একটি ‘ব্যাধি’র কথাই বারবার বলছেন মিরাজ
‘শেখা’ এবং ‘মাঝের ওভারে’ সমস্যা—ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ এ দুটি কথা বারবার বলেছেন।
সিরিজের ফল আপনার জানা। সেন্ট কিটসে কাল রাতে ওয়ার্নার পার্কে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩২১ করেও ৪ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ২৫ বল হাতে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ জয়ে দাপটটাও বোঝা যায়। তাতে ১০ বছর পর ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের কাছে ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ওয়ানডে সিরিজে এ হারের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মিরাজ বলেছেন সমস্যার কথা, ‘আমরা বোলিংয়ে আরও ভালো করতে পারতাম এবং মাঝের ওভারগুলোয় আমরা উইকেট নিতে পারিনি—এটাই ছিল আমাদের জন্য সমস্যা।’
ওয়ানডে সিরিজে চোখ রেখে থাকলে মিরাজের এমন কথা পরিচিত লাগাই স্বাভাবিক। প্রথম ওয়ানডেতে ২৯৪ করেও ৫ উইকেটে হারের পর মিরাজ এমন কথাই বলেছিলেন, ‘নাহিদ, তাসকিন, তানজিমে আমরা খুব ভালো শুরু করেছিলাম। কিন্তু তারপর আমরা মাঝের ওভারগুলোয় ভালো বোলিং করতে পারিনি। আমরা উইকেট পাইনি।’ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিং ভালো হয়নি। ২২৭ রান করে ৭ উইকেটে হারের পর স্বাভাবিকভাবেই কাঠগড়ায় ব্যাটিং–ব্যর্থতাই ওঠার কথা। তবে সেখানেও ছিল মাঝের ওভারগুলোয় সমস্যা, ‘আমরা মাঝের ওভারগুলোয় ভালো ব্যাট করতে পারিনি। কোনো জুটি হয়নি।’
জুটির প্রসঙ্গটা তোলা যাক। কাল তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ইনিংসের মাঝপথে দুটি ভালো জুটি পেয়েছে। চতুর্থ উইকেটে কিসি কার্টি ও শেরফান রাদারফোর্ডের ৫৭ বলে ৫৫, পঞ্চম উইকেটে কার্টি ও অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর ১১৫ বলে ১৩২ রানের জুটিতে জয়ের ভিত গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ সময় জুটি ভাঙতে না পারার খেসারত দিয়েছে বাংলাদেশ, যেটার চূড়ান্ত হয়েছে সপ্তম উইকেটে গুড়াকেশ মোতি ও জাঙ্গুর ৫৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯১ রানের ম্যাচ জেতানো জুটিতে। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নিতে না পারার সমস্যাই আসলে ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে এবং তাতে মিরাজের অবদানও কম নয়!
কাল ১০ ওভারে ৬৭ রানে ছিলেন উইকেটশূন্য। প্রথম ওয়ানডেতে ৯ ওভারে ৬৮ রানে ১টি উইকেট পাওয়ার পর শেষ দুই ম্যাচে আর উইকেট পাননি বাংলাদেশের এই প্রিমিয়ার স্পিন অলরাউন্ডার। এই ওয়ানডেতে সিরিজে বোলারদের মধ্যে মিরাজের বোলিং গড়ই সবচেয়ে বেশি—১৫৩.০০। ৩ ম্যাচে ২৪ ওভার বোলিং করে ১৫৩ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
তৃতীয় ওয়ানডেতে হারের পর মিরাজের কথায় শেখার প্রসঙ্গও থাকল। যেমনটা প্রথম দুটি ওয়ানডেতে হারের পরও ছিল। তবে এবার একটু অন্যভাবে। ৬৩ বলে অপরাজিত ৮৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহর প্রশংসায় মিরাজ বলেছেন, ‘তিনি খুব ভালো করেছেন। সিরিজে তিনটি ফিফটি পেয়েছেন, যেগুলো আমাদের দলের জন্য ভালো মুহূর্ত। আমরা তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি।’ মিরাজের শেখা মানে উন্নতির কথা থাকল মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে করা প্রশংসার পরও। তবে সেটা প্রতিশ্রুতি হিসেবে, ‘এই সিরিজের পর আমাদের সামনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং আমরা জানি, আমাদের উন্নতি করতে হবে। আশার কথা হলো, কীভাবে উন্নতি করতে হবে, সেটা আমরা বুঝি।’
বেশ কিছু নিয়মিত মুখ ছাড়া ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন নেই, নেই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয়ও। মোস্তাফিজুর রহমান পারিবারিক কারণে ছুটিতে। মিরাজের কণ্ঠে তাঁদের অভাব টের পাওয়ার কথাও ঝরল, ‘এই সিরিজে আমরা বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে পাইনি। (চারে ব্যাটিংয়ে) আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে।’
বাংলাদেশের সামনে এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজ। কিংসটাউনে ১৬, ১৮ ও ২০ ডিসেম্বর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে।