দেরিতে ‘ঘুম’ ভাঙল নাঈমের, ১৪ বলে ৪২ রান নিয়েও জেতাতে পারলেন না খুলনাকে
স্লিপে ডেভিড মালানের দুর্দান্ত ক্যাচটাই কি শেষ পর্যন্ত হারিয়ে দিল খুলনা টাইগার্সকে! ক্রিকেটে যদি–কিন্তুর কোনো স্থান নেই। মালান যদি শূন্যে ভেসে ক্যাচটা না নিতেন, আউট হওয়া থেকে বেঁচে গিয়ে মোহাম্মদ নাঈম শেষ ওভারে খুলনাকে জিতিয়েই দিতেন, এমন নিশ্চয়তা তা–ই দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক, আজ রাতে নাঈমের আউটের আগ পর্যন্তও ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচে ছিল খুলনা।
রিপন মণ্ডলের শেষ ওভারে ২৫ রান নিতে পারলে জিতে যেত খুলনা টাইগার্স। প্রথম বলটা ডট দিলেও পরের দু্ই বলেই ছক্কা মেরে সেই পথেই যাচ্ছিলেন নাঈম। শেষ তিন বলে দরকার ১৩। কিন্তু এরপরই ওই বল। নাঈম সোজা ব্যাট চালালেও ব্যাটের কানায় লেগে বল উড়ে চলে যাচ্ছিল স্লিপে দাঁড়ানো মালান আর উইকেট কিপার মুশফিুকর রহিমের মাঝ দিয়ে। মালানের মতো একজন না থাকলে ওটা নিশ্চিত চার। কিন্তু দীর্ঘদেহী মালান শূনে৵ ভেসে হাতের মুঠোয় অদৃশ্য করে দিলেন বলটা, আক্ষেপে পুড়লেন নাঈম।
খুলনাকে ৭ রানে হারিয়ে অষ্টম ম্যাচে ষষ্ঠ জয় তুলে নিল তামিম ইকবালের বরিশাল। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জয় পেয়েছে তারা। অন্যদিকে খুলনার আট ম্যাচে এটি পঞ্চম হার। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ খেলে তাদের জয় মাত্র একটিতে।
শেষ দিকে জয়ের নায়ক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও বরিশালের ৯ উইকেটে করা ১৬৭ রানের জবাবে ওপেনার নাঈম শুরু থেকে মোটেও টি–টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং করেননি। আউট হওয়ার আগে রানটা যদিও ১৩০.৫০ স্ট্রাইক রেটে ৭৭, ১৫তম ওভার শেষেও তাঁর রান ছিল ৪৪ বলে ৩৫।
খুলনার রানটা যে সেভাবে ছোটেনি, সে দায় আছে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজেরও। ২৯ বলে করেছেন ৩৩, দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে পাওয়ার প্লেতে দুজন মিলে ৩১ রান পর্যন্তই নিতে পেরেছেন দলকে। শেষ পর্যন্ত ৫৯ রানের জুটি গড়েছেন ৫১ বলে।
খুলনা পিছিয়ে যায় মূলত সেখানেই, যে ধাক্কা পরের দিকে নাঈমের আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা এবং আফিফ হোসেনের ১৭ বলে ২৭ রানের ইনিংসেও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। নাঈম তাঁর ছয় ছক্কার পাঁচটই মেরেছেন ১৫তম ওভারের পরে, যখন খুলনার হাত থেকে অনেকটাই ছুটে গেছে ম্যাচ। ১৫তম ওভার শেষে তাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩০ বলে ৭৬ রান। শেষ ৫ ওভারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সে দূরত্ব অনেকটাই পাড়ি দেওয়া গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি খুলনার।
টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও ফাহিম আশরাফ। দুর্বার রাজশাহীর ১৯৭ রান তাড়া করে দলকে ১১ বল বাকি থাকতে জয় এনে দিয়েছিল তাদের ৮৮ রানের জুটি, ফিফটি করেছিলেন দুজনই। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দেখে সেদিন মিরপুরে ম্যাচ শেষে পাকিস্তানি ক্রিকেটার ফাহিমের মন্তব্য ছিল ‘মাহমুদউল্লাহ ভাই ম্যাজিক।’
সেই ‘ম্যাজিক’ পরের ছয় ম্যাচে আর দেখা যায়নি। অবশ্য এই ছয় ম্যাচের তিনটিতে ব্যাটিংই করতে হয়নি মাহমুদউল্লাহকে। তবে তিনি ফিফটি পেয়েছেন আজও। সেদিনের মতো ঝোড়ো (২৬ বলে ৫৬*) ব্যাটিং না করলেও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বরিশালকে আরেকটি বিপর্যয় থেকে বাঁচানোয় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
১৬ রান আর ২.৩ ওভারের মধ্যে তামিম ইকবাল, ডেভিড মালান ও মুশফিকুর রহিম ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। অমন বিপর্যয়ের পরও যে বরিশালের স্কোর শেষ পর্যন্ত ১৬৭, সেটার মূল কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহকেই দিতে হবে। ৮৭ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ আটকেছেন বির্যয়ের স্রোত, সপ্তম উইকেট জুটিতে সঙ্গী রিশাদ হোসেনকে নির্ভরতা দিয়েছেন হাত খুলে ব্যাট করার।
এবারের বিপিএলে নিজের পঞ্চম ম্যাচ খেলতে নেমে আজই প্রথম ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে সেটি দারুণভাবে কাজেও লাগিয়েছেন রিশাদ। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে রান আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ৩৯ রান করে। ১৮তম ওভারে জিয়াউরকে মারা এক ছক্কার সঙ্গে রিশাদ মেরেছেন পাঁচটি চারও, ১৫তম ওভারে যার তিনটি ওই জিয়াউরেরই প্রথম তিন বলে। পরে বল হাতে অ্যালেক্স রসের উইকেট নেওয়া রিশাদের হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।