শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

চ্যাম্পিয়নের ট্রফিতে হাতে ভারতের উল্লাসরয়টার্স

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট
রয়টার্স

তবে দীপ্তি নয়, ভারতের বিশ্ব জয়ের ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় শেফালি বর্মা। সেই শেফালি, যিনি কিনা এক সপ্তাহ আগেও বাড়িতে বসে ভারত দলের জন্য গলা ফাটিয়েছেন। ভারতের বিশ্বকাপ দলেই তো ছিলেন না এই ওপেনার। এবারে বিশ্বকাপে দারুণ খেলা ভারতীয় ওপেনার প্রতীকা রাওয়ালের দুর্ভাগ্যই দলে এনেছে শেফালি। এরপর ইতিহাস।

আজ টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ ইনিংসটা খেলেছেন ২১ বছর বয়সী শেফালিই। ৭৮ বলে করেছেন ৮৭ রান। ৩১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসটা বিশ্বকাপ ফাইনালেই খেললেন শেফালি। উদ্বোধনী জুটিতে স্মৃতি মান্ধানাকে নিয়ে ১০৪ রান যোগ করেই ভারতকে বড় রানের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন শেফালি।

আরও পড়ুন
৫ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাটিংয়ে ৫৮ রান করেছেন দীপ্তি শর্মা
এএফপি

তবে শুধু ব্যাট হাতেই নয়, শেফালি আজ বল হাতেও সেরা ম্যাচটি খেলেছে, নিয়েছেন ২ উইকেট। খণ্ডকালীন এই স্পিনার ৩৬ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এর আগে এই সংস্করণে পাঁচবার বোলিং করে মাত্র ১টি উইকেটই নিতে পারা শেফালি আজ বোলিংয়ে এসেই পেয়ে গেছেন উইকেট। ২১তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় বলে সুনে লুসের ফিরতি ক্যাচ নিয়েছেন। পরের ওভারে মারিজান কাপকে উইকেটকিপার রিচা ঘোষের ক্যাচ বানিয়ে দ্বিতীয় উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরটাকে ১২৩/৪ বানিয়ে দেন শেফালি। এর পরের গল্পটা দীপ্তি ও ভলভার্টের। আর সেই গল্পে শেষ হাসিটা দীপ্তিরই। চ্যাম্পিয়নের পদকের সঙ্গে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও পেয়েছেন দীপ্তি। ২১৫ রানের পাশাপাশি ২২ উইকেট—বিশ্বকাপটা তো দীপ্তিময়ই ছিল।

আরও পড়ুন

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ৫০ ওভারে ২৯৮/৭ (শেফালি ৮৭, দীপ্তি ৫৮, স্মৃতি ৪৫, রিচা ৩৪, জেমাইমা ২৪; খাকা ৩/৫৮, ট্রাইঅন ১/৪৬, এমলাবা ১/৪৭, ডি ক্লার্ক ১/৫২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ (ভলভার্ট ১০১, ডার্কসেন ৩৫, লুস ২৫, ব্রিটস ২৩; দীপ্তি ৫/৩৯, শেফালি ২/৩৬)।
ফল: ভারত ৫২ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল: শেফালি বর্মা
প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট: দীপ্তি শর্মা