ন্যাটোর সম্মেলনেও অ্যাশেজের উত্তেজনা

ন্যাটোর সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক (বাঁয়ে) ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজটুইটার

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন প্যাট কামিন্সের মতো বাউন্সার দিয়ে ‘প্রতিপক্ষ’কে কুপোকাত করতে। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঠিকই তৈরি ছিলেন—হেডিংলিতে মার্ক উডের মতো। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতে রাজনৈতিক আলোচনা ছাপিয়েও যেন বড় হয়ে এল অ্যাশেজ!

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দেখা হয়েছিল লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে। অ্যালবানিজের টুইট অনুযায়ী, সেখানে দুজনের মধ্যে ‘অকাস (অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া নিরাপত্তা সমঝোতা), প্রযুক্তি আদান-প্রদান, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে দুই দেশের মুক্ত বাণিজ্য সমঝোতা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে অনুমিতভাবেই তাঁরা ‘অ্যাশেজ নিয়েও আলোচনা’ করেছেন।

অ্যাশেজ নিয়ে সে আলোচনা কেমন ছিল, অ্যালবানিজের টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতেই আছে সেটি। সেখানে দেখা যায়, দুজনের দেখা হওয়ার পর টেবিল থেকে একটি কাগজ তুলে নেন অ্যালবানিজ। তাতে ছাপা অক্ষরে বড় করে লেখা ২-১। তার নিচে দুই দেশের নামও আছে। ২-১ যে ৩ ম্যাচ শেষে অ্যাশেজের স্কোরলাইন, সেটি বোঝা যায় সহজেই।

অ্যালবানিজের এমন বাউন্সারে অবশ্য মোটেও ভড়কে যাননি সুনাক। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বের করে আনেন একটি ছবি, যেন জানতেনই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করবেন! সুনাকের ওই ছবিতে দেখা যায় মার্ক উড ও ক্রিস ওকস আলিঙ্গন করছেন, হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়ের পর

অ্যালবানিজ অবশ্য সেখানেই থামেননি। তিনি চেয়েছিলেন আরেকটু ‘উত্তেজনা’ ছড়াতে। এবার তিনি বের করে আনেন আরেকটি ছবি। যাতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন জনি বেয়ারস্টো। হেডিংলির আগে লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ওভারের শেষ বলটি ডেড হওয়ার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্টাম্পড হয়েছিলেন বেয়ারস্টো। যে আউট নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক

বেয়ারস্টোর সে আউট ক্রিকেটের চেতনার সঙ্গে যায় না, এমন মন্তব্যও করেছিলেন সে ম্যাচটি দেখতে গ্যালারিতে হাজির হওয়া সুনাক। অ্যালবানিজ অবশ্য শুরু থেকেই নিজের দেশের দলের পক্ষে কথা বলে এসেছেন এ ব্যাপারে। তিনি বলেছিলেন, ‘সেই পুরোনো অজিরা, সব সময়ই জেতে!’

তবে এবার অ্যালবানিজের এ ডেলিভারির ভালো জবাবই দেন সুনাক। হাসতে হাসতে বলেন, ‘দুঃখিত, আমি সঙ্গে স্যান্ডপেপার আনিনি।’ সুনাক ইঙ্গিত করেছেন ২০১৮ সালে বল টেম্পারিং ঘটনার দিকে। যে কাণ্ডের পর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তখনকার অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। তবে সুনাকের সে জবাবের দিকে অ্যালবানিজ যে খুব মনোযোগ দিয়েছেন, তা বলা যাবে না। তখনো তিনি পা দিয়ে মেঝেতে কল্পিত দাগ কেটে ক্রিজ বোঝাতে ব্যস্ত!

লর্ডসে অ্যাশেজের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন সুনাক
রয়টার্স

পরে সুনাক দুজনের সাক্ষাতের একটা ছবি পোস্ট করে টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি অ্যান্থনি অ্যালবানিজকে কথা দিয়েছিলাম, তাকে আমাদের একটা ফোল্ডার দেব। স্বাভাবিকভাবেই গত সপ্তাহে কী হয়েছে, সেটি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাতে।’ এরপর সুনাক যোগ করেছেন, ‘আর দুটি ম্যাচ বাকি।’

ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের এ সাক্ষাতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর একে–অপরকে অ্যাশেজ-সংক্রান্ত ছবি দেওয়ার ভাবনা নিতান্তই কাকতালীয় বলে দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্র। দুজনের সাক্ষাৎ বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল বলেও জানানো হয়েছে।

তবে সে বন্ধুত্বপূর্ণ সাক্ষাতে যে অ্যাশেজের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ ছিল, সেটি তো স্পষ্টই!