বাংলাদেশের হারে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেওয়া কে এই ভারতের আম্পায়ার গায়ত্রী

প্রথম আলো গ্রাফিকস

বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের আলোচনায় এখন গায়ত্রী বেণুগোপালান। নারী বিশ্বকাপে ভারতের এই আম্পায়ারকে নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গতকাল গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে তাঁর একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৭৮ রান তুলে ৪ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ম্যাচটি জেতান তিনে নামা হিদার নাইট। তবে নাইট ব্যক্তিগত ১৩ রানে ক্যাচ তুলেছিলেন। কাভারে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে নিচু হয়ে আসা ক্যাচটি নেন স্বর্ণা আক্তার। আউট ভেবে নাইট নিজেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু মাঠের আম্পায়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে টিভি আম্পায়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টিভি আম্পায়ার গায়ত্রী বেণুগোপালান রিপ্লে দেখে মনে করেছেন, ফিল্ডারের (স্বর্ণা) আঙুল বলের নিচে ছিল না, সে কারণে নাইটকে ‘নটআউট’ ঘোষণা করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটা নিয়ে কাল রাত থেকেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ মনে করেন, নাইটের ক্যাচ সঠিকভাবেই নিয়েছিলেন স্বর্ণা আর তখন তিনি আউট হলে এ ম্যাচের ফল বাংলাদেশের পক্ষেই যেত। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন বলেছেন, ‘সিদ্ধান্তটি আমাদের পক্ষে এলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হওয়ার সব রকম সম্ভাবনাই ছিল।’

৪৬ বছর বয়সী গায়ত্রীর জন্ম ভারতের চেন্নাইয়ে। মালয়েশিয়ায় গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গায়ত্রী এবং নেদারল্যান্ডসের আম্পায়ার নিতিন বাথি এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালেও ম্যাচ পরিচালনা করেন।

হিদার নাইট ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন
এএফপি

মেয়েদের ক্রিকেটে এ পর্যন্ত তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, ২৯টি টি-টোয়েন্টি, ৮টি ওয়ানডে ও ১টি টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন গায়ত্রী। এর মধ্যে ৮টি ওয়ানডে এবং ৩টি ওয়ানডেতে ছিলেন টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনজন নারী আম্পায়ার। বৃন্দা রাঠি ও এন জননীর সঙ্গে গায়ত্রী সেই তিন আম্পায়ারের একজন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে প্রচুর ক্রিকেট খেলেছেন গায়ত্রী। পেশাদার ক্রিকেটে নেমে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু কাঁধের চোটে আর পেশাদার ক্রিকেটার হতে পারেননি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) আম্পায়ারিং পরীক্ষায় পাস করে ২০১৯ সালে নেমে পড়েন পেশাদার আম্পায়ারিংয়ে। ২০২৩ সালে ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছিল, বিসিসিআইয়ে নিবন্ধিত ১৫০ আম্পায়ারের মধ্যে নারী আম্পায়ার এই তিনজনই।

আরও পড়ুন

গায়ত্রীর আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে বিতর্ক নতুন না। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে (ডব্লিউপিএল) মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যকার ম্যাচে টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন গায়ত্রী। সেই ম্যাচে তিনটি রানআউটের আবেদন নাকচ করে দেন তিনি। তিনটি সিদ্ধান্তই মুম্বাইয়ের বিপক্ষে যায়। গায়ত্রীর দক্ষতা নিয়েও তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় বয়েছে। সেই তিনটি রানআউট নিয়ে বিতর্কের মূল বিষয় ছিল, এলইডি বেলস জ্বললেই স্টাম্প ভাঙা হয়েছে ধরে নেওয়া হবে নাকি স্টাম্পের মাথার ওপর থেকে বেলসগুলো স্থানচ্যুত হলে তখন ধরে নেওয়া হবে স্টাম্প ভাঙা হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’র প্রতিবেদনে তখন জানানো হয়—২০২৫ ডব্লিউপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, এলইডি স্টাম্প জ্বলে উঠলে সেটা (ক্যামেরায়) প্রথম ফ্রেম হিসেবে এবং উইকেট ভাঙা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হবে। তিনটি ঘটনায়ই টিভি আম্পায়ার গায়ত্রী দ্বিতীয় ফ্রেমের (যখন বেলস পড়ে গেছে) ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত দেন।

সর্বশেষ ডব্লিউপিএলে গায়ত্রীর এক ম্যাচে তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছিল
ডব্লিউপিএল

তবে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের দুই দিন পর ‘রেভস্পোর্টৎজ’-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডব্লিউপিএল কর্তৃপক্ষ নিয়মটির পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং গায়ত্রীর সিদ্ধান্তই সঠিক। বিসিসিআই ও ম্যাচ অফিশিয়ালদের নির্দেশনা তিনি অনুসরণ করেছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। স্টাম্পের ওপর থেকে বেলস পুরোপুরি স্থানচ্যুত হলে কেবল তখন ব্যাটার আউট হবেন—বিসিসিআই ও ম্যাচ অফিশিয়ালদের এই নির্দেশনা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত দেন গায়ত্রী। এলইইডি বেলস স্টাম্পের ওপর থাকতে এমনিতেই যেকোনো কারণে জ্বলে উঠতে পারে—বিষয়টি মাথায় রেখে দিল্লি-মুম্বাই ম্যাচের দিন সকালে টিভি আম্পায়ারদের ওই নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছিল বিসিসিআই।

আরও পড়ুন

দুই মাস আগে ‘দ্য ভি—উইমেন প্রজেক্ট’-এর ইউটিউব চ্যানেলে গায়ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার পোস্ট করা হয়। সেখানে আম্পায়ার হিসেবে নিজের পছন্দের সংস্করণ হিসেবে তিনি টেস্ট ক্রিকেটকে বেছে নেন। যেকোনো সময়ের একটি ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ থাকলে কোন ম্যাচটি বেছে নিতেন—এই প্রশ্নে গায়ত্রী বলেন, ’৭০-এর দশকের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের স্পিনশক্তি নির্ভর দল; যেকোনো ম্যাচ। পছন্দের আম্পায়ার হিসেবে মারাইস এরাসমাস ও ডেভিড শেফার্ডকে বেছে নেন গায়ত্রী।

গায়ত্রী সেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ক্রিকেট খেলার দিনগুলোয় তিনি কখনোই ভাবেননি আম্পায়ার হবেন, ‘আরও উঁচু পর্যায়ে খেলতে চেয়েছি। তখন আম্পায়ার হওয়ার ভাবনা ছিল না। পরে কাঁধের চোটের কারণে পেশাদার ক্রিকেট আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না। এক বন্ধু আমাকে প্রথম (আম্পায়ার হওয়ার) পরামর্শটা দিয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে নেমে পড়লাম।’

আম্পায়ারিং নিয়ে গায়ত্রী দর্শনটা এমন, ‘এটা ধন্যবাদহীন কাজ। ১০টির মধ্যে ৯টি সিদ্ধান্ত সঠিক দেবেন, একটি ভুল করবেন, সেটাই মনে রাখা হবে। কাজটাই আসলে এমন।’