ঢাকায় আরেক ফিলিপস: স্বপ্ন গ্লেনের সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলা
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে তখন। অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে সবাই। সবার মধ্যেও আলাদা একজন। এদিক–ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন, একটু পর শুয়ে পড়লেন ঘাসেই। কিছুক্ষণ পর উঠে মাঠে থাকা একটা বোতল নিয়ে ফেললেন ডাস্টবিনে। লোকটার নাম ডেল ফিলিপস।
বাংলাদেশ সফরে আসা নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের এই ক্রিকেটারের নামটা শুনে আপনার নিশ্চয়ই অন্য এক ফিলিপসের কথা মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। দুজনের একটা সম্পর্ক তো আছেই। নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের তারকা গ্লেন ফিলিপসের ভাই ডেল ফিলিপস।
গ্লেন দুই বছরের বড়। তবে ছোটবেলা থেকে দুজনই একসঙ্গে ক্রিকেট খেলে বেড়ে উঠেছেন। একসঙ্গে খেলেছেন অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপেও, এই বাংলাদেশেই। দুবার আসার এই অভিজ্ঞতাটুকু কেমন জানতে চাইলে বেশ উচ্ছ্বাস নিয়েই ডেল বললেন, ‘বাংলাদেশে এলে খুব ভালো লাগে। এখানকার আতিথেয়তা দারুণ।’
২০১৬ সালের সেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দুই ভাই একসঙ্গে এলেও এবার শুধু ডেল। কারণ, বড় ভাই এরই মধ্যে ‘এ’ দলের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় দলের বড় তারকা হয়ে গেছেন।
দুজনের বেড়ে ওঠার সময়ের গল্প জানতে চাইতেই ডেলের মুখে মুচকি হাসি। বললেন, ‘আমরা ছোটবেলায় যা-ই বলতাম, করতাম, সবকিছুতেই ক্রিকেট থাকত।’
গ্লেনেরই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। এরপর হকি। কারণটাও অদ্ভুত। ফুটবলে গোল হতে অনেক সময় লাগে, হকিতে সেই তুলনায় বেশি গোল হয়।
‘ডিনার টেবিলে বসে আমি আর গ্লেন গল্প করতে করতে অনেকবারই ভেবেছি—যদি দুজন একসঙ্গে বিশ্বকাপ খেলতে পারতাম। এখনো ওই স্বপ্নটা দেখি।’
ডেলের আবার একটা সময় ফুটবলই বেশি পছন্দ ছিল। সময় পেলেই প্রিয় ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে গল্প করতেন বাবার সঙ্গে। পড়াশোনা, ফুটবল হয়ে ক্রিকেটে থিতু হওয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে তাই একটু দেরিই হয়েছে ডেলের। এখন অবশ্য ক্রিকেটই তাঁর ধ্যানজ্ঞান।
ভাই গ্লেন বড় তারকা হয়ে গেছেন। জাতীয় দল, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ান। ডেল সেই তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে। তবে স্বপ্নটা এখনো বড় তাঁর, ‘ডিনার টেবিলে বসে আমি আর গ্লেন গল্প করতে করতে অনেকবারই ভেবেছি—যদি দুজন একসঙ্গে বিশ্বকাপ খেলতে পারতাম। এখনো ওই স্বপ্নটা দেখি।’
বাংলাদেশে এবার এসে একটা ফিফটি ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেননি। বোলিংয়েও উইকেটের দেখা পাননি। তবে একটা জায়গায় পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন—ফিল্ডিং। উইকেটকিপিংয়ের গ্লাভস ছেড়ে বল হাতে তুলে নেওয়া গ্লেন তো এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ ধরেন প্রায় নিয়মিত। ডেলও দারুণ ফিল্ডিং করেন।
ভাই গ্লেনের কাছ থেকে কি ফিল্ডিংয়ের বাড়তি তালিম নেন? উত্তরে ডেল বললেন, ‘তেমন কিছু না। আমাদের বাবা ছিলেন খুবই কড়া। ব্যাটিং–বোলিং তো করতেই হতো, ফিল্ডিংয়ের অনুশীলনটাও ছিল আবশ্যক।’
অনুশীলনে অবশ্য আপত্তি ছিল না দুই ভাইয়েরও। ক্লান্তিহীনভাবে অনুশীলন করে যেতে পারতেন। কখনো কখনো নাকি কোচই দুজনকে অনুশীলন বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে বলতেন। তবু তাঁরা মাঠ ছাড়তে চাইতেন না। সারা দিন ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকার আরও একটা কারণ ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তাঁদের বাবা–মা যখন নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান, তখন গ্লেনের বয়স পাঁচ, ডেলের তিন। জীবিকার তাগিদে দিনভরই কাজে থাকতে হতো বাবা–মাকে। দুই ভাই সময় পার করতেন ক্রিকেট খেলে। নিজেদের প্রকাশ করার বেলায় দুই ভাই অবশ্য বেশ আলাদা। গ্লেন তো মাঠে দারুণ এক চরিত্র, দর্শকদের জন্যও আনন্দের এক প্যাকেজ। ডেল আবার বেশ চুপচাপ। নিভৃতে নিজের কাজ করে চলেন। কে জানে, ভাইয়ের সঙ্গে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার ইচ্ছাপূরণের সাধনায় মগ্ন হয়তো!