হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে মনে করাল আম্বানির দল
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসই প্রথম দল, যারা টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই কীর্তিতে গতকাল রাতে যুক্ত হয়েছে ওভাল ইনভিন্সিবলস।
বিপিএল ইতিহাসের সফলতম দল হিসেবে তো বটেই, আরেকটি কারণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে রাখার কথা। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কুমিল্লাই প্রথম দল, যারা টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
এই কীর্তিতে গতকাল রাতে যুক্ত হয়েছে আরেকটি নাম—ওভাল ইনভিন্সিবলস। লর্ডসে দ্য হানড্রেডের ফাইনালে কাল জো রুট-মার্কাস স্টয়নিসদের ট্রেন্ট রকেটসকে ২৬ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্যাম কারেন-অ্যাডাম জাম্পাদের ওভাল। ইংল্যান্ডের এই ১০০ বলের টুর্নামেন্টে লন্ডনের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও শিরোপা জিতেছিল।
এশিয়া মহাদেশের শীর্ষ ধনী আম্বানি পরিবার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যেখানেই হাত দেয়, সেখানেই সোনা ফলে—এ রকম একটা কথা প্রচলিত আছে। কথাটি যে অমূলক নয়, তা গত রাতে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে।
আইপিএল দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা আম্বানিদের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলটি২০, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) পর এ বছরের জানুয়ারিতে ৬ কোটি পাউন্ডে (৯৮৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা) দ্য হানড্রেডের দল ওভাল ইনভিন্সিবলসের ৪৯% মালিকানা কেনে।
বাকি ৫১% মালিকানা এখনো কাউন্টি ক্লাব সারের হাতে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ কেনার পরই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড (২ হাজার ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা)।
দল কেনার ৮ মাস না পেরোতেই আরেকটি ট্রফি জয়ের সুখবর পেল আম্বানি পরিবার। এ নিয়ে তাদের ক্যাবিনেটে ট্রফির সংখ্যা বেড়ে হলো ১৪। এর আগে ছেলেদের আইপিএলে তাদের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ৫ বার, চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টিতে ২ বার, মেয়েদের আইপিএলে ২ বার, এমএলসিতে এমআই নিউইয়র্ক ২ বার, আইএলটি২০ তে এমআই এমিরেটস ১ বার ও এসএ২০ তে এমআই কেপটাউন ১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের দ্য হানড্রেডের আগে ওভাল ইনভিন্সিবলসেরও নাম বদলে যাবে। আম্বানি পরিবারের মালিকানাধীন অন্য দলগুলোর নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হবে এমআই লন্ডন।
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে শুধু ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় নিলে হ্যাটট্রিক শিরোপাজয়ী প্রথম দল ভিক্টোরিয়া বুশরেঞ্জার্স। অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য দলটি ২০০০৫-০৬, ২০০৬-০৭ ও ২০০৭-০৮ মৌসুমে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা শিরোপা জয়ের বিশ্ব রেকর্ডটা শিয়ালকোট স্ট্যালিয়নসের। পাকিস্তানের দলটি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় ওয়াইয়াম্বা (২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০), ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো (২০১১, ২০১২ ও ২০১৩) ও টাইটানস (২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭) হ্যাটট্রিক ট্রফির স্বাদ পেয়েছিল।
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টিতে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের দল জাফনাও টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে দুটি ভিন্ন নামে ও ভিন্ন মালিকানার অধীনে। ২০২০ সালে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম আসরের শিরোপা জয়ের সময় দলটির নাম ছিল জাফনা স্ট্যালিয়নস, মালিকানা ছিল মাইক্রোসফটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এম১২-এর নির্মাতা আনন্দন আরনল্ড ও রাহুল সুদের হাতে।
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক শিরোপা
* ২০২০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস বিপিএলে অংশ নিতে পারেনি, ২০২১ সালে করোনার কারণে বিপিএল হয়নি।
কিন্তু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে আনন্দন আরনল্ড ও রাহুল সুদকে পরের বছর মালিকানা থেকে সরিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। তাঁদের জায়গা লাইকা গ্রুপ মালিকানা পেলে জাফনা স্ট্যালিয়নসের নাম পাল্টে হয় জাফনা কিংস। এই দলটি ২০২১ ও ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়।
তাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসই বিশ্বের একমাত্র দল, যারা একই নামে ও একই মালিকানার অধীন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে। দলটি ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিপিএলে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়। বলতে পারেন, তাহলে মাঝের দুই বছর (২০২০ ও ২০২১ সাল) গেল কই?
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৯-২০ মৌসুমে বিশেষ বিপিএল আয়োজন করে বিসিবি। সেবার সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাদ দিয়ে বোর্ডই পুরো টুর্নামেন্টের অর্থায়ন করে। ফলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়া সেই বিপিএলে খেলতে পারেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। আর ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে বিপিএল হয়নি।