মিরাজ নিজে জানেন তো তিনি কী করছেন
একটা দিক থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ ভাগ্যবানই বটে! এর আগে বাংলাদেশের কোনো অধিনায়কের কপালে যা জোটেনি, সেটাই জুটেছে তাঁর কপালে। গতকাল তাঁর অধীনে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলেছে সুপার ওভার।
তবে সমস্যা হলো, সুপার ওভারে দলকে নেওয়ায় আলাদা কোনো অর্জন বা গর্ব নেই। একটু বাড়তি রোমাঞ্চ হয়তো আছে। যদিও জেতা ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে যেতে বাধ্য হলে তাতে হতাশাও ভর করতে পারে।
মিরাজের কেমন লেগেছে তা অজানা হলেও এটা সত্য যে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক এখন আলোচনায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি সিরিজে তাঁর অধিনায়কত্ব ও পারফরম্যান্স নিয়ে কথা হচ্ছে। যেহেতু অধিনায়ক, তাই ফল নিয়ে কাটাছেঁড়ায় তাঁর নামটাই আগে আসে।
বাংলাদেশ কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটা কেন হারল, সে উত্তর খুঁজতে গিয়েও মিরাজের পারফরম্যান্স আলোচনায় আসে। সুপার ওভারে এই ম্যাচ হারের পেছনে মিরাজের দায় কতটুকু, সেটা বুঝতে অবশ্য বেশি কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের প্রথম সুপার ওভারের ম্যাচটা অধিনায়ক মিরাজের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি।
ব্যাটিং ভালো হয়নি
মিরাজ কাল রান করেছেন ৫৮ বলে অপরাজিত ৩২। উইকেট আর মোট রান বিবেচনায় খারাপ বলা যাবে না। তবে ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে মিরাজ প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন। মিরাজ কাল উইকেটে এসেছেন ২৯তম ওভারে। বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ৯৭।
ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই দেখেশুনে খেলেছেন। ইনিংসের প্রথম ৪৮ বলে করেছেন ২১ রান। কিন্তু এখান থেকে ইনিংসে রানের গতি আর বাড়াতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের খেলা শেষ ১০ বলে করেন ১১ রান। অথচ উইকেটে ছিলেন শেষ পর্যন্ত।
মিরাজের খেলা ইনিংসটিও দারুণ হতো, যদি শেষ ১০ বলে তিনি ২০-২২ রান তুলতে পারতেন। এ ধরনের উইকেটে প্রতিটি রান গুরুত্বপূর্ণ। রিশাদ হোসেনের সঙ্গে মিরাজ শেষ দিকে চালিয়ে খেলতে পারলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২১৩ না হয়ে ২২৫-২৩০ রানও হতে পারত।
উইকেটহীন
সারা দুনিয়ায় স্পিনারদের জন্য এমন উইকেট খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এক ম্যাচে কাল সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করেছেন স্পিনাররা (৯২ ওভার)। অথচ এই উইকেটে কাল মিরাজ ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। মিরাজ বাঁহাতিদের বিপক্ষে বোলিং করতে পছন্দ করেন। কাল মিরাজের ১০ ওভারের স্পেলে উইকেটে কেউ না কেউ বাঁহাতি ছিলেনই। এরপরও উইকেট পাননি। নিজের স্পেলের শেষ বলে মিরাজ আকিল হোসেনের কাছে ছক্কা হজম করেন। এই ছক্কার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমীকরণও সহজ হয়ে আসে। ১২ বলে দরকার ছিল ১৪।
হিসাবে ভুল
কাল বাংলাদেশের হয়ে ৫০তম ওভারে বোলিং করেন সাইফ হাসান। শেষ বলে নুরুল ক্যাচটা নিতে পারলে সাইফ হয়তো ১ ওভারে ৫ রানের সমীকরণও মিলিয়ে ফেলতেন। শেষ ওভারে সাইফ বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিলেও তাতে মিরাজের কৃতিত্ব থাকত না। ৫০তম ওভারে সাইফকে বল দিতে হয়েছে মূলত মিরাজের কোন বোলারকে দিয়ে কখন বোলিং করাবেন, সেই হিসাবের ভুলে। ঠিকভাবে বোলারদের ব্যবহার করতে না পারার ফলেই মোস্তাফিজুর রহমানের দুই ওভার বাকি থেকে গেছে। শেষ ওভারে বল দিতে হয়েছে সাইফকে।
সুপার ওভারে ক্যাচ মিস
মূল ম্যাচে কাল দারুণ এক রানআউট করেছিলেন মিরাজ। তবে ভালো ফিল্ডিংটা সুপার ওভার পর্যন্ত টানতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। সুপার ওভারে মোস্তাফিজের চতুর্থ বলে কাভারে শাই হোপের ক্যাচ ছাড়েন মিরাজ। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩। মিরাজ ক্যাচটা নিতে পারলে বাংলাদেশের লক্ষ্য হতো ৪ রানের। এই ক্যাচ মিসে মোস্তাফিজও খেপে গিয়েছিলেন।
সুপার ওভার কি ৫০ ওভারের খেলা
কাল বাংলাদেশ দল সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেনকে। দেখে মনে হয় যেন সুপার ওভারে ব্যাটিং অর্ডার অদলবদল করা নিষেধ! অথচ এই দলে ছক্কা মারার সামর্থ্যে রিশাদ ও তাওহিদ হৃদয়ের চেয়ে ভালো কে আছেন? এই ম্যাচে রিশাদ খেলেছেন ১৪ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের অন্তত ২৫ রানের ইনিংসে এর চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে আর কেউ ব্যাট করতে পারেননি।
কাল সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বোলিং করেছেন আকিল হোসেন। মূল ম্যাচে তাঁর করা শেষ ওভারে রিশাদ মেরেছেন এক চার ও এক ছক্কা। সুপার ওভারে সেই রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না দেখে অবাক হয়েছেন আকিল নিজেও, ‘আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। ম্যাচে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ছিল রিশাদ। তাকে সুপার ওভারে পাঠায়নি! বাউন্ডারির ছোট পাশটায় সে মারতে পারত, দুটি ছক্কা তো ওদিক দিয়েই মেরেছিল।’
সিদ্ধান্ত যে-ই নিক, অধিনায়ক বলে এসব প্রশ্নের উত্তরে কাঠগড়ায় তো মিরাজকেই দাঁড়াতে হবে!