হাফ সেঞ্চুরির পর ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন অধিনায়ক লিটন দাস। চারদিকে তা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো লিটনের চোখেমুখে স্পষ্ট হয়ে উঠল একটা স্বস্তি। সেটা যে হাফ সেঞ্চুরির চেয়ে বেশি ম্যাচটা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার, তা বোঝার বাকি ছিল না মাঠে থাকা কারোরই।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে হেরে যাওয়ার পর সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে আজ দ্বিতীয় ম্যাচে জেতার বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। লিটনের হাফ সেঞ্চুরির পর সেই জয়টা এল ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের ব্যবধানে। শেষ ওভারে জশ লিটলের চতুর্থ বলে মেহেদী হাসানের বাউন্ডারিতে আসে জয়সূচক রান।
তবে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আয়ারল্যান্ড ২৮ বলেই ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়ে যাওয়ার পর একটু দুশ্চিন্তাতেই পড়েছিল বাংলাদেশ। ১৪ বলে ২৯ রান করে ফেলা পল স্টার্লিংকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন পেসার তানজিম হাসান।
আগের দিনের মতো আজও দারুণ শুরু পান আরেক আইরিশ ওপেনার টিম টেক্টর। বড় ভাই হ্যারি টেক্টরের সঙ্গে ২১ বলে ৩১ রানের জুটিতেও তাঁর অবদানই ছিল বেশি। তবে দুটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কার পর ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই ২৫ বলে ৩৮ রান করে তিনি আউট হয়ে যান মেহেদী হাসানের বলে।
আয়ারল্যান্ডের রানেরও লাগাম টানা শুরু হয় টিম টেক্টরের বিদায়ের পর থেকেই। তাতে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদী ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। তবে আয়ারল্যান্ডের রানটাকে ঠিকই লড়াই করার মতো জায়গায় নিয়ে যান লোরকান টাকার। ৩২ বলে তাঁর ৪১ রানে বাংলাদেশের সামনে ১৭১ রানের বেশ বড় লক্ষ্যই দাঁড় করায় আইরিশরা।
সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আগের দিনের মতো পাওয়ারপ্লেতেই উইকেট হারানোর মিছিল শুরু হয়নি। পারভেজ হোসেনই মূলত রান তাড়ার ছন্দটা ঠিক করে দিয়ে যান। ১০ বলে ৭ রান করে তাঁর উদ্বোধনী সঙ্গী তানজিদ হাসান আউট হয়ে যাওয়ার পরও আরেক পাশে ঝোড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন পারভেজ।
তবে পারভেজের ইনিংস খুব একটা লম্বা হয়নি। ২৮ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রান করে স্টিফেন ডেলোনির বলে ক্যাচ তুলে দেন। তাঁর বিদায়ের পর দলের ইনিংসটা টেনে নেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক লিটন নিজেই।
সাইফ হাসানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৩১ বলে ৫২ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান তাঁরা। দুজনের কেউই যদিও শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি। লিটন ৩৭ বলে ৫৭ রান করে এলবিডব্লু হন, সাইফ ১৭ বলে ২২ রান করে তুলে দেন ক্যাচ।
তবে সাইফ–লিটনের জুটিতেই জয়ের ভিত গড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রথম টি–টোয়েন্টিতে হারের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য যোগ হয়েছিল রান তাড়া করতে না পারার দুশ্চিন্তা। গত দুই বছরে ১৫ বার দেড় শতাধিক রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৩ বার। সংখ্যাটা একটু বেড়েছে এবার। তবে সহজ জয়ের পথে হাঁটতে থাকা বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছে হঠাৎই ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা। সিরিজের শেষ ম্যাচে নিশ্চয়ই সেটাও কাটিয়ে উঠতে চাইবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭০/৬ (টাকার ৪১, টেক্টর ৩৮, স্টার্লিং ২৯, ডকরেল ১৮; মেহেদী ৩/২৫, তানজিম ১/১৭, সাইফউদ্দিন ১/৪০)।
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৭৪/৬ (লিটন ৫৭, পারভেজ ৪৩, সাইফ ২২, সাইফউদ্দিন ১৭*; ডেলানি ২/২৮, অ্যাডাইর ২/৩৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: লিটন দাস
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে দুই ম্যাচ শেষে ১–১