তামিম হয়তো পারেনি...ভাইয়ের অবসরে আবেগাপ্লুত নাফিস

তামিম ইকবাল–নাফিস ইকবাল যখন এক ফ্রেমে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তোলা ছবি।শামসুল হক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ইকবাল এখন ‘সাবেক ক্রিকেটার’। শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বার্তায় বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় দলের হয়ে আর মাঠে ফিরছেন না। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে গেছে। তামিমের অবসরে তাঁকে বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও বিদায় জানিয়েছেন তাঁর সতীর্থরা।

তামিমের অবসরে এবার আবেগঘন পোস্ট লিখেছেন নাফিস ইকবাল। দুজনের বড় পরিচয় ছোট ভাই-বড় ভাই। তবে তামিমকে শুধু পরিবারের একজন হিসেবেই নয়, ক্রিকেটাঙ্গনেও বিভিন্ন রূপে দেখেছেন নাফিস। কখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে একই দলের খেলোয়াড় হিসেবে, কখনো প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় হিসেবে আর কখনোবা জাতীয় দলে অধিনায়ক-ম্যানেজার হিসেবে।

মোটের ওপর মাঠ ও মাঠের বাইরের তামিমকে এবং তাঁর ভালো-মন্দ প্রতিটি মুহূর্তকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন নাফিস। তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর নাফিসের বিদায়ী বার্তায় তাই উঠে এল সব প্রসঙ্গই।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এসে অবসরের কথা জানালেও তামিম বাংলাদেশ দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। সে বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের দল থেকে তামিমের বাদ পড়াকে কেন্দ্র করে দেশের ক্রিকেটে তোলপাড় উঠেছিল।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তোলা ছবি, যে দিন বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু করেছিলেন। দুই ভাই তামিম, নাফিস ও হাথুরুসিংহের সঙ্গে ছিলেন খালেদ মাহমুদ।
ছবি: সংগৃহীত

সে ঘটনাকে পুরো পরিবারের জন্য ‘দুঃসহ’ উল্লেখ করে নাফিস লিখেছেন, তামিম হয়তো সেই ধাক্কা থেকে বের হতে পারেনি, ‘২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ওর সঙ্গে যা হয়েছে, এটা ওর জন্য ছিল প্রচণ্ড এক ধাক্কা, যা সহ্য করার মতো নয়। ওই ব্যাপারটায় তখন আমি ভুগেছি, আমাদের পরিবার ভুগেছে। পুরো পরিবারকে দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছু মানুষ এসব জায়গা থেকে বের হতে পারে, কেউ পারে না। তামিম হয়তো পারেনি।’

আরও পড়ুন

মাঠের ক্রিকেটে তামিমকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নাফিস লিখেছেন, ‘মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবেও ওকে পেয়েছি আমি। খুবই কঠিন এবং আপসহীন প্রতিপক্ষ। আমার মনে আছে, পোর্ট সিটি ক্রিকেট লিগে আমার বিপক্ষ দলে ছিল তামিম। আমাকে প্রচণ্ড স্লেজিং করেছিল। আমি খুবই বিব্রত হয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি, ওর কাছ থেকে এ রকম কিছু পাব। সেদিন বুঝেছিলাম, মাঠের লড়াইয়ের ওর কাছে সবকিছুর আগে নিজের দল। আবার একসঙ্গে যতটুকু খেলতে পেরেছি জাতীয় লিগে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে, ঢাকা লিগে ব্রাদার্স, মোহামেডান, বিমানে, দেখেছি ওর চেয়ে ভালো সতীর্থ আর হয় না।’

পরে জাতীয় দলের কাজ করার কথা তুলে ধরে নাফিসের কথা—‘পরে জাতীয় দলে আমি যখন ম্যানেজার, ওকে পেয়েছি অধিনায়ক হিসেবে। আমার কাজের জায়গা থেকে বললে, খুবই আউটস্ট্যান্ডিং ছিল ও। সতীর্থদের তো বটেই, ম্যানেজমেন্টের যেকোনো প্রয়োজনেও ওকে দেখেছি পাশে থাকতে। এমন নয় যে সব সময় সবকিছুতে আমরা একমত ছিলাম। তবে আমি ম্যানেজার হিসেবে ওকে কিছু বোঝাতে চাইলে, বুঝত খুব ভালোভাবে।’

আরও পড়ুন

ক্রিকেটার পরিচয়ের বাইরে পরিবারে তামিম খুবই যত্নশীল উল্লেখ করে নাফিস জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের যত বাচ্চা আছে, সবাই তামিমের ২৮ নম্বর জার্সি পরে খেলে। নাফিসের ভাষায় ‘ও যেমন আমাদের আপনজন, তেমনি আমাদের সুপারস্টার।’

ছোট্ট তামিমের প্রথমবার ব্যাট হাতে নেওয়া, দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার স্মৃতিচারণাও করেছেন নাফিস। ‘বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমকে আর দেখব না, এখনো যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না’ দিয়ে পোস্ট শুরু করা নাফিস শেষ করেছেন এভাবে—‘তামিম, আবারও বলছি, তোমাকে আমরা ভালোবাসি ও তোমাকে নিয়ে সবাই অসম্ভব গর্বিত। কোথাও না কোথাও থেকে আব্বাও তৃপ্তির হাসিতে বলছেন, “ওয়েল ডান”।’

আরও পড়ুন