বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভালো নাকি ভালো নয়

নিয়মিতই ব্যাটিং ওপেন করতে নামছেন তানজিদ–পারভেজএএফপি

ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেনের ঠিক কী সমস্যা হয়েছিল?

প্রশ্নের উত্তর নেই জাকের আলীর কাছে। থাকার কথাও নয়। পাওয়ার প্লেতে, বিশেষ করে শুরুর দুই ওভারে অমন হতশ্রী ব্যাটিংটা যে ভালো লাগেনি তাঁরও। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল, ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা জাকের দিয়েছেন সেই স্বীকারোক্তি।

এমন উইকেটে পাওয়ার প্লে ব্যাটিং নিয়ে জাকেরের বলার আছে এটুকু, ‘যদি আরেকটু ঠিকঠাক পরিকল্পনা এবং টাইমিংয়ের দিকে মনোযোগী হতাম…।’

আর সেটা হয়নি বলেই শেষ দিকে জাকের-শামীম হোসেনের ৮৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির পরও বাংলাদেশের পুঁজি হয়েছে মাত্র ১৩৯ রানের। যে রান শ্রীলঙ্কা টপকে টপকে গেছে ৩২ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখেই।

টস হেরে বাংলাদেশকে নামতে হয়েছিল ব্যাটিংয়ে। কিন্তু শুরুতে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে, তা হয়তো ভাবেনি কেউই। শুরুটা করেছিলেন ওপেনার তানজিদ। নুয়ান তুষারার করা প্রথম ওভারের পুরোটা জুড়েই হাঁসফাঁস করেছেন রানের জন্য। লঙ্কান বোলার চাচ্ছিলেন একটা ঠিকঠাক ইনসুইংয়ে তানজিদকে ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে দিতে। তানজিদ যে বুঝতে পারছিলেন না, তেমনও নয়।

আউট হওয়ার আগের বলটাতেই এগিয়ে এসেছিলেন তুষারা যেন তা না করতে পারেন। কিন্তু পাঁচ বল ডট হওয়ার পর শেষ বলে এলোমেলো চালিয়ে খেলতে গিয়েই তানজিদের ইনিংসের ইতি—বোল্ড হয়ে যান তুষারার ইনসুইংয়েই। সঙ্গীর এই অস্বস্তিকর বিদায় উইকেটের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়েই দেখেছেন পারভেজ হোসেন।

আরও পড়ুন

পরের ওভারে তিনি স্ট্রাইকে যাওয়ার পরও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। দুষ্মন্ত চামিরার সঙ্গে পারভেজের এই ‘লড়াই’ যদিও তানজিদের মতো ৬ বল স্থায়ী হয়নি। চতুর্থ বলেই শট খেলতে মরিয়া হয়ে ওঠা পারভেজের ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিসের কাছে। দুজনই যখন আউট হন, বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ০/২। পেরিয়ে গেছে ১.৪ ওভার।

পারভেজ-তানজিদের জুটি টি-টোয়েন্টি সংস্করণে থিতুই বলা যায়। তাঁরা যে মন্দ করছেন, তাও নয়। এশিয়া কাপে আসার আগেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তানজিদ। পারভেজও চার ইনিংস আগে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন।

টি–টোয়েন্টিতে চলতি বছর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন তানজিদ ও পারভেজ
শামসুল হক

দুজনেই ভালো মারতে পারেন—এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডেও ওপরে নাম তোলা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে তাঁদের (দুজনেরই ২৩টি করে)। দুজনের সুবাদে এ বছর টি-টোয়েন্টি সংস্করণে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডের পথে আছে বাংলাদেশও।

কিন্তু জুটি বলতে ঠিক যা বোঝায়, সেটি কি তাঁদের মধ্যে গড়ে উঠছে? আলাদাভাবে নিজেরা ভালো করলেও একসঙ্গে ভালো করতে দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ১১ ইনিংসেই উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

কেন এমন—উত্তরটা পাওয়া যাবে কাল আবুধাবিতে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা জাকেরের কথায়, ‘আমি মনে করি যে ওপেনিং আর তিন নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের দলের জন্য। ওদেরকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। পাওয়ার প্লেতে খেলা মানে এই না প্রতি বলে চার-ছক্কা মারতে হবে। আমি নিশ্চিত তাঁরা এই জিনিসগুলো নিয়ে ভাববে এবং পরের ম্যাচে ভালো কিছু করবে।’

কিন্তু ওপেনিংয়ের ব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও খুব বেশি দূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৬ ওভারেই ১০০ পেরিয়ে যাওয়ার পর দেড় শও খুব কঠিন কিছু মনে হচ্ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থেমেছে ১৩৯ রানে। জাকের ও শামীমের জুটিও অপরাজিত থেকেছে।

রানটা ১৬০-৭০ হলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ত, তা বলেছেন জাকেরও। কিন্তু তা কেন হয়নি? জাকেরদের জন্য বাধা হয়েছে গরম আর বাতাসও, ‘যেহেতু একটা গরম ছিল। বাতাস একটা ফ্যাক্ট থাকে এক দিকে, দুই দিকে মারা যায় না। বেশি সিঙ্গেলস খেলতে গেলে একটু ক্লান্তি আসবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। ওরা অনেক ভালো বল করেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা ভালো করিনি।’

আরও পড়ুন