হিজাব পরায় হয়রানির শিকার হয়েছিলেন মা, বললেন খাজা

মেয়েকে কোলে নিয়ে বাবা ও মায়ের পাশে উসমান খাজাইনস্টাগ্রাম/উসমান খাজা

অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ওপেনার উসমান খাজা জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া-ভারত বক্সিং ডে টেস্টের সময় তাঁর মা ফোজিয়া তারিক হিজাবের কারণে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুই ব্যক্তিকে আটক করলেও তাঁর মা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এমনকি ঘটনাটি খাজা তাঁর অস্ট্রেলিয়ান সতীর্থদেরও বলেননি।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের ‘ইসলামফোবিয়ার প্রতি জাতীয় প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন খাজা। প্রতিবেদনটি শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল নাইনের অনলাইন সংস্করণের খবরে বলা হয়, খাজার বর্ণনায় উঠে এসেছে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর এমসিজিতে শুরু বক্সিং ডে টেস্টের ঘটনা। ৩৮ বছর বয়সী এই ওপেনার লিখেছেন, ‘আজকের সমাজে ঘৃণা সর্বত্র বিদ্যমান। আর আমার মা, সবার থেকে আলাদা হয়ে, গত বছর বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচের সময় এটি অনুভব করেছিলেন।’

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেলের খেলা দেখতে আসার পর ফোজিয়ার সঙ্গে কী ঘটেছিল, সেটি খাজার বর্ণনায় উঠে এসেছে এভাবে—‘দুর্ভাগ্যবশত, দুজন যুবক আমার মায়ের পেছনে হেঁটে গিয়ে তাঁর দুই কানে অশ্লীল কথা চিৎকার করে বলেছিল, শুধু তিনি হিজাব পরেছিলেন বলে। নিজেকে কল্পনা করুন, আপনি এমসিজিতে নিজের মতো হেঁটে যাচ্ছেন এবং হঠাৎ করে দুজন লোক আপনার পেছনে এসে আপনার কানে অপমানজনক কথা চিৎকার করে বলছে।’

উসমান খাজার বাবা তারিক খাজা ও মা ফোজিয়া তারিক
ইনস্টাগ্রাম/উসমান খাজা

এমন পরিস্থিতিতে তাঁর মা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন জানিয়ে খাজা বলেন, ‘তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ভীত, হতবাক এবং হতাশ ছিলেন।’

দুই যুবক কর্তৃক হয়রানির ঘটনাটি একজন নিরাপত্তা প্রহরী দেখে পুলিশকে খবর দেন। খাজা জানান, তাঁর মা কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি ছিলেন না, ‘ছেলেগুলোকে আটক করা হয়েছিল। এরপর পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়। কিন্তু আমার মা আর কোনো পদক্ষেপ নিতে চাননি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, “আমি এই একটি ঘটনার জন্য এই তরুণ ছেলেদের বাকি জীবন নষ্ট করতে চাই না”।’

ঘটনার সময় অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে পাঁচ টেস্টের ‘বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন খাজা। হিজাবের কারণে মায়ের হয়রানির ঘটনাটি সতীর্থদেরও জানাননি বলে লিখেছেন ৩৮ বছর বয়সী এই ওপেনার, ‘আমার মায়ের প্রতি এমন আচরণে আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম, কিন্তু মায়ের (কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার) ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েছিলাম। বিষয়টি আমরা গোপন ও লুকিয়ে রেখেছিলাম, এমনকি আমার সতীর্থদের কাছ থেকেও।’

আরও পড়ুন

একজন মুসলিম নারীর হিজাবের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া নিয়ে খাজা লিখেছেন, ‘আমি মনে করি হিজাব পরিহিত মুসলিম হওয়ার চেয়ে কঠিন আর কিছু নেই। তারা আক্ষরিক অর্থেই তাদের ধর্মকে প্রকাশ করে। একজন মুসলিম পুরুষ হিসেবে, কেউ জানে না আমি কে। কিন্তু একজন মুসলিম নারী যিনি তার চুল ঢেকে রাখেন, তিনি বিশ্বের কাছে প্রকাশ্য; তিনি লুকিয়ে থাকতে পারেন না এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘৃণা ও কুসংস্কারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।’

পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া খাজা চার বছর বয়স থেকে মা–বাবার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা। দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ার সমাজে বিচরণ করা এই ক্রিকেটার অনুভব করেন, এখনো মা–বাবার রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করতে হবে তাঁকে। বিশেষ করে যখন তাঁদের সঙ্গে বাইরে থাকেন, মা–বাবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সূক্ষ্ম পদক্ষেপ নিতে হয় তাঁকে, ‘অনেক সময় আমি ইচ্ছা করে আমার মা–বাবার থেকে কিছুটা পেছনে হাঁটি, যদি কেউ ঘৃণা থেকে কিছু করার চেষ্টা করে, যাতে আমি তাদের দেখতে পারি এবং পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে ও রক্ষা করতে পারি। তবে মানুষের তাঁর দিকে তাকানো এবং বারবার তাকে দেখা খুবই অস্বস্তিকর।’

আরও পড়ুন