লিটনের অভিযোগ নিয়ে প্রধান নির্বাচক: ‘আমাদের কারও অনুমতি নেওয়ার কোনো দরকার নেই’
জাতীয় দলের দল নির্বাচন নিয়ে এবার তুমুল বিতর্ক। আয়ারল্যান্ড সিরিজের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে শামীম হোসেনকে না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই সংস্করণের অধিনায়ক লিটন দাস। চট্টগ্রামে আজ সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন, দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তাঁর বা কোচের মতামত নেওয়া হয়নি। তাঁর এই অভিযোগের তির জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের দিকে।
তাঁর এই অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, ‘দল নির্বাচন নিয়ে আমাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রসেস আছে—সব সময় অধিনায়ক ও কোচের সঙ্গে কথা বলা হয়। মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে অধিনায়ককে আমরা আমন্ত্রণ জানাই সিলেক্টরস রুমে, সেখানে দল নিয়ে আলোচনা হয়। যদিও খুব লম্বা সময় ছিল না আলোচনাটা।’
‘আলোচনার এক পর্যায়ে ওভারঅল বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে আমরা আলোচনা করি। ব্যাটিংয়ের ফর্ম নিয়ে একটা তো উৎকণ্ঠা আমাদের আছে এবং সেই ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে আলোচনার একটা পর্যায়ে শামীমের নামও এসেছিল। তাঁর ব্যাপারে আমি অধিনায়কের অবস্থান জানতে চাইলে আমাকে পরিষ্কারভাবে জানান, তিনি শামীমকে দলে রাখতে চান। এটা খুবই পরিষ্কার।’—যোগ করেন গাজী আশরাফ হোসেন।
সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো যাচ্ছে না শামীমের। সর্বশেষ তিন টি-টোয়েন্টিতে তিনি যথাক্রমে ০, ১ ও ১ রান করেছেন। নির্বাচকদের পক্ষ থেকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলেও লিটন তাঁকে দলে চান বলে জানান। তাঁর সঙ্গে সেই কথোপকথন নিয়ে গাজী আশরাফ বলেন, ‘বুঝতে পারলাম তাঁর অভিপ্রায় কী। তিনি আমাদের জানান, কোচও একইভাবে চিন্তা করছে। যে ব্যাটিং লাইনআপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছিল, সেটা তাঁরা রাখতে চান। তারপর তো দল চলে যাবে, লিটনও চলে গেল।’
লিটন অভিযোগ করেন, কোচ ও অধিনায়ক কারও মতামত নেওয়া হয়নি দল নির্বাচনের সময়। তবে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের পঞ্চম দিনের মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে আলাপ হয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘ডে ফাইভের লাঞ্চ ব্রেকের সময় কোচ এলেন এবং আলাপ করার একটা পর্যায়ে কোচ জানালেন, তাঁরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের একই লাইনআপটা রাখতে চান। শামীম পাটোয়ারীকে নিয়ে কোচের সঙ্গে আলাদা করে কোনো আলাপ হয়নি। আমাদের ভিন্ন ইস্যু ছিল আলোচনার জন্য। তবে আমরা বুঝতে পারি যে কোচও চাচ্ছেন একই ব্যাটিং অর্ডার রাখতে।’
দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচকেরাই নেবেন বলে মনে করেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন। গাজী আশরাফও বলেন তেমনই, ‘আমরা নির্বাচকেরা আমাদের কাজটা নিয়ে বসেছিলাম। আমরা কীভাবে দেখতে চাই, কী বার্তা দিতে চাই কিংবা আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যতটুকু সুযোগ আছে, সেটির কতটুকু কাজে লাগাতে চাই, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্তা করি। তাঁদের (কোচ ও অধিনায়ককে) জানিয়ে দিয়েছিলাম, দুই ম্যাচের জন্য দলটা দেব। যদি আমরা সিরিজটা সিকিউরড করতে পারি, শেষ ম্যাচে কিছু পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে।’
গাজী আশরাফের স্পষ্ট কথা, ‘আমাদের কারও অনুমতি নেওয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ, আমরা তাঁদের মতামত নিয়েছি। এটা আমাদের চাকরি। আমি কী বলব যে অধিনায়ক-কোচ (যেভাবে) বলেছে, (সেভাবে) দল দিয়ে দিয়েছি। তাহলে আর আমাদের থাকার দরকার কী?’
মিরপুর টেস্ট শেষ হওয়ার রাতে দল ঘোষণা করা হয়। তখন আবার লিটন নিজের অসন্তুষ্টির কথা প্রধান নির্বাচককে জানান। তখন গাজী আশরাফ শামীমকে ফোন করেও জানিয়েছিলেন, তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা নির্বাচকদের, লিটনের নয়। ওই ঘটনা নিয়ে গাজী আশরাফ বলেন, ‘দল ঘোষণা হওয়ার পর অধিনায়ক আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি যে নাখোশ, সেটা ব্যক্ত করেছেন। আমি বলেছি, দুই ম্যাচের জন্য দল দেওয়া হয়েছে, এটা নিয়েই তোমাকে খেলতে হবে। এটা দুই ম্যাচের দল, আমাদের সুযোগ আছে। পরবর্তী পর্যায়ে আমি দল ঘোষণার আধঘণ্টা পর শামীমকেও জানাই যে তোমাকে বাদ দেওয়া এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। যেন অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর কোনো সমস্যা না হয়।’
লিটন তাঁর সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে মিডল অর্ডারে কোনো বাঁহাতি না থাকার বিষয়টিও সামনে আনেন। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক, ‘বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নেই, এটা যেমন সত্য, তেমনি একাদশ ঘোষণা করলে কি শামীম দলে থাকত? ০, ১, ১ রান করার পর তাঁর কি জায়গা আছে, একাদশে যেখানে সাইফ আছে? যদি কোনো খেলোয়াড় প্রথম একাদশে না থাকে, এটা কি কোনো পার্থক্য করে স্কোয়াডে থাকা বা না থাকা?’
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সংকট নিয়ে গাজী আশরাফ আরও বলেন, ‘আমাদের দুইটা বাঁহাতি ওপেনার আছে, বাংলাদেশ দলের জন্য এসেনশিয়াল হচ্ছে, টপ অর্ডারের কারও ডিপে খেলতে হবে। কেউ যদি ৪০ থেকে ৫০টা বল খেলতে পারে, তাহলে তো ওপরের দিক থেকে একজন বাঁহাতি (এক প্রান্তে) থাকেই। আমরা সাইফউদ্দিনকে রেখেছি ম্যাচ খেলবে এই বিবেচনাতে। যদি সে ১৫ ওভারের সময় ৭ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নামে, তাহলেও তো হিউজ ক্রাইসিস হয় না। আর শুধু বাঁহাতি হলে তো হবে না, আপনার জায়গা পাওয়াটাকে জাস্টিফাই করতে হবে।’