ব্রিসবেন টেস্ট
স্টার্কের ৬ উইকেট, রুটের সেঞ্চুরি, গ্যাবায় রোমাঞ্চের এক দিন
ব্রিসবেনে দিবারাত্রির দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৩২৫/৯। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন জো রুট। ৬ উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক।
‘প্রপার ডেজ অব টেস্ট ক্রিকেট’—দিনের খেলা শেষে গ্যাবার সীমানা দড়ির পাশে দাঁড়িয়ে টেলিভিশনে বলা মিচেল স্টার্কের কথাটাই ব্রিসবেন টেস্টের সারাংশ।
অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টটার প্রথম দিনে কী ছিল না! ৬ উইকেট নেওয়ার পথে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারকে ছিন্নভিন্ন করে স্টার্ক দেখিয়েছেন, কেন তিনি গোলাপি বলের ক্রিকেটে ভয়ংকরতম বোলার।
সেই দিনকেই আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য বেছে নিলেন জো রুট। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান দিন শেষে অপরাজিত রইলেন ১৩৫ রানে। রান পেয়েছেন ইংলিশ ওপেনার জ্যাক ক্রলিও, করেছেন ৭৬ রান। আর দিনের শেষ সেশনে তো রুটের সঙ্গী হয়ে ৬১ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলীয়দের হতাশ করেছেন জফরা আর্চার, অপরাজিত আছেন ২৬ বলে ৩২। ফল, ৭৪ ওভারের প্রথম দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৯ উইকেটে ৩২৫।
ব্যাট-বলের প্রপার (সত্যিকারের) লড়াই-ই তো হলো ব্রিসবেনে দিবারাত্রির প্রথম টেস্টে।
আর সেই লড়াইয়ের প্রথম ঝাঁজটা ইংল্যান্ডকে উপহার দিয়েছিলেন স্টার্ক নিজেই। ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলে এই বাঁহাতি পেসারের ফুল লেংথ আউটসুইঙ্গারে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন রানের দেখা না পাওয়া বেন ডাকেট।
স্টার্কের করা পরের ওভারের তৃতীয় বলে বলটাকে উইকেটে টেনে এনে বোল্ড ওলি পোপ। ৫ রানে নেই ২ উইকেট, পার্থের ভূতই যেন তখন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল। ডাকেট-পোপ—দুজনই ফিরেছেন ‘ডাক’ উপহার পেয়ে।
সেই ভূতের ওঝা হয়ে আসেন এরপর জ্যাক ক্রলি ও জো রুট। প্রথম সেশনে আর উইকেট পড়তে না দেওয়া দুই ব্যাটসম্যান তৃতীয় উইকেটে গড়লেন ১১৭ রানের জুটি। যে জুটির ৭১ রানই ছিল ক্রলির। ৯৩ বলে ৭৬ রান করে মাইকেল নেসারের বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে ক্রলির বিদায়ে ভাঙে জুটি।
ক্রলির বিদায়ের পর হ্যারি ব্রুককে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়েন রুট। ৩৩ বলে ৩১ রান করা ব্রুককে স্লিপে স্টিভ স্মিথের ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙা স্টার্ক একটি রেকর্ডেরও মালিক হয়ে যান। সেটি টেস্টে বাঁহাতি পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড। পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের ৪১৪ উইকেট পেরিয়ে যাওয়া স্টার্ক পরে আরও ৩টি উইকেট নিয়েছেন। দিন শেষে টেস্টে তাঁর উইকেট এখন ৪১৮টি। এর ৮৭টিই দিবারাত্রি টেস্টে খেলা ১৫ ম্যাচে নিয়েছেন স্টার্ক।
৪ উইকেটে ১৯৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শুরু করা ইংল্যান্ড তৃতীয় সেশনের শুরুতেই হারায় অধিনায়ক বেন স্টোকসকে। রক্ষণাত্মকভাবে খেলে বলটাকে কাভারের দিকে ঠেলেই ১ রান নিতে ছুটতে শুরু করেছিলেন। রুট তাঁকে ফিরিয়ে দিলেও জশ ইংলিসের সরাসরি থ্রো ভেঙে দেয় স্ট্রাইকিং প্রান্তের উইকেট।
অধিনায়কের বিদায়ের ৩ বল পরেই নেই জেমি স্মিথও। স্কট বোল্যান্ড বোল্ড করেছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানকে। উইল জ্যাকসকে নিয়ে রুট আরও ৪০ রান যোগ করার পর স্টার্কের আবার আঘাত। জ্যাকসকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে ২৫১/৭ বানিয়ে দিলেন স্টার্ক। এর আগেই অস্ট্রেলিয়ায় নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসটি পেয়ে যাওয়া রুট তখন ৯৮ রানে দাঁড়িয়ে। ৫ বল পরেই বাউন্ডারি মেরেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম ও ক্যারিয়ারের ৪০তম সেঞ্চুরি পেয়ে যান রুট। ওই শটেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হাজার রানও হয়ে যায় তাঁর।
পরের গল্পটা তো আগেই বলা। ১৮১ বলে সেঞ্চুরি পাওয়া রুট পরের ২১ বলে যোগ করলেন আরও ৩৩ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৪ ওভারে ৩২৫/৯ (রুট ১৩৫*, ক্রলি ৭৬, আর্চার ৩২*, ব্রুক ৩১; স্টার্ক ৬/৭১, নেসার ১/৪৩, বোল্যান্ড ১/৮৭)।
(প্রথম দিন শেষে)