ভারতীয় ক্রিকেটারদের বয়স জালিয়াতি ঠেকাতে নতুন নিয়ম
বয়স জালিয়াতির প্রবণতা উপমহাদেশে নতুন নয়। বিশেষ করে বয়সভিত্তিক দলে খেলার জন্য এমন প্রতারণার পথ বেছে নেন অনেকেই। এবার ভারতের বয়সভিত্তিক দলগুলোতে বেশি বয়সীদের খেলা ঠেকাতে বয়স যাচাই নিয়মে পরিবর্তন এনেছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই।
এখন থেকে বয়স যাচাইয়ে দুবার বোন টেস্ট (হাড়ের পরীক্ষা) করানো যাবে। এ ছাড়া একজনের বয়স যাচাই পরীক্ষায় আরেকজন কম বয়সীকে পাঠানোর জালিয়াতি রোধেও নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভারতর জুনিয়র ক্রিকেটে বয়স নিশ্চিত করতে ‘এজ ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম’ (এভিপি) কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের বোন টেস্টের মাধ্যমে বয়স বোঝার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত হাড়ের বয়স নির্ধারণ করা হয় এক্স-রের মাধ্যমে। প্রতিবছর ঘরোয়া মৌসুম শুরুর আগে জুলাই-আগস্টের দিকে এই পরীক্ষা চালানো হয়। ভারতের প্রতিটি রাজ্য সংস্থা যখন বয়স যাচাই কার্যক্রম সম্পন্ন করে, তখন সেখানে বিসিসিআইয়ের একজন প্রতিনিধিও থাকেন।
ক্রিকবাজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বিসিসিআই ও রাজ্য সংস্থাগুলো একটি নতুন প্রতারণার কৌশল শনাক্ত করেছে। হাড়ের বয়স পরীক্ষায় কিছু অভিভাবক মূল খেলোয়াড়ের জায়গায় আরও কম বয়সী একজনকে পাঠিয়ে থাকেন, যাতে বয়স ধরা না পড়ে। এ ধরনের প্রতারণা হয়ে আসছে বুঝতে পেরে তা রোধ করতে খেলোয়াড়দের হালনাগাদ ছবিসংবলিত বৈধ আধার কার্ড (ভারতীয়দের পরিচয়পত্র) দেখানোর ওপর জোর দিয়েছে বিসিসিআই। আধার কার্ডের সঙ্গে ছবি ও তথ্য মিলিয়ে এরপর বয়স যাচাই পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহে বিসিসিআইয়ের সর্বোচ্চ কাউন্সিল বয়স জালিয়াতি রোধে আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে দুই দফায় হাড়ের পরীক্ষা করানো যাবে। বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, পরীক্ষায় হাড়ের বয়স যা পাওয়া যায়, তার সঙ্গে আরও এক বছর যোগ করে একটি ‘গাণিতিক বয়স’ হিসাব করা হয়। বিসিসিআই আয়োজিত টুর্নামেন্টে বয়স যাচাইয়ের অফিশিয়াল বয়সও এটিই ধরা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো খেলোয়াড়ের হাড়ের বয়স যদি ১৪.৮ বছর হয়, তাহলে বিসিসিআই এক বছর যোগ করে ১৫.৮ ধরে। এই হিসাবে খেলোয়াড়টির বয়স ১৬ বছরের নিচে হওয়ায় তিনি ওই বছর অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হন। তবে পরের বছর তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুপযুক্ত বলে ধরা হয়।
তবে নতুন এভিপি নিয়ম অনুযায়ী, যদি খেলোয়াড়ের জন্মসনদ অনুযায়ী বয়স পরের বছরও ১৬ বছরের নিচে থাকে—তাহলে দ্বিতীয়বার হাড়ের বয়স নির্ধারণের সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয় পরীক্ষায় যদি দেখা যায় হাড়ের বয়স ১৬ বছরের নিচে, তাহলে তাকে ওই বয়সভিত্তিক দলে খেলার অনুমতি দেওয়া হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের জন্য এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ, প্রথমে একটি বোন টেস্ট, প্রয়োজনে দ্বিতীয় বোন টেস্ট।
সাধারণভাবে মনে করা হয় হাড়ের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ পদ্ধতি পুরোপুরি নির্ভুল নয়। ক্রিকবাজ লিখেছে, দ্বিতীয় পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে বিসিসিআই পরোক্ষে এটি বলতে চাইছে যে পদ্ধতিটি যত বৈজ্ঞানিকই হোক, এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।