞ্জু স্যামসন। অথচ পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বেশি ৩টি সেঞ্চুরি আছে এই স্যামসনেরই। এ সময়ে ওপেনার অভিষেক শর্মার সেঞ্চুরি আছে ২টি, ৩ নম্বরে নামা তিলক বর্মারও ২টি। এখন গিল আসায় স্যামসনের সঙ্গে তিলকও চাপে পড়েছেন।

কারণ, স্যামসন তিনেও খেলতে পারেন। আর স্যামসনকে খেলালে উইকেটকিপিং নিয়ে আর ভাবতে হবে না ভারতকে। অভিষেকের অত চাপটাপ নেই। কারণ, তাঁর যা সামর্থ্য সেটা এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটেরই খুব কম ক্রিকেটারের আছে।

আরও পড়ুন

ভারতের মিডল অর্ডার কেমন হবে

শুরুটা হবে সূর্যকুমারকে দিয়ে। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্য খেলবেন ৪ নম্বরে। ভারতের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যত বল খেলবেন ভারতের তাতেই লাভ। তাই তাঁকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

স্যামসনের জায়গা না হলে উইকেটকিপারের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে জিতেশ শর্মাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭ ইনিংসে মাত্র ১৪.২৮ গড়ে ব্যাটিং করা জিতেশকে সাদামাটা ভাবলে ভুল করবেন! গত আইপিএলে জিতেশের ৩৩ বলে ৮৫ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছিল।

সেরাটা দিতে পারবেন হার্দিক?
রয়টার্স

হার্দিক পান্ডিয়া ও অক্ষর প্যাটলের একাদশে থাকাও অনেকটাই নিশ্চিত। পান্ডিয়ার বিকল্প শিবম দুবেকে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে। তবে চোটপ্রবণ এই অলরাউন্ডার অনেক দিন ধরেই বল হাতে নিয়মিত নন। তাই তিনি যেদিন খেলবেন অন্য কোনো বোলারকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। পান্ডিয়া ফিট থাকলে ভারতের ‘নো চিন্তা, ডু ফুর্তি’। চার ওভার বোলিং করবেন, চুইংগাম চিবুতে চিবুতে বোলারদেরও বেধড়ক পেটাবেন।

অক্ষর তো ভারতের নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটারদের একজন। যখনই ব্যাটিং ধস, গম্ভীর বলবেন, ‘অক্ষর উইকেটে গিয়ে পরিস্থিতি সামলাও। তবে খবরদার স্ট্রাইক রেট যেন ১৩০–এর নিচে না নামে।’ এর সঙ্গে বোলার অক্ষর তো আছেনই, টি-টোয়েন্টিতে তাঁর উইকেট আছে ৭১টি।

লোয়ার অর্ডার ও বোলাররা কেমন

ভারতের বোলাররা নিজেদের কাজে শক্তিশালী। তবে ব্যাটিংয়ে কতটুকু অবদান রাখতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এই লোয়ার অর্ডারই ভারতের দুর্বলতা। যদিও বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা খেলে দিলে তাঁদের কাউকেই লাগার কথা নয়!

ভারত দলে বোলার হিসেবে বরুণ চক্রবর্তী, যশপ্রীত বুমরা ও কুলদীপ যাদবের জায়গা মোটামুটি নিশ্চিতই। উইকেট, কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ দেখে হয়তো মাঝমধ্যে তাঁদের কাউকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে। কারণ, এই তিনজনের মধ্যে বরুণ ও বুমরা দুজনই চোটপ্রবণ।

জ্বলে উঠতে হবে বুমরাকে।
এএফপি

একাদশে হর্ষিত রানা বা অর্শদীপ সিংহের মধ্যে খেলবেন একজন। হর্ষিত ব্যাটিংয়ের কারণে এ লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে পারেন। যদিও তিনি এখনো নিজের ব্যাটিং–সামর্থ্যকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে পারেনি।

টি-টোয়েন্টি আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তাঁর স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ১০৫.৩৫ আর ৭৫.৭। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর রেকর্ড অনেক ভালো—গড় ৩২.৮, স্ট্রাইক রেট ৮২.৬৮। সেখানে এই পেসার এখন পর্যন্ত ৫৯৫ বলের মধ্যে ২৭টি ছক্কা মেরেছেন।

মানে তিনি ছক্কাটা মারতে জানেন। ৮ নম্বরে যেটা ভারতের জন্য বেশ কাজে লাগতে পারে। বুমারও দু-চারটা মারতে পারেন, তবে তাঁর কাছ থেকে তো আর রান আশা করবে না ভারত। স্কোয়াডে থাকা রিংকু সিংয়ের খেলার সম্ভাবনা বেশ কম। প্রায় একই মানের খেলোয়াড় হওয়ায় কাউকে বিশ্রাম দিলে অবশ্য তাঁর সুযোগটাও আসতে পারে!

ভারতের সম্ভাব্য একাদশ
অভিষেক শর্মা, শুবমান গিল, তিলক বর্মা, সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), সঞ্জু স্যামসন/জিতেশ শর্মা, হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, হর্ষিত রানা/অর্শদীপ সিং, যশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব ও বরুণ চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন