বিসিবিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কতজন
নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা অনেকটাই কমে এসেছে। নাটকীয় কিছু না ঘটলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের পরিচালক পদে ভোটাভুটি হবে না। কারণ, এই তিন বিভাগে পরিচালক পদ চারটি। মনোনয়নপত্রও জমা পড়েছে চারটি। মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই ও প্রত্যাহারের পর বোঝা যাবে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও কতজন নির্বাচিত হবেন।
খুলনা থেকে দুজন, বরিশাল ও সিলেট থেকে পরিচালক হবেন একজন করে। এই তিন বিভাগে পদের বিপরীতে একাধিক মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় যাঁরা জমা দিয়েছেন, তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁরাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন। খুলনা বিভাগে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর জুলফিকার আলী খান এবং খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার খান আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাক গতকালই বিসিবির নির্বাচক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বরিশাল বিভাগ থেকে একটিমাত্র মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ভোলা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসেন। তিনি আজ সেটি জমা দিয়েছেন। সিলেট বিভাগ থেকে একমাত্র মনোনয়নপত্রটি জমা দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর রাহাত সামস। নির্বাচন কমিশন বলেছে, যেখানে পদের বিপরীতে একাধিক মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি, সেখানে ‘বিধি মোতাবেক’ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন সামনে রেখে আজ ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। বিকেল পাঁচটায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পেরোনোর পর নির্বাচন কমিশন সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানায়, তিনটি বিভাগে পদের বিপরীতে একাধিক মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি।
তিন ক্যাটাগরিতে আগের দিন মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল ৬০টি। তবে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৫১টি। জেলা ও বিভাগীয় সংস্থার ক্যাটাগরি ১-এ মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল ২৮টি, জমা পড়েছে ১৮টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩টি, চট্টগ্রামে ৪, খুলনায় ২, রাজশাহীতে ৪, রংপুরে ৩, সিলেটে ১, বরিশালে ১টি।
রাজশাহী বিভাগের পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হাসিবুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার মো. মুখলেসুর রহমান, জয়পুরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার এস এম শামস মতিন ও পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার তৌহিদ তারিক খান। রংপুর বিভাগে জমা দিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার হাসানুজ্জামান, দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার রেহাতুল ইসলাম ও ঠাকুরগাঁও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নূর-এ শাহাদাৎ। ঢাকা বিভাগে জমা দিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার আমিনুল ইসলাম (বর্তমানে বিসিবি সভাপতি), জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাজমূল আবেদীন ও জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আবদুল্লাহ আর ফুয়াদ রেদোয়ান। চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার আহসান ইকবাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার আসিফ আকবর ও চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার শওকত হোসেন।
ক্যাটাগরি ২–এ (ক্লাব) ৩২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল, জমা পড়েছে ৩০টি। জমা দেননি ব্রাদার্স ইউনিয়নের ইশরাক হোসেন ও কাকরাইল বয়েজ ক্লাবের সালাহউদ্দিন চৌধুরী, যিনি বর্তমানে বিসিবির একজন পরিচালক।
সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক ক্রিকেটারের ক্যাটাগরি ৩-এ বিক্রি হওয়া তিনটি মনোনয়নপত্রই জমা পড়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দেবব্রত পাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামীকাল মনোনয়নপত্র বাছাই ও তালিকা প্রকাশ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল ও শুনানি হবে।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছি। আমি মনে করি, দেশকে আমার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ক্রিকেট বোর্ডে নির্বাচন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, গোটা বাংলাদেশকে নিয়ে এখানে কাজ করার সুযোগ আছে। ঠিকমতো পরিকল্পনা করলে ক্রিকেট অনেক ওপরে যেতে পারে। ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর যতটা এগোনোর কথা ছিল, আমাদের ক্রিকেট ততটা এগোয়নি। নির্বাচিত হলে নিজের সেরাটা দেব।’
ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন ঘিরে দু–তিন দিন আগেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছিল। একদিকে সরকার, অন্যদিকে বিএনপি। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই উত্তেজনা অনেকটাই স্তিমিত। দুই পক্ষে সমঝোতার গুঞ্জনও আছে। ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম যদিও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে সমঝোতা বলে কিছু নেই। নির্বাচনে যদি প্রতিপক্ষই না থাকে, সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। আমরা চাই যোগ্যরা নির্বাচনে আসুক। তাহলে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন হবে।’
ক্লাব থেকে পরিচালক প্রার্থীদের প্যানেল প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাব ক্যাটাগরিতে আমরা সমমনা ১২ জনের প্যানেল দেব। সেভাবেই আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’